রাস্তায় অবস্থানে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়েরা। হাওড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।
শ্যামবাজারে লাগাতার ধর্না-অবস্থান জারি রেখেছে সিপিএমের ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠন। এ বার তার পাশাপাশি হাওড়ায় অভিযান করে সিপিএমের যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দিলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরে যে ঘুঘুর বাসা তৈরি হয়েছে, তা রাজ্যের মানুষ, হাওড়ার মানুষ ভেঙে দেবে। এর জন্য প্রশাসন তৈরি হোক! মানুষ তৈরি হচ্ছে।’’ একই সঙ্গে তাঁর আরও দাবি, ‘‘আর জি করের মত হাওড়াতেও এক, দুই করে পাঁচ জন যাঁরা উপর থেকে নীচ পর্যন্ত আছেন, তাঁদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে!’’ পাশাপাশি, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী শুক্রবার বলেছেন, পুজোর সময়েও আর জি কর-কাণ্ডে বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি বহাল থাকবে।
সিপিএমের ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠনের ডাকা হাওড়ার স্বাস্থ্য দফতর অভিযানকে ঘিরেএ দিন দুপুর থেকেই উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তাদের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছিল হাওড়ার জেলাশাসক ও হাওড়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরের সামনে। নামানো হয়েছিল র্যাফ, কমব্যাট ফোর্স ও রোবো-কপ। মিছিলের জন্য দুপুরের পর থেকে দু’দিক থেকে ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করা হয় মহাত্মা গান্ধী রোড, বিপ্লবী হরেন ঘোষ সরণী।
ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী-সহ এসএফআই এবং গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির হাওড়া জেলা নেতৃত্বের উপস্থিতিতে মিছিল মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরের দিকে এগোনোর সময়ে পুলিশ ব্যারিকেড করে আটকে দেয়। শান্তির্পূণ মিছিলকে আটকানোর প্রতিবাদে বাম কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের প্রথমে ধস্তাধস্তি বাধে। মীনাক্ষী-সহ আন্দোলনকারীরা রাস্তাতেই বসে পড়েন। পরে মীনাক্ষীর নেতৃত্বে ৬ জনের একটি দল মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে হাওড়া জেলা হাসপাতালে কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি-সহ হাসপাতালে চলা নানা দুর্নীতির প্রতিবাদ জানান। পরে মীনাক্ষী বলেন, ‘‘এর পরে স্বাস্থ্য ভবন অভিযানও হবে। ছেড়ে দেওয়া যাবে না!’’
ডি সি (নর্থ) দফতরের কাছে কংগ্রেসের বিক্ষোভ।
আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এ দিনই রাজ্য জুড়ে প্রতীকী চাক্কা জ্যামের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তের মতোই কলকাতায় ধর্না-মঞ্চের কাছে চাক্কা জ্যাম করা হয়। বিজেপির উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার ডাকে ডোরিনা ক্রসিংয়ের মুখে অবরোধ করে রাস্তায় বিচারের দাবিতে স্লোগান লেখেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। উপস্থিত ছিলেন জেলা সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ প্রমুখ। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু এ দিন দলের সাবেক রাজ্য দফতর মুরলীধর সেন লেনে বলেন, "ধর্মতলায় আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাদের অবস্থান চলবে। পাশাপাশি রাজ্যের সব পঞ্চায়েতে বিজেপির তরফে পথসভা করা হবে। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের বিচারের দাবির সঙ্গেই ব্যর্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ আর কলকাতার নগরপালের অপসারণ ও সিবিআই হেফাজত চাইছি আমরা।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘পুলিশ প্রথম থেকে মিথ্যে বলে ঘটনা ঘোরানোর চেষ্টা করেছে। ডি সি (নর্থ) অভিষেক গুপ্তা, ডি সি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়েরও সিবিআই হেফাজত দাবি করছি। আগামী ১৬ তারিখ পর্যন্ত আমরা প্রতিটি অঞ্চলে রেল স্টেশন, বাস স্টপে পথসভা করব। এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।’’
সেই সঙ্গে পুজোর সময়েও প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করেছেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দুর্গা পুজোতেও বিজেপি রাস্তায় থাকবে। প্রতি পুজো মণ্ডপের বাইরে বিজেপির স্টল থাকবে। সেখানে তৃণমূলের নেতারা আর জি করের ঘটনার পরে যে সব মন্তব্য করেছেন, মহিলাদের সম্পর্কে যে কুরুচিকর আক্রমণ করেছেন, সেগুলো বাজানো হবে!’’ পরে সন্ধ্যায় যাদবপুরে বিজেপি-প্রভাবিত ‘কালচারাল অ্যান্ড লিটারেসি ফোরাম অব বেঙ্গলে’র গণেশ পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘রীতি মেনে, পঞ্জিকা মতে পুজো হবে। কিন্তু কোনও ভাবেই যেন আড়ম্বরের বহিঃপ্রকাশ না হয়। আমরা উৎসব করব সেই দিন, যে দিন আমাদের বোন বিচার পাবে।’’
ঘটনার পরে কলকাতা পুলিশের ডি সি (নর্থ) তাঁদের টাকা দিতে চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন আর জি করে নির্যাতিতার বাবা-মা। তার প্রতিবাদে প্রতীকী পুলিশের পোশাক পরিয়ে ও নকল টাকা ছড়িয়ে ডি সি (নর্থ) দফতরের কাছে এ দিন বিক্ষোভ করেছে কংগ্রেস। রাজাবাজার থেকে মিছিল শুরু করে প্রথম ব্যারিকেড ভেঙে ডি সি (নর্থ) দফতরের দিকে এগিয়ে যান কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা। নেতৃত্বে ছিলেন উত্তর ও মধ্য কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি রানা রায়চৌধুরী (‘পদত্যাগী’) ও সুমন পাল। এ ছাড়াও ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সম্পাদক সুমন রায়চৌধুরী, রাজ্য যুব কংগ্রেসের সহ-সভানেত্রী শাহিনা জাভেদ, সাদাফ সিদ্দিকী, স্বরূপ বসু, অজয় গুপ্ত প্রমুখ। শেষে মূল ব্যারিকেড ভাঙতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। রাস্তায় বসে বিক্ষোভ চলে। বিক্ষোভ থেকেই রানা, সুমন-সহ বহু কংগ্রেস নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ফরওয়ার্ড ব্লকের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির ডাকে এ দিন বারাসতের চাঁপাডালি মোড়ে অবস্থান-সমাবেশে আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এবং বিচারের দাবিতে ৭৬ জন রক্ত দিয়ে লিখেছেন ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। এই অভিনব প্রতিবাদের পাশাপাশিই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টানা নানা কর্মসূচি চলেছে। যোগ দিয়েছিলেন ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়, জেলা সম্পাদক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, শিক্ষাবিদ সুদিন চট্টোপাধ্যায়, অম্বিকেশ মহাপাত্র, সৌরভ পালোধি, প্রাক্তন বিধায়ক জগন্নাথ ভট্টাচার্য-সহ সমাজের নানা ক্ষেত্রের বিশিষ্টেরা।