পিংলার সেই স্কুল। নিজস্ব চিত্র।
উচ্চ মাধ্যমিকে ঝাড়গ্রাম জেলায় সার্বিক উত্তীর্ণের হার ৯৩.৭৩ শতাংশ। ছাত্রদের উত্তীর্ণের হার ৯২.৮৪ শতাংশ ও ছাত্রীদের উত্তীর্ণের হার ৯৪.৬০ শতাংশ। অথচ মেধাতালিকায় প্রথম দশে থাকা ২৭২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জেলার একজনও নেই। এর ফলে কিছুটা হতাশ শিক্ষক ও পড়ুয়া মহল।
সাঁওতালি বিভাগেও এ বার রাজ্যে প্রথম স্থান পায়নি ঝাড়গ্রাম। তবে ভাল ফল করেছেন রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরের (ঝাড়গ্রাম একলব্য আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয়) আদিবাসী পড়ুয়ারা। ওই স্কুলের ৫৬ জন পরীক্ষার্থীর সকলেই আশি শতাংশ বা তারও বেশি নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
জেলায় সম্ভাব্য প্রথম ঝাড়গ্রাম কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের অর্কদীপ দাস। প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৮। শতবর্ষ ছুঁতে চলা এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘জেলায় সার্বিকভাবে ফল ভাল হয়েছে। আমাদের স্কুলের পরীক্ষার্থীরাও ভাল ফল করেছে। হোম ভেনুতে পরীক্ষা হলেও পরীক্ষার্থীদের বাড়তি কোনও সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়নি। সেটা উচিতও নয়।’’ তবে বিশ্বজিৎ মানছেন, কোনও কোনও স্কুলে পরীক্ষার্থীদের সহযোগিতা করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। তার ভিত্তিতে হয়তো একাংশ পরীক্ষার্থীর নম্বর বেড়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের জেলা পরামর্শদাতা কমিটির সদস্য তপনকুমার পাত্র মানছেন, ‘‘হোম ভেনুতে পরীক্ষা হওয়ায় একাংশ স্কুলে পরীক্ষার্থীরা সুযোগ সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু এজন্য অনেকক্ষেত্রে মেধাবী পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হয়েছে।’’
একাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকার মতে, করোনা আবহে পরীক্ষা গ্রহণ থেকে মূল্যায়ন সব ক্ষেত্রেই কিছুটা শিথিলতা ছিল। তার প্রভাব পড়েছে ফলে। উচ্চ মাধ্যমিকের উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেছিলেন গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের এক শিক্ষক। তিনি বলছেন, ‘‘পর পর উত্তরপত্রগুলিতে একই ধাঁচের উত্তর লেখা হয়েছিল। দাগ নম্বর থেকে প্রতিটি লাইন ও লেখার বয়ানও এক ছিল। এর থেকে অনুমান, একাংশ স্কুলে পরীক্ষা চলাকালীন পদ্ধতি মেনে নজরদারি করা হয়নি। অথবা পরীক্ষার্থীরা বিশেষ সুযোগ পেয়ে উত্তর লিখেছে।’’
জেলার এক গৃহশিক্ষক জুড়ছেন, ‘‘সাধারণ মানের পড়ুয়ারাও এ বার আশি শতাংশ এমনকি নব্বই শতাংশ পর্যন্ত নম্বর পেয়েছে।’’ নয়াগ্রাম ব্লকের চাঁদাবিলা এসসি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষক প্রসেনজিৎ প্রধানের আবার বক্তব্য, ‘‘এ বার উল্লোখযোগ্য ফল করা পরীক্ষার্থীরা যে নম্বর পেয়েছে, অন্য ভেনুতে পরীক্ষা দিলে তাঁরা সেই নম্বর পেত কি না সেটা নিয়ে পরীক্ষার্থীদেরই আত্মসমালোচনা করা উচিত।’’
একাংশ স্কুলে এই বাড়তি সুবিধা ক্ষোভ তৈরি করেছে পরীক্ষার্থীদের মধ্যেও। ঝাড়গ্রাম ব্লকের ঢোলকাট পুকুরিয়া প্রণবানন্দ বিদ্যামন্দির থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ শঙ্করনারায়ণ গুপ্তর কথায়, ‘‘আশি শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছি। মূল্যায়ন নিয়ে অভিযোগ নেই। তবে পরীক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তো রয়েছেই। কিছু স্কুলে পরীক্ষার সময়ে যে ভাবে ঢালাও সাহায্য করা হয়েছে, তেমন সুযোগ পেলে আমাদেরও নম্বর আরও বাড়ত।’’
ঝাড়গ্রাম রানি বিনোদমঞ্জরী রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ প্রেরণা চন্দ্রের কথায়, ‘‘হোম ভেনুতে আমরা বাড়তি কোনও সুযোগ পাইনি। অথচ কিছু স্কুলে তা দেওয়া হয়েছে। সেটা জেনে খারাপও লাগছে।’’ বৈপরীত্য যে ছিল তা স্বীকার করছেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি জয়দীপ হোতাও। তিনি বলেন, ‘‘হোম ভেনুতে কিছু স্কুলের পরীক্ষার্থীরা সুযোগ সুবিধা পেয়েছে। আবার কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ কড়া ভাবে পরীক্ষা নিয়েছেন।’’