পাশে: রক্ত দিচ্ছেন মিকাইল ও ইসরাত। নিজস্ব চিত্র।
ইসরাত ও মিকাইলের রক্ত নিয়ে মঙ্গলবার অনেকটাই সুস্থ মালদহের ইংরেজবাজারের বাসিন্দা ছেদু রজক।
ছেদুর হিমোগ্লোবিন নেমে গিয়েছিল ৪.৮ গ্রাম/ডেসিলিটারে। যা স্বাভাবিক ভাবে থাকার কথা ১২ থেকে ১৫-র মধ্যে। ইংরেজবাজারের বাসিন্দা ছেদু রজক শনিবার ভর্তি হয়েছিলেন মালদহের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসক জানিয়ে দেন, দরকার রক্তের।
সেই শুরু। টানা চার দিন ধরে হন্যে হয়ে রক্তের খোঁজে ছুটে বেড়িয়েছেন ছেদুর পরিবারের লোকজন। তাঁর রক্তের গ্রুপ ‘ও নেগেটিভ’। বিরল এই রক্তের গ্রুপই কার্যত বিপাকে ফেলে দেয় পরিবারকে।
সোমবার সকালে বহরমপুরে শ্বশুরবাড়িতে রক্তের জন্য ফেসবুকেও খুঁজতে শুরু করেন নাতনি মৌ রজক। সেখানেই পান সাগরদিঘির সঞ্জীব দাসের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নাম ও নম্বর। সোমবার রাতেই মৌ ফোন করেন সঞ্জীবকে। মৌ বলছেন, “রাতেই সঞ্জীববাবু জানান যে করেই হোক ব্যবস্থা হবে। দাদুকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে আসুন সাগরদিঘি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে।”
সঞ্জীব বলছেন, “ও নেগেটিভ’ বিরল। তবু ফোনের পর ফোন যায় বন্ধুদের কাছে। আশা দেন হরহরি গ্রামের আনিসুর। তার এক বন্ধু ইসরাত আলির রক্তের গ্রুপ ‘ও নেগেটিভ’। ইসরাত হাজির হয়ে যান মঙ্গলবার সাত সকালেই। কিন্তু জানা যায়, এক ইউনিটে মিটবে না সমস্যা।”
এ বার সঞ্জীব দ্বারস্থ হন সাগরদিঘি থানার ওসি সুমিত বিশ্বাসের। থানার রেজিস্টার হাতড়ে ফোন যায় সাগরদিঘি থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরের প্রত্যন্ত গ্রাম দস্তুরহাটে সিভিক কর্মী মিকাইল শেখের কাছে। ফোন পেয়ে এক মিনিটও অপেক্ষা করেননি মিকাইল। ওসি সুমিত বলছেন, “মালদহের ছেদু রজক, মিকাইল বা ইসরাত কেউ কারও চেনা নন। কেউ একবারও জিজ্ঞাসাও করেননি কাকে কে রক্ত দিচ্ছেন।” দুই সম্প্রদায়ের এই সদ্ভাব দেখে খুশি সাগরদিঘির মানুষও।
গ্রামেই ছোট্ট একটি দোকান রয়েছে ইসরাতের। ইসরাত বলছেন, “ফোনটা ধরেছিল স্ত্রী হাসিনাই। আমাকে বলতে হয়নি। স্ত্রীই জানিয়েছিল, কাল সকালেই পৌঁছে যাবে হাসপাতালে।” অন্য দিকে মিকাইলের কথায়, “কেউ ফোন করলে মা-ই বলেন, যা রক্ত দিয়ে আয়।” ছেদুবাবুর ছেলে বাবলু রজক বলছেন, “ওঁরা না থাকলে কী যে হত! সারা জীবন মনে রাখব ওঁদের কথা। আমাদের তরফে কৃতজ্ঞতাটা নিজে গিয়ে ওঁদের জানিয়ে আসব।”