কাঁথি পুরসভায় থাকছেন না অধিকারী পরিবারের কোনও প্রতিনিধি। —ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ সাড়ে তিন দশকেরও বেশি সময় পর অধিকারী পরিবারের কোনও প্রতিনিধিই থাকছেন না পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি পুরসভায়। কাঁথি পুরসভার যে প্রার্থিতালিকা এ বার বিজেপি ঘোষণা করেছে তাতে নেই অধিকারী পরিবারের কোনও সদস্যের নাম। তৃণমূলে থাকাকালীন ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০ বছর কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব সামলেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌম্যেন্দু। সম্প্রতি তাঁকে কাঁথির সাংগঠনিক পদেও এনেছে বিজেপি। ঘটনাচক্রে এর পরই সৌম্যেন্দু পুরভোটে প্রার্থী হতে পারেন এমন জল্পনা তৈরি হয়। কিন্তু বিজেপি-র প্রার্থিতালিকা সামনে আসার পর দেখা গেল উল্টো ছবি। অধিকারী পরিবারের কর্তা তথা কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী এবং শুভেন্দুর ভাই তথা তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অবশ্য খাতায়কলমে তৃণমূলেই রয়েছেন।
জল্পনা তৈরি হয়েছিল, কাঁথি পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিজেপি-র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন অধিকারী পরিবারের ছোট ছেলে সৌম্যেন্দু। কিন্তু বাস্তবে তা হল না। বিজেপি-র কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুদাম পণ্ডিতের কথায়, “বিজেপির নির্বাচনী কমিটি প্রার্থী বাছাই করেছে। তালিকায় তাঁদেরই জায়গা দেওয়া হয়েছে যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে মাটি কামড়ে লড়াই চালাচ্ছেন। অধিকাংশ ওয়ার্ডের বাসিন্দাদেরই প্রার্থী হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’’ অধিকারী পরিবারের কেউ এই তালিকায় জায়গা পেলেন না কেন? সুদামের উত্তর, “সৌম্যেন্দু অধিকারী এই মুহুর্তে কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। তাঁর কাঁধে অনেক দায়িত্ব। গোটা পুরসভার ২১ জন প্রার্থীকে জেতানোর লক্ষ্যে ঝাঁপাচ্ছেন সৌম্যেন্দু।’’ সুদামের কথায়, ‘‘কাঁথি পুরসভা নির্বাচনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি জয় ছিনিয়ে নিলে তার কৃতিত্ব শুভেন্দু, সৌম্যেন্দু-সহ সব নেতা-কর্মীদের উপরেই বর্তাবে। তাই ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহৎ লড়াইয়ের জন্য কাঁথিতে কোমর বাঁধছে বিজেপি।’’ সৌম্যেন্দুকে প্রার্থী না করার পিছনে শুভেন্দুর ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে বিজেপি-র অন্দরের খবর।
কেন সৌম্যেন্দুকে প্রার্থী করা হল না তা নিয়ে বিজেপি শিবির থেকে মূলত তিনটি মতামত উঠে আসছে। প্রথমত, তৃণমূলের বিরুদ্ধে পরিবারতন্ত্র কায়েম করার অভিযোগ তুলছেন শুভেন্দু। ঠিক এই সময়ে সৌম্যেন্দুকে পুরভোটে প্রার্থী করলে উল্টো বার্তা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন সৌম্যেন্দুর বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। তৃতীয়ত সৌম্যেন্দু সদ্য বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। প্রার্থিতালিকা প্রকাশের পর বিজেপি শিবিরেও বিক্ষোভের আবহ। এই পরিস্থিতিতে সৌম্যেন্দু প্রার্থী হলে ভুল বার্তা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
১৯৬৯ সাল থেকেই কাঁথি পুরসভার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিল অধিকারী পরিবার। ১৯৬৯ সালে কমিশনার হিসাবে কাঁথি পুরসভায় পা রাখেন শিশির। ওই সময় থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত পুরসভার চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে ১৯৮৬-২০০৯ পর্যন্ত সময় ফের পুরসভার চেয়ারম্যান হন তিনি। এর পর বাবার ছেড়ে যাওয়া আসনে বসেন ছোটছেলে সৌম্যেন্দু। পুরসভার প্রশাসকও ছিলেন সৌম্যেন্দু।