মাটি ভরাটের কাজ পরিদর্শন চলছে।
ভর দুপুরে কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে কাজের মান পরীক্ষা করছেন কেন্দ্রীয় আধিকারিকেরা। সেই সময়ই খানিকটা দূরে তাঁদের উপস্থিতিতে সরকারি প্রকল্পের শেষ হওয়া কাজের সমস্ত তথ্য উল্লেখিত সাইন বোর্ড লাগানোর চেষ্টা করছেন পঞ্চায়েতের কর্মীরা।
একশো দিনের কাজের প্রকল্পের গতি ও মান খতি দেখতে আসা কেন্দ্রীয় আধিকারকদের এভাবেই বৃহস্পতিবার সন্তুষ্ট করতে সচেষ্ট হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সেই চেষ্টায় আধিকারিকদের কতটা তুষ্ট করা গিয়েছে, তা হয়তো জানা যাবে পরিদর্শন শেষে তাঁদের জমা দেওয়া রিপোর্ট কার্ডে। কিন্তু এ দিনের পরিদর্শনের সময় বিভিন্ন বিষয়ে আধিকারিকদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে।
কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম বদল ও কাজের হিসাব না দেওয়ার অভিযোগে কেন্দ্রীয় সরকার এ রাজ্যে একশো দিনের কাজ প্রকল্পের টাকা বেশ কয়েক মাস ধরে আটেকে রাখেছে বলে দাবি। পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ কী অবস্থায় রয়েছে, তা সরেজমিনে দেখতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতর সম্প্রতি প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মতো কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের তিন জনের একটি প্রতিনিধি দল বুধবার রাতে এগরায় আসে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় দলের সদস্যেরা পটাশপুর-২ ব্লকের মথুরা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে যান। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক শ্বেতা আগরওয়াল এবং বিডিও শঙ্কু বিশ্বাস।
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা ওই পঞ্চায়েত অফিস থেকে প্রথমে একশো দিনের প্রকল্পের রেজিস্টার নেন এবং সোজা যান বাল্যগোবিন্দপুর গ্রামের হাড়িপুকুর মাঠ ভরাটের কাজ পরিদর্শনে। প্রতিনিধিরা কোদাল মাটি মাটি খুঁড়িয়ে কাজের মান যাচাই করেন। তবে মাটি খোঁড়ানো হলেও কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তাঁরা। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০২০-২১ আর্থিক বর্ষে হাড়িপুকুর মাঠ ভরাটের প্রকল্পের জন্য সাড়ে তিন লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। সেই টাকায় আড়াই একর মাঠ ভরাট এক বছর আগেই শেষ হয়েছে। কিন্তু এত দিন আগে কাজ শেষ হলেও গত ২ অগস্ট পর্যন্ত সেখানে কোনও ডিসপ্লে বোর্ড লাগানো হয়নি। রাতারাতি বুধবার সেখানে ডিসপ্লে বোর্ড বসানো হলেও তাতে সঠিক কোনও তথ্য ছিল না। ফলে কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা এ দিন যখন মাঠ পরিদর্শন করছেন, তখনও মাঠের অন্য পাশে গ্রাম পঞ্চায়েতে কর্মীরা ডিসপ্লে বোর্ড ঠিক কারার কাজ করছিলেন। তা দেখতে পেয়ে বোর্ড লেখার বিষয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা কর্মীর বেশ কয়েকটি নির্দেশ দেন। তৃণমূল পরিচালিত মথুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অমিত মণ্ডল অবশ্য বলেছেন, ‘‘কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল সব ঠিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন।’’
হাড়িপুকুর থেকে বেরিয়ে বাল্যগোবিন্দপুর গার্লস স্কুলের মাঠ ভরাটের কাজ পরিদর্শনে যান আধিকারিকেরা। সেখানেও তাঁরা দেখেন কাজের ডিসপ্লে বোর্ড বসানো হয়নি। কোথাও থেকে মাটি কেটে মাঠ ভরাট করা হয়েছে, প্রতিনিধিরা তা জানতে চান। পরে ক্ষেত্রপাল গ্রামে এক পিতৃ-মাতৃহীন এক কিশোরের আসাব যোজনায় তৈরি হওয়া বাড়ি পরিদর্শন করেন কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা। ওই কিশোরের স্থানীয় অভিভাবক হিসাবে বিডিও নিজেই আবাস যোজনা বাড়ি তৈরির তদারকি করেছিলেন। কেন্দ্রীয়় প্রতিনিধিরা ওই বাড়ি দেখে কিশোরের সামনেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিকালে সাউৎখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতে এলাকা পরিদর্শন করে সন্ধ্যায় পটাশপুর ছাড়েনকেন্দ্রের প্রতিনিধিরা।
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পরিদর্শনে আসবে বলে গত কয়েক দিনে জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েতে রাত জেগে একশো দিনের কাজ প্রকল্পের নথি তৈরি করা হচ্ছে বলে দাবি। তবে জেলায় প্রতিনিধিরা পৌঁছনোর পরেও বুধবার রাতে শ্রীরামপুর এবং এগরার পানিপারুল গ্রাম পঞ্চায়েতের দফতরে কাজ হতে দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী সেই অফিসের ভিডিয়ো টুইট করে অভিযোগ করেছেন, এভাবেই নীতিহীন কার্যকলাপ করা হচ্ছে। খেজুরি-১ ব্লকের কলাগেছিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে গভীর রাতে ভিতরে তালা লাগিয়ে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে অফিসের বাইরে বিক্ষোভ দেখান এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। খেজুরি-১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা জেলা পরিষদ সদস্য হিমাংশু দাসের বলেন, ‘‘খেজুরির ১১টি পঞ্চায়েতে রাতে এই সব কাজ চলছে। সারা বছর চুরি করে সব ফাঁক করে দিয়েছে। এখন ওপরওয়ালাদের নির্দেশে খাতাপত্র ঠিকঠাকের জন্য রাতে কাজ করছে।’’ বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক বিজেপির জেলা সভাপতি সুদাম পণ্ডিত বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজেও বিপুল দুর্নীতি হয়েছে। তাই রাতে গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস খুলে তথ্য লোপাট করা হচ্ছে।’’