WB Panchayat Election 2023

তিন দিনের টানাপড়েন! নন্দীগ্রামের ভোটে নেই মমতার প্রাক্তন নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ান

টানা ৩ দিন ধরে দড়ি টানাটানির পর শেষমেশ খালি হাতেই ফিরতে হল গত বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ানকে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৩ ২৩:৩৮
Share:

শেখ সুফিয়ান। —ফাইল চিত্র।

পঞ্চায়েত ভোটে জেলা পরিষদের একটি আসনে তৃণমূলের মনোনয়ন ঘিরে ‘নজিরবিহীন’ নাটকীয়তার সাক্ষী থাকল পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম। টানা ৩ দিন ধরে দড়ি টানাটানির পর শেষমেশ খালি হাতেই ফিরতে হল গত বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ানকে। অন্য দিকে, দীর্ঘ টানাপড়েনের পর একেবারে শেষলগ্নে গিয়ে মনোনয়ন জমা দিলেন শামসুল ইসলাম।

Advertisement

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচির প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় সুফিয়ান কম ভোট পাওয়া সত্ত্বেও কেন তাঁকে জেলা পরিষদের ওই আসনে প্রার্থী করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নন্দীগ্রামের দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। এই ঘটনার খবর পেয়েই সেখানে যান তৃণমূল মুখপাত্র তথা পূর্ব মেদিনীপুরে দলের বিশেষ দায়িত্বে থাকা কুণাল ঘোষ। তৃণমূল সূত্রে খবর, ‘বিক্ষুব্ধ’দের ক্ষোভ প্রশমনে তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কুণাল। তার পরেই সুফিয়ানকে সরিয়ে শামসুলকে টিকিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পর বৃহস্পতিবার মনোনয়ন পর্বের শেষবেলায় দলবল নিয়ে হলদিয়ায় মনোনয়ন জমা দেন শামসুল। তিনি বলেন, ‘‘আমি দলের সৈনিক। আমার আস্থা ছিল দলীয় নেতৃত্বের উপর। তাঁরা একটা সময় আমার নাম বাদ দিয়েছিলেন। তবে পরে তাঁরা নন্দীগ্রামে এসে সাধারণ মানুষের মনের কথা শুনেছেন এবং আমাকে টিকিট দিয়েছেন। আমি জয়ের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত।’’

নন্দীগ্রামে দলের প্রার্থিতালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের অন্দরে টানাপড়েন প্রকাশ্যে আসতে থাকে। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের সব ক’টি আসনে সুফিয়ান-গোষ্ঠীকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। শুধু তা-ই নয়, বাদ যান জেলা পরিষদের বিদায়ী বোর্ডের সহ-সভাধিপতি সুফিয়ান নিজেও। এর পরেই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সুফিয়ান গোষ্ঠী। দাউদপুর অঞ্চলের আব্বাস বেগ, কেন্দেমারি অঞ্চলের বাবুল আখতারের মতো নেতারা হুঁশিয়ারি দেন, নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়ে তাঁরা সমস্ত অঞ্চলে তৃণমূলকে পরাস্ত করবেন। নন্দীগ্রামের দুই ব্লকের ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের সমস্ত আসনে নির্দলে প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণাও করেন তাঁরা। এর পরেই সুফিয়ানের ক্ষোভে প্রলেপ লাগাতে ময়দানে নামেন কুণাল। মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ নন্দীগ্রামে এসে সুফিয়ান ও তাঁর ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন ব্লক সভাপতি এবং বর্তমান ব্লক নেতৃত্বদের নিয়ে ভোটে একজোট হয়ে লড়াইয়ের বার্তা দেন। সুফিয়ানের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথাও বলেন আলাদা করে।

Advertisement

বুধবার সকালে তৃণমূলের প্রার্থীরা যখন দলে দলে মনোনয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, সেই সময় আচমকাই খবর আসে, তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব জেলা পরিষদের আসনে শামসুলের পরিবর্তে সুফিয়ানকে টিকিট দিচ্ছে। এই খবর চাউর হতেই পাল্টা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে নন্দীগ্রাম জুড়ে। তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় নন্দীগ্রাম থানার অদূরে ১ ব্লক পার্টি অফিসে। বিক্ষোভকারী তৃণমূল নেতা মুজিবুর রহমান প্রকাশ্যে বলেন, “সুফিয়ান মাটিতে নেমে রাজনীতি করা ছেড়ে দিয়েছেন। তা ছাড়া নবজোয়ারের ভোটাভুটিতে সুফিয়ান মাত্র ৭টি এবং শামসুল ৭১টি ভোট পেয়েছিল। তাই জনপ্রিয়তার নিরিখে শামসুলকে প্রার্থী না করলে এখানকার সমস্ত পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতৃত্ব পদত্যাগ করবেন।” পরিস্থিতি সামাল দিতে আবার ময়দানে নামতে হয় কুণালকে। বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে বৈঠকের পরেই তৃণমূল নেতৃত্ব শামসুলকেই প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেন।

তাঁর প্রেক্ষিতে সুফিয়ান বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার আমাকে কুণাল ঘোষ জানালেন, দলের নির্দেশে শামসুলকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে। আমি জানিয়েছি, এতে আমার কোনও আপত্তি নেই। এর আগে মঙ্গলবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে জেলা পরিষদের দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এখন শামসুলকে দাঁড়াতে বলেছে দল। আমি কোনও ভাবেই দলের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করব না।’’ তবে গোটা ঘটনায় খানিক মর্মাহত সুফিয়ান। তাঁর কথায়, ‘‘গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমি জেলা পরিষদে সর্বাধিক ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলাম। তবে দল যখন আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা পালন করেছি। ২০০১ সালে তৃণমূলে যোগ দিয়ে ২০০৬ সালে সিপিআই প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিধানসভা ভোটে লড়ে সামান্য ভোটে হেরেছিলাম। পরে জেলা পরিষদের আসনে জিতে সহ-সভাধিপতির দায়িত্ব সামলেছি। তবে এবার আমার নাম ঘোষণা করায় যে ভাবে কিছু কর্মী উচ্ছৃঙ্খলতা দেখাল, তা নজিরবিহীন।’’

এ বিষয়ে তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেন, “এই বিষয়ে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের কোনও হাত নেই। সরাসরি রাজ্য নেতৃত্ব থেকে ব্লক নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রার্থিতালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাই গোটা ঘটনায় জেলা তৃণমূলের তরফে কোনও মন্তব্য করব না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement