প্রতীকী ছবি।
আধঘণ্টারও কম সময়ে শহরে দু’টি ছিনতাই। আটচল্লিশ ঘণ্টার হিসেবে চারটে।
“সত্যিই রেলনগরী যেন কয়েকদিনে ছিনতাই নগরী হয়ে উঠেছে!”, বলছেন শাসকদল তৃণমূলের এক নেতা। আর বিরোধীদের প্রশ্ন, পুলিশ করছেটা কী!
বুধবার রাতে শহরের ২০নম্বর ওয়ার্ডে আধ ঘণ্টারও কম সময়ের ব্যবধানে সাঁইমন্দির ও ধ্যানসিংহ ময়দান এলাকায় পৃথক দু’টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটল। দু’টি ক্ষেত্রেই শিকার দুই মহিলা। দু’জনেই গোলবাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। একজন ওই সাঁইমন্দির সংলগ্ন রেল কোয়ার্টারের বাসিন্দা টি তুলসী দেবী। অন্যজন বৃদ্ধা ওয়াই কুমারী। তাঁর বাড়ি মালঞ্চ পেট্রলপাম্প এলাকায়। গোলবাজার থেকে অটোয় ফিরছিলেন ওই বৃদ্ধা। সুভাষপল্লি পেরিয়ে এক নম্বর মোড়ে দাঁড়ায় অটোটি। দুই মহিলা নেমে ভাড়া মেটাচ্ছিলেন। অটোর ভিতরে বসেছিলেন ওয়াই কুমারী। সেই সময়েই অটোর পিছনের ত্রিপলের জানালা দিয়ে বৃদ্ধার গলার সোনার হার ছিনিয়ে নিয়ে বাইকে দুই দুষ্কৃতী চম্পট দেয় বলে অভিযোগ। এর কয়েক মিনিট পরেই গোলবাজার থেকে স্কুটিতে সাঁইমন্দির সংলগ্ন কোয়ার্টারে ফেরেন তুলসী দেবী। কিন্তু কোয়ার্টারে ঢোকার মুখেই বাইকে এসে দুই দুষ্কৃতী তুলসীর গলা থেকে সোনার হার ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। বাধা দিতে গেলেই সম্ভ্রমহানির চেষ্টা হয় বলে দাবি করেছেন ওই মহিলা। ঘটনার পরেই থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন দুই মহিলা। তদন্তে নেমে এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে পুলিশ। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, “শহর জুড়ে আমরা জোর তল্লাশি করছি। এ বার শহর জুড়ে বিভিন্ন পয়েন্টে নাকা চালু করতে চলেছি আমরা।”
গত কয়েকদিনে শহর জুড়ে ধারাবাহিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ডেভেলপমেন্ট, ইন্দা, সুভাষপল্লি, মালঞ্চ থেকে সাঁইমন্দির- শহর জুড়ে কার্যত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুষ্কৃতীরা। বাধা এলেই কখনও ছাত্রীকে চলন্ত স্কুটিতে হেঁচড়ে ব্যস্ত রাস্তায় ফেলে রক্তাক্ত করছে। কখনও চেষ্টা হচ্ছে মহিলার সম্ভ্রমহানির। সোমবার সাতসকালে শহরের সুভাষপল্লিতে গলিপথে পিস্তল দেখিয়ে ৭লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছিল। ওই দিন রাতেই মালঞ্চর গ্যালাক্সি গলিতে দুই মহিলাকে রাস্তায় ফেলে এক মহিলার গলা টিপে ধরে একটি সোনার মঙ্গলসূত্র নিয়ে চম্পট দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। বুধবার ফের আরও দুই ছিনতাই। আটচল্লিশ ঘন্টার চারটি ছিনতাইয়ে শিউরে উঠছে শহরবাসী। ঘটনায় শঙ্কিত বৃদ্ধা ওয়াই কুমারী কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারেননি। চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ নিয়ে আরেক অভিযোগকারীনি টি তুলসী দেবী বলেন, “কোয়ার্টারে ঢোকার মুখে আমার সোনার হার ছিনিয়ে নিয়েছে দুই দুষ্কৃতী। আমি প্রথমে আটকানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ওরা এতটা বেপরোয়া যে আমার কাপড় ছিঁড়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। আমি সম্ভ্রম বাঁচাতে সোনার হার ছেড়ে দিই। আমার তো মনে হচ্ছে শহর একেবারে সুরক্ষিত নয়। ভয় লাগছে!”
পুলিশকে বিঁধে বিজেপির রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “কালীঘাটে টাকা পাঠাতে হয়। এ জন্য পুলিশ তোলাবাজিতে ব্যস্ত। এটা হতে পারে না যে, শহরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, এসডিপিও, আইসি-সহ পুলিশ আধিকারিকরা থেকেও ছিনতাই ঠেকাতে পারছে না। মনে হচ্ছে দুষ্কৃতীরা শাসক ঘনিষ্ঠ বলেই পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে না।” আবার খড়্গপুরের পুরপ্রধান তথা তৃণমূল নেতা প্রদীপ সরকার বলেন, “প্রচণ্ড উদ্বেগের বিষয়। পুলিশ চেষ্টা করছে নিশ্চয়ই। আরও টহলদারি প্রয়োজন। পুলিশকে সক্রিয় হতেই হবে।” এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, “তদন্ত চলছে। তার পরেই বলা যাবে।”
তদন্ত চলছে। তারই সঙ্গে চলছে ছিনতাইও।