শোকস্তব্ধ: শ্যামলবাবুর কফিন আঁকড়ে তাঁর স্ত্রী সুপর্ণা দাস। নিজস্ব চিত্র।
সারা কীর্তিপুরই যেন শোকে পাথর হয়ে গিয়েছে। সোমবার সকালে গ্রামে কফিন বন্দি হয়ে ফিরলেন মুর্শিদাবাদের এই গ্রামেরই সন্তান শ্যামল দাস। আসাম রাইফেলসের জওয়ান শ্যামলবাবু মণিপুরে জঙ্গিদের গুলিতে মারা গিয়েছেন। দুপুর দু’টোয় যখন শ্যামলবাবুর দেহ গ্রামে আসে তখন রাস্তার দু’পাশে কাতারে কাতারে মানুষ। বাড়ির সামনের মাঠে তাঁর দেহ রাখা হয়। সেখানে যখন তাঁকে শেষ ফৌজি অভিবাদন জানানো হচ্ছে, কান্নায় ভেঙে পড়েন মানুষ। তাঁর শেষকৃত্য এ দিন সন্ধ্যায় বহরমপুরে হয়েছে।
সোমবার সকাল ১০টা ১০ মিনিট নাগাদ বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে করে পানাগড় বায়ুসেনা ছাউনিতে এসে পৌঁছয় মণিপুরে জঙ্গিহানায় নিহত জওয়ান শ্যামলবাবুর দেহ। সেনা ছাউনির ভিতরেই ব্রহ্মাস্ত্র কোরের আধিকারিকেরা গান স্যালুট দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। সেখান থেকে সকাল ১১টা ১৫ মিনিট নাগাদ তাঁর মরদেহ গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় খড়গ্রামের বাড়িতে।
রবিবার সকাল থেকেই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে গ্রামের বাসিন্দাদের ঘুম উবে গিয়েছিল। শ্যামলবাবুর দেহ গ্রামে পৌঁছনোর আগে গ্রামের এক ঝাঁক যুবক শ্যামলবাবুর ছবি সহ ব্যানার করে গ্রামে টানিয়ে রাখেন। গ্রামের শেষ প্রান্তে বাড়ি ওই জওয়ানের। গ্রামের বাসিন্দারা ওই নিহত জওয়ানকে ফুল ছড়িয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান। রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতরের প্রতিমন্ত্রী আখরুজ্জামান ওই গ্রামে গিয়ে শ্যামলবাবুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ওই পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ তৃণমূলের খলিলুর রহমান ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান। খড়গ্রামের বিধায়ক তৃণমূলের আশিষ মার্জিত বলেন, “আমি রাজ্য সরকারের কাছে ওই পরিবারকে যতটুকু সহযোগিতা করা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করব।”
শ্যামলবাবুর মৃত্যুর পর ঘনঘন জ্ঞান হারাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী সুপর্ণা দাস। তিনি বলেন, “আমাদের এক মাত্র মেয়ে দিয়া, দিয়াকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখতেন। সব শেষ হয়ে গেল।” মেয়ে দিয়া বারবার জিজ্ঞাসা করে, “বাবা কেন বাড়ি আসবে না!” এক মাত্র ছেলের মৃত্যুতে শ্যামলবাবুর বাবা ধীরেন দাস ভেঙে পড়লেও মা মাধবীদেবী যথেষ্ট শক্ত রয়েছেন। মাধবীদেবী বলেন, “আমার ছোট ছেলে আগেই মারা গিয়েছে। শ্যামল আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। ও কাপুরুষের মতো মরেনি, দেশ মা-কে রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে।”