বিরাট কোহলি। —ফাইল চিত্র।
সিডনির ২২ গজে জোয়ার-ভাটার খেলা। ভারতের অনুকূলে জোয়ার এলে, অস্ট্রেলিয়া আটকে যাচ্ছে ভাটার টানে। আবার কখনও বিপরীত পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তা নিশ্চিত ফলাফলের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির পঞ্চম তথা শেষ টেস্টকে।
প্রথম ইনিংসে ১৮৫ রান করেছিল ভারত। জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজ, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, নীতীশ কুমার রেড্ডিরা পাল্টা অস্ট্রেলিয়াকে ১৮১ রানে অলআউট করে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিল ভারতকে। বিরাট কোহলিদের ব্যর্থতায় দ্বিতীয় দিনের শেষে আবার সুবিধাজনক জায়গায় প্যাট কামিন্সেরা। দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসের রান ৬ উইকেটে ১৪১। অস্ট্রেলিয়ার থেকে ১৪৫ রানে এগিয়ে সফরকারীরা। আবার সেই লড়তে হবে বোলারদের। বুমরাহ কি পারবেন বল করতে? ম্যাচ, সিরিজ় এবং মান বাঁচানোর আশা তাই কম-ই। দিনের শেষে ২২ গজে অপরাজিত আছেন রবীন্দ্র জাডেজা (৮) এবং ওয়াশিংটন সুন্দর (৬)।
টেস্ট ম্যাচ খেলার ধৈর্য্য দেখা যাচ্ছে না ভারতীয় ব্যাটারদের খেলায়। পরিস্থিতি বুঝে, বল বুঝে পিচে পড়ে থেকে খেলার মানসিকতা নেই গৌতম গম্ভীরের ছাত্রদের। কেউ বেশি রক্ষণাত্মক হতে গিয়ে উইকেট দিচ্ছেন। কেউ একই ভুল বার বার করছেন। কেউ অযথা আগ্রাসী শট খেলে উইকেট বিসর্জন দিচ্ছেন। শনিবার অস্ট্রেলিয়াকে কম রানে বেঁধে রেখে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন বোলারেরা। সুযোগ কাজে লাগাতে আবার ব্যর্থ ব্যাটারেরা।
টানা ব্যর্থতার অনুশোচনায় সিডনি টেস্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন রোহিত শর্মা। ভারতের বাকি ব্যাটারেরা একই কাজ করলে ১১ জনের দল তৈরি করতে পারতেন না গম্ভীর। আপাতত রোহিতের ব্যক্তিগত বোধদয় বাঁচিয়ে দিয়েছে ভারতীয় দলের কোচকে। তাতে তাঁর মান অবশ্য বাঁচছে না। ঘরের মাঠে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে ০-৩ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ় হারার পর অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১-৩ ব্যবধানে হারতে হলে জবাবদিহি করতে হতে পারে গম্ভীরকেও। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কর্তারা তাঁর সব আবদারই মেনে নিয়েছিলেন। তবু কোচ গম্ভীর তাঁদের আশা পূরণে ব্যর্থ।
সিডনির টেস্টের দ্বিতীয় দিন ভারতীয় বোলিং আক্রমণের সামনে অসহায় দেখিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংকে। অভিষেককারী বিউ ওয়েবস্টার ছাড়া কাউকে আত্মবিশ্বাসী দেখায়নি। মেলবোর্নে অভিষেক হওয়া স্যাম কনস্টাস (২৩) যত কথা বলে ফেলেছেন, তত রান করতে পারেননি এখনও। ধারাবাহিকতার অভাবে ভুগছেন স্টিভ স্মিথ (৩৩), মার্নাস লাবুশেন (২), ট্রেভিস হেডেরা (৪)। অ্যাসেক্স ক্যারে (২১), কামিন্সেরা (১০) অস্ট্রেলিয়াকে লড়াইয়ে রাখার চেষ্টা করলেন মাত্র। তবু দিনের শেষে ভারতীয় দল মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়তে পারল কোথায়!মধ্যাহ্নভোজের পর এক ওভার বল করেই চোটের জন্য মাঠ ছাড়তে হয় বুমরাহকে। স্ক্যান করাতে হাসপাতালেও নিয়ে যেতে হয় তাঁকে। আর বল করতে পারেননি। মাঠ ছাড়ার আগে ৩৩ রানে ২ উইকেট নিয়েছিলেন ভারতীয় দলের অধিনায়ক। তাঁর অভাব বুঝতে দিলেন না সিরাজেরা। হায়দরাবাদের জোরে বোলার ৫১ রানে ৩ উইকেট নিলেন। কাঁধে কাঁধ দিয়ে লড়লেন প্রসিদ্ধ (৪২ রানে ৩ উইকেট) এবং নীতীশও (৩২ রানে ২ উইকেট)। অস্ট্রেলিয়াকে বাড়তে দিলেন না বোলারেরা। সেই দলকে ডোবালেন ব্যাটারেরা।
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে যশস্বী জয়সওয়ালকে দেখে মনে হচ্ছিল, কিছু একটা করে দেখাবেন। পারলেন না। ভাল শুরু করেও আউট হলেন ২২ রান করে। তাঁর আগেই সাজঘরে ফিরে যান লোকেশ রাহুল (১৩)। শুভমন গিলও (১৩) ভরসা দিতে পারছেন না। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কোহলির (৬) রোগ সারছে না। রোহিত নিজে সরে দাঁড়িয়েছেন। উদাহরণ তৈরি করেছেন। তবু গম্ভীর যে কেন অভিমন্যু ঈশ্বরণ, সরফরাজ খানদের গোটা সিরিজ়ে দেখতে পেলেন না! বার বার অবিবেচকের মতো আউট হয়ে সমালোচনার মুখে পড়া ঋষভ পন্থ আবার বেহিসেবি খেলে আউট হলেন। তবু তাঁর ৩৩ বলে ৬১ রানের ঝোড়ো ইনিংস প্রায় ভেন্টিলেশনে চলে যাওয়া ভারতীয় ব্যাটিংয়ের জন্য টাটকা অক্সিজেন। টি-টোয়েন্টির মেজাজে খেলে ৬টি চার এবং ৪টি ছক্কা মারলেন পন্থ। মেলবোর্নে শতরানের পর নীতীশের (৪) ব্যাটিংয়েও যেন দাদাদের ছোঁয়া। ফল শনিবার মাঝামাঝি সময় ভারতীয় শিবিরের অনুকূলে থাকা জোয়ার দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়া অনুকূলে।
যে স্কট বোল্যান্ডকে তেমন হিসাবের মধ্যে রাখতে চায়নি ভারতীয় শিবির, তিনিই আবার ভাঙলেন। ৪২ রানে ৪ উইকেট নিলেন। কামিন্স, মিচেল স্টার্কেরা যথারীতি চাপে রাখলেন ভারতীয় ব্যাটারদের। এমনকি ওয়েবস্টারও আউট করে দিলেন শুভমনকে। সিডনি টেস্টের বাকি তিন দিন। ম্যাচ এবং সিরিজ় বাঁচানোর লড়াই ভারতের।