কলেজের বাইরে দেখা যাচ্ছে এবিভিপির পতাকা। নিজস্ব চিত্র
একটা ভোটই ফারাক গড়ে দেয়। বদলে যায় মন। বদলে যায় পতাকার রংও।
লোকসভা ভোটের আগে কলেজগুলিতে টিএমসিপিই শেষ কথা। ভোটে বিজেপির সাফল্যের পর বদলে গিয়েছে অনেক কিছু।
এবিভিপির দাবি, মোদী দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার আগে পশ্চিম মেদিনীপুরে ৩৮টি কলেজের মধ্যে ১৯টি কলেজে এবিভিপির ইউনিট ছিল। এখন ৩৫টি কলেজে তাদের ইউনিট রয়েছে। সংগঠন তৈরি হয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়েও। লোকসভা ভোটের ফলে বেরোনোর আগে ঝাড়গ্রামের কোনও কলেজেই এবিভিপির ইউনিট ছিল না। এখন জেলার ১০টি কলেজের মধ্যে ১০টি তেই ইউনিট রয়েছে আরএসএসের ছাত্র সংগঠনটির।
হঠাৎ করে কী ভাবে শক্তি সঞ্চয় করছে এই গেরুয়া ছাত্র সংগঠন? দুই জেলার বিভিন্ন কলেজ ক্যাম্পাসে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, মূলত বিক্ষুব্ধ টিএমসিপি কর্মীরাই মদত দিচ্ছেন এবিভিপিকে। অনেকে সরাসরি জার্সি বদলও করে নিয়েছেন।
কেশপুর কলেজের টিএমসিপি সমর্থক বলে পরিচিত এক ছাত্রকে ইদানীং এবিভিপির কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মী বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভাল লাগত। তাই টিএমসিপি করতাম। কিন্তু সিপিএম যে কায়দায় অত্যাচার করত, তৃণমূলও তাই করছে। এসএফআইকে সহ্য করতে পারি না। তাই টিএমসিপি ছেড়ে এবিভিপিতে যাব বলে ঠিক করেছি।’’ গড়বেতা কলেজের এক টিএমসিপি নেতার স্বীকারোক্তি, ‘‘লোকসভা ভোটে গড়বেতা বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি লিড পাওয়ার পরে কলেজে এবিভিপি বেড়েছে। আমাদের সংগঠন ভেঙে অনেকেই চলে যাচ্ছে ওদের দিকে।’’ চন্দ্রকোনা রোড কলেজের এবিভিপি কর্মী নিমাই মাঝিরও দাবি, ‘‘টিএমসিপি ভেঙে অনেকেই এবিভিপিতে আসছেন।’’ লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে পরেই শিলদা কলেজের টিএমসিপি-র প্রায় পুরে ইউনিটটাই জার্সি বদল করে এবিভিপিতে নাম লিখিয়েছিল। তবে টিএমসিপি-র জেলা নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে তারা অবশ্য টিএসিপিতেই ফিরে আসে।
২০১৪ সালে লোকসভা ভোটেও এ রাজ্যে দুটো আসন পেয়েছিল বিজেপি। তবে তার পরেও পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি কলেজে ইউনিট গড়া ছাড়া তাদের উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল না। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পর ছবিটা পাল্টেছে। গেরুয়া ছাত্র সংগঠনটির দাবি, ইতিমধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর, শালবনি, নাড়াজোল, চাঁইপাট, ঘাটাল, সবং, পিংলা, ডেবরা প্রভৃতি কলেজে ইউনিট খুলে ফেলেছে তারা। মেদিনীপুর কমার্স কলেজ, খড়্গপুর কলেজের মতো কলেজে আগে থেকেই তাদের ইউনিট রয়েছে। এখন সেই ইউনিট আরও শক্তপোক্ত হয়েছে। সংগঠন বেড়েছে ঝাড়গ্রামেও। নয়াগ্রাম পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু গর্ভমেন্ট কলেজ, রাজ কলেজ, শিলদা কলেজে ইতিমধ্যেই পোক্ত সংগঠন বানিয়েছে তারা।
এবিভিপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি স্বরূপ মাইতির অবশ্য দাবি, ‘‘আমাদের সংগঠনে যাঁরা আসছেন, তাঁরা আগে কোনও সংগঠন করতেন না। নিরপেক্ষ ছিলেন।’’ টিএমসিপি ভাঙছে না? স্বরূপের দাবি, ‘‘টিএমসিপির সমর্থকেরা আসছেন। তবে ওদের নেতাদের আমরা নিচ্ছি না।’’ দলীয় সংগঠনের ক্ষয় মানতে অবশ্য রাজি নয় টিএমসিপি। তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের ঝাড়গ্রাম জেলা কার্যকরী সভাপতি আর্য ঘোষের দাবি, ‘‘এবিভিপি-র কোনও জনসমর্থন নেই। ওরা বহিরাগতদের নিয়ে কলেজগুলিতে সন্ত্রাস করছে। নির্বাচন হলে জেলার সব কলেজেই আমরা জিতব।’’ টিএমসিপির জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘আমরা এবিভিপিকে নিয়ে এতটুকুও চিন্তিত নই। ছাত্রছাত্রীরা টিএমসিপির সঙ্গেই আছেন। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তাঁরা মেনে নেবেন না।’’
শুরু হয়েছে ভাঙাগড়া। আগে যাঁরা তেরঙা পতাকা নিয়ে শিক্ষার প্রগতি, সঙ্ঘবদ্ধ জীবন, দেশপ্রেমের (টিএমসিপির স্লোগান) কথা বলতেন, তাঁদের হাতে এখন গেরুয়া পতাকা। আর তাতে লেখা জ্ঞান, চরিত্র, একতা (এবিভিপির স্লোগান)।
একটা ভোটই ফারাক গড়ে দেয়।
তথ্য সহায়তা: বরুণ দে, কিংশুক গুপ্ত, অভিজিৎ চক্রবর্তী, রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য, দেবমাল্য বাগচী