সমুদ্র আর জনপদের মাঝে নেই কোনও বাঁধ। মন্দারমণি সংলগ্ন পুরুষোত্তমপুর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের সৈকত সরণি এক পাশের লোকেদের কাছে রক্ষা কবচ। তেমনি উল্টো দিকের গ্রামগুলির বাসিন্দারা আজও আতঙ্কে প্রহর গুনছেন।
দিঘা থেকে পেটুয়াঘাট পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের উত্তরদিকের গ্রামগুলিতে যখন স্বস্তি, তখন মেরিন ড্রাইভ ও সমুদ্রের মাঝে থাকা দক্ষিণের গ্রামগুলির বাসিন্দারা আতঙ্কের প্রহর গুনছেন। গ্রামগুলিকে বাঁচাতে তৈরি করা হোক গার্ডওয়াল, এমনটাই দাবি তুলছেন স্থানীয়েরা। দিঘা থেকে কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের পেটুয়াঘাট পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের কাজ প্রায় সম্পূর্ণ। এ বছর মেরিন ড্রাইভের উত্তর দিকে থাকা গ্রামগুলি জলোচ্ছ্বাসের মত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। তাদের কাছে মেরিন ড্রাইভ এখন রক্ষাকবচ অপরদিকে, মেরিন ড্রাইভ ও সমুদ্রের মাঝে রয়েছে মন্দারমণি, দাদন পাত্রবাড়,জলধা,হরিপুর, বিরামপুট, বগুড়াণ,জলপাইয়ের মতো ২২টি গ্রাম। এ সব গ্রামের অধিকাংশ মানুষই মৎস্যজীবী। ২০২১ সালে ইয়াসের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এই সমস্ত এলাকা। তখন বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিতে হয়েছিল উঁচু বাঁধের উপরে। তখন থেকেই স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি জানিয়ে আসছেন মেরিন ড্রাইভের মত করে তাদের গ্রাম ও সমুদ্রের মাঝখানে যাতে গার্ড ওয়াল তৈরি করতে হবে। না হলে বর্ষার সময় বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তাদের। বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিতে হয় উঁচু বাঁধের উপরে।
স্থানীয়দের অভিযোগ,ইয়াসের ধাক্কা এখনও তারা পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেননি।তার পরে ফের একটা বর্ষাকাল চলছে। আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। যে কোনও সময় বড় ধরনের জলোচ্ছ্বাস হলে ডুবতে পারে বাড়িঘর। ইয়াসের সময় থেকেই দাবি উঠেছিল, সমুদ্র ও গ্রামের মাঝখানে তৈরি করা হোক গার্ড ওয়াল। সরকারি আধিকারিকরা একাধিকবার ঘুরে দেখেছেন এলাকা। কিন্তু কাজের কাজ আজ পর্যন্ত কিছু হয়নি। কাঁথির রঘু সরদার বাড় গ্রামের বাসিন্দা জয়ন্ত বর্মন, শ্রীপতি বর্মনদের কথায়,"বর্ষাকাল এলে চরম আতঙ্কে থাকি। বাড়িঘর আর সমুদ্রের মাঝে কোনও বাধা নেই। অনায়াসেই গিলে খেতে পারে আমাদের সবকিছু।"
২০১৮ সালে দিঘা থেকে কাঁথি পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী তিনটি সেতু নির্মাণের কাজও শেষ হয়ে গিয়েছে। মূলত, যেখানে সমুদ্র বাঁধ রয়েছে তার উপরেই তৈরি করা হয়েছে কংক্রিটের রাস্তা। আর যেখানে বাঁধের কোন অস্তিত্ব নেই সেখানে মেরিন ড্রাইভ নেই বললেই চলে। মুখ্যমন্ত্রীর এই স্বপ্নের সৈকত সরণিকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি অসীম মিশ্র বলেন,"অপরিকল্পিত ভাবে মেরিন ড্রাইভ তৈরি করার ফলে এই সমস্যা। যার ফলে মেরিন ড্রাইভ ও সমুদ্রের মাঝামাঝি এলাকা জুড়ে সমুদ্র তীরবর্তী যে সব গ্রাম রয়েছে সেখানে সামান্য জলোচ্ছ্বাস হলেই প্লাবিত হয়। সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের উচিত তাদের জন্য গার্ড ওয়াল নির্মাণ করা। কারণ পরিকল্পনা ছাড়া মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের ফলেই এই সমস্যা আরও বেড়েছে।’’ বিজেপির এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক তরুণ জানার দাবি,"বিজেপি গত দু’বছর ধরে এন আর জি এস এর কাজের টাকা বন্ধ করে রেখেছে। একশো দিনের কাজের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় যে বাঁধ নির্মাণ করা হতো সেই কাজ থমকে রয়েছে। মেরিন ড্রাইভ হওয়ার ফলে দিঘা সহ সমুদ্র তীরবর্তী অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। কমানো গিয়েছে দুর্ঘটনার সংখ্যাও।
রাজনৈতিক তরজার মাঝে মেরিন ড্রাইভ ও সমুদ্রের মাঝে থাকা এলাকাবাসীদের প্রশ্ন একটাই— কবে তাদের জন্য তৈরি হবে গার্ডওয়াল?