Vidyasagar Industrial Hub

কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতিভঙ্গে হতাশ জমিদাতারা

এখন নতুন করে বিগত কয়েক বছরে শিল্পায়নে দিশা দেখিয়েছে কয়েকটি মাঝারি শিল্প। এসেছে ব্রিটিশ বিনিয়োগ।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৩৪
Share:

শিল্পতালুকে ফাঁকা পড়ে জমি। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডলয়।

প্রায় দুই দশক আগের কথা। শিল্পায়নের লক্ষ্যে বাম সরকার চেয়েছিল শিল্পতালুক গড়তে। প্রয়োজন ছিল জমির। বিনিময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল, জমির ন্যায্য মূলের পাশাপাশি জমিদাতা পরিবারের একজনকে শিল্পসংস্থায় দেওয়া হবে চাকরি। এমন শর্তে এগিয়ে এসেছিল এলাকাবাসী। রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শেষে শুরু হয় শিল্প গড়ার কাজ। মিথ্যা হয়নি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতিও। তার পরে রাজ্যের সরকারে পালাবদল। বছরকয়েক চলেছিল শিল্পায়নে আঁধার। এখন নতুন করে বিগত কয়েক বছরে শিল্পায়নে দিশা দেখিয়েছে কয়েকটি মাঝারি শিল্প। এসেছে ব্রিটিশ বিনিয়োগ। যদিও এখন ‘হতাশ’ জমিদাতাদের মুখে শুধুই কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ!

Advertisement

খড়্গপুরের বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকে গত কয়েকবছরে এই শিল্পতালুকে গড়ে উঠেছে ইন্ডিয়ান ওয়েলের রিফিলিং প্রকল্প, মেগা থার্মের ট্রান্সফর্মার প্রকল্প, আমের সিল কেটেক্সের ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেক্সাইলের প্রকল্পের মতো বেশ কয়েকটি মাঝারি শিল্প। এমনকি খুলেছে মহিন্দ্রার মতো লজিস্টিক হাব। শিল্প সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল করে গড়ে উঠছে আদিত্য বিড়লার গ্রাসিম রংয়ের প্রকল্প। শিল্প সম্ভাবনা উজ্জ্বল হলেও স্থানীয় জমিদাতা পরিবারের সদস্যরা মনমরা। বরং বিভিন্ন সময়ে ক্ষোভ উগরে পথে নামতে দেখা যাচ্ছে জমিদাতা পরিবারগুলিকে।

এই বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকে সবচেয়ে বেশি জমি দিয়েছিলেন ঘোলাগেড়িয়া মৌজার বাসিন্দা যুগল দোলুইয়ের পরিজনেরা। এখন কর্মসংস্থানের দাবি নিয়ে সেই যুগল দোলুই ওই এলাকার আন্দোলনের অন্যতম মুখ। কেন ক্ষোভ? জমিদাতা যুগল দোলুই বলেন, “বাম আমলে জমিদাতা পরিবারের সদস্যেরা সংশ্লিষ্ট জমিতে গড়ে ওঠা কারখানাগুলিতে চাকরি পাচ্ছিলেন। অথচ রাজ্যের পালাবদলের পর থেকেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের প্রবণতা বাড়ছিল। মাঝে শিল্পই আসেনি। বহু জমি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। এখন কিছু মাঝারি শিল্প এলেও তাঁরা আমাদের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি মানছেই না।”

Advertisement

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ওই বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকের জমিতে তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংগঠনিক সভার আগে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি নিয়ে বিক্ষোভ দেখান জমিদাতারা। তবে করোনা পরিস্থিতির পরে রাজ্যের শিল্প ভাবমূর্তি তুলে ধরতে বারবার বিদ্যাসাগর শিল্পতালুককে সামনে রাখতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। ২০২২সালে মেদিনীপুরে এক প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন এই বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকের জমিতেই হবে সাইকেল হাব। এর জন্য ৩০একর জমিও বরাদ্দ হয়। তবে ওই জমিতে মোরাম ফেলা ছাড়া এখনও আর কোনও কাজ হয়নি। তবে গত ৩বছরে বেশ কয়েকটি শিল্প সংস্থা এলেও কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি পূরণ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে। এমনকি নতুন আসা শিল্পসংস্থাগুলি দাবি করছে, টেকনিক্যাল পদে নিয়োগে জমিদাতাদের যোগ্যতা থাকলে তবে নিযুক্ত করা যাবে।

এমন ঘটনায় সরব হয়েছে বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলি। যেমন সিটুর জেলা সম্পাদক গোপাল প্রামাণিক বলেন, “বড় শিল্প কোথায়? দু’একটি মাঝারি-ক্ষুদ্র শিল্প আসছে। জমিদাতাদের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি বিঘ্নিত।” আইটাকের জেলা সম্পাদক বিপ্লব ভট্ট বলেন, “আমাদের সময়ে আমরা টাটা হিতাচি-সহ সব শিল্পসংস্থায় জমিদাতা পরিবারের কাজ সুনিশ্চিত করেছিলাম। কিন্তু তার পরে জমিদাতা থেকে স্থানীয় বেকারদের কথা তৃণমূল সরকার ভাবেনি।” যদিও আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি গোপাল খাটুয়া বলেন, “বহু শিল্প এই বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকে আসছে। আমরা সেখানে ৩০শতাংশ বাদে স্থানীয়দের কাজ নিশ্চিত করছি। জমিদাতারা কাজ পাচ্ছে। ”

রাজনীতি আকচা-আকচির মাঝে জমিদাতা পরিবারের সদস্য যুগল দোলুই বলেন, “শাসক-বিরোধী কেউ আমাদের পাশে নেই।’’ (শেষ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement