টিউবে চাপিয়ে অসুস্থ লক্ষ্মী নায়েককে রাস্তা পার করানো হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।
বাইরে তখন প্রচণ্ড বৃষ্টি। তার মধ্যে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন দিন দশেক আগে মা হওয়া এক মহিলা। সিজ়ার হওয়া রোগীকে আবার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু রাস্তার কোথাও কোমরসমান, তো কোথাও হাঁটুর উপর জল। উপায় কী? অগত্যা বাতিল হওয়া টিউবে রোগিণীকে চাপিয়ে পার করা হল জলমগ্ন রাস্তা। কোনওক্রমে রোগিণীকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়নি। হাসপাতাল থেকে তাঁকে বাপের বাড়ি নিয়ে যান পরিজনেরা। ওই ঘটনায় শোরগোল পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায়। রোগিণীর পরিবার তথা গ্রামবাসীদের দাবি, ফি বছর বৃষ্টির সময় কাউকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে হলে টিউবই তাঁদের কাছে একমাত্র ‘যান’। অভিযোগ, রাস্তা সংস্কারে গড়িমসি করছে প্রশাসন। অন্য দিকে, স্থানীয় প্রশাসনের তরফে বলা হচ্ছে, দ্রুত নিকাশি ব্যবস্থার সংস্কার করা হবে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা ব্লকের ৫/১ অঞ্চলের বাড়াগড় এলাকায় একটি খাল রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘ ১৫ বছর সেই খালের সংস্কার হয়নি। রাস্তার অবস্থাও তথৈবচ। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তায় হাঁটুসমান জল জমে যায়। আর বৃষ্টি খানিক বেশি হলে তো কথাই নেই। তখন এলাকাবাসীর দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। শনিবার তেমনই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেন লক্ষ্মী নায়েক ও তাঁর পরিবার। দিন দশেক আগে সিজ়ার হয়েছে লক্ষ্মীর। একটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন দিন কয়েক আগে। কিন্তু শনিবার হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়। অসুস্থ মহিলাকে টিউবে বসিয়ে জলবন্দি রাস্তা পার করাতে হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে এ ভাবেই ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে তাঁদের পারাপার করতে হচ্ছে। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে টিউবে চাপিয়ে জলমগ্ন রাস্তা পার করানো ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। কিন্তু প্রশাসন এ বিষয়ে উদাসীন। যদিও পঞ্চায়েত প্রধান পূর্ণিমা ভুঁইয়ার দাবি, চলতি মরসুমেই সংস্কারের লক্ষ্য রয়েছে তাঁদের। তিনি বলেন, ‘‘দ্রুত নিকাশি ব্যবস্থার সংস্কার করা হবে।’’
অন্য দিকে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ঘূর্ণিঝড় ‘ডেনা’র প্রভাব এবং বৃষ্টির কথা ভেবে মোট ৪৯৩ জন প্রসূতিকে উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে প্রশাসন। গত বৃহস্পতি এবং শুক্রবার ৩৮৭ জনের প্রসব হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ডেবরা ব্লক থেকেই সবচেয়ে বেশি ৭১ জন প্রসূতিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তা ছাড়া দাঁতন-১ ব্লকে ৩৯, খড়্গপুর-১ ব্লকে ৩৮, চন্দ্রকোনা-২ ব্লকে ৩৩, চন্দ্রকোনা-১ ব্লকে ৩২, গড়বেতা-১ ব্লকে ২৮, কেশপুরে ২৬, নারায়ণগড় ব্লকে ২৫, মোহনপুর ব্লকে ১৫ এবং সবংয়ের ১৬ জন রোগিণীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বেলদা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩৪ জন অন্তঃসত্ত্বা। তাঁদের ২৪ জন শিশুর জন্ম দিয়েছেন। ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ২২টি শিশুর জন্ম হয়েছে। জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি বলেন, ‘‘এর আগে ঘাটালে বন্যার সময় ৩৬০ প্রসূতিকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তার মধ্যে ২৪৫ জন সন্তান প্রসব করেছিলেন। এ বারে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে আগেভাগে ৪৯৩ জনকে উদ্ধার করা হয়েছিল।’’ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, ‘‘২১টি ব্লক এবং পাঁচটি পুরসভা থেকে ৪৯৩ জন প্রসূতিকে উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ৩৮৭ জন সন্তান প্রসব করেন। বাকিরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’’
অন্য দিকে, জল যন্ত্রণা থেকে এখনই মুক্তি মিলছে না পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বাসিন্দাদের। মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন ধর্মায় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে এখনও জল জমে রয়েছে। শহরের বিভিন্ন নালা-নর্দমা থেকে জল উপচে রাস্তার উপরে বইছে। নোংরা, প্লাস্টিকে ভরে গিয়েছে নিকাশি নালা।