উৎপল বেহরা। —ফাইল চিত্র
গারদের হাতল ধরে কখনও তার অনর্গল অস্বাভাবিক-অসংলগ্ন কথাবার্তা। কখনও আবার সহজ স্বাভাবিক হয়ে থানার পুলিশকর্মীদের কাছে চেয়ে নেওয়া এক ভাঁড় লাল চা।
জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত উৎপল বেহেরার এই দু-মুখো ব্যবহারে অবাক হয়ে যাচ্ছেন থানার পুলিশকর্মীরাই। বলা ভাল, তার মেজাজ-মর্জির সঙ্গে তাল মিলিয়েই উৎপলকে জেরা করা হচ্ছে। তার মেজাজ ঠিক রাখার জন্যই ক্রমাগত বদলে দেওয়া হচ্ছে থানার লক-আপ, আজ জিয়াগঞ্জ তো কাল লালবাগ।
দিন কয়েক আগে জিয়াগঞ্জ থানার গারদ ধরে সে ক্রমাগত বলে গিয়েছে, ‘ফাঁসি-ফাঁসি, আমাকে ফাঁসি দিন। এ ভাবে বসিয়ে রাখার কোনও দরকার নেই।’ পরের দিনই স্বাভাবিক গলায় সাগরদিঘি থানার পুলিশকর্মীদের নিজেই ডেকে বলেছে সে— ‘মাজায় বড় ব্যথা। কী করি বলুন তো!’ পুলিশকর্মীরা ব্যস্ত হয়ে তার দাওয়াই বাতলানোর জন্য ছুটে এসেছেন, বলেছেন, ‘‘সারা দিন বসে আছিস তো, লক-আপের মধ্যেই একুটু হাঁটাহাঁটি কর না বাবা!’’
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘উৎপল এখন আমাদের এক পায়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছে, ও নড়লে আমরা নড়ছি, ও বসলে আমরা...।’’
সোমবার তাকে রাখা হয়েছে মুর্শিদাবাদ থানায়। আগামী ৩০ তারিখ পর্যন্ত ওটাই উৎপলের ঠিকানা। সেই থানার এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘এই ক’দিন আমাদের নাওয়া খাওয়া ভুলে উৎপলময় জীবন-যাপন করতে হবে, এ ছাড়া উপায় কী বলুন, হাই প্রোফাইল বন্দি কি না!’’ সে থানায় ইতিমধ্যেই দুই পুলিশকর্মীর ডিউটি বর্তেছে, উৎপলের উপরে নজরদারি।
পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চা বিস্কটু, তার পর রুটি-সব্জি খেয়ে লক-আপের কোনায় গিয়ে বসে পড়ে সে। তার পর শুরু হয় নাগাড়ে বিড়বিড়। সবাই যখন তাকে চাঙ্গা করার জন্য এ কথা ও কথায় তার মন ঘোরানোর চেষ্টা শুরু করেছে। তখন টানটান শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সে।
খানিক পরে উঠেই এক কাপ চা চেয়ে নিয়ে পুলিশকর্মীদের সঙ্গে একেবারে স্বাভাবিক কথপোকথন শুরু করে। উৎপলের এই মন বদলের সঙ্গে পাল্লা দেওয়াই এখন মুখ্য কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশকর্মীদের।
সেই তুলনায় স্বাভাবিক আচরণ করছে এই ঘটনায় অন্য অভিযুক্ত সৌভিক বণিক। সে অবশ্য সারাক্ষণই বলে চলেছে ‘ফাঁসানো হল আমায়। কিছুই বুঝলাম না কী যে করেছি!’’