Christmas Holiday

ঠাসা পর্যটক, ঠাঁই নেই হোম স্টেতেও

গত কয়েক বছরে ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি ব্লকের বেলপাহাড়ি, শিমূলপাল, ভুলাভেদা ও বাঁশপাহাড়ি অঞ্চলে সত্তরটি হোম স্টে হয়েছে। এর মধ্যে ভালভাবে বসবাসের উপযোগী হোম স্টের সংখ্যা ৬১টি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বেলপাহাড়ি শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৫০
Share:

শীতের দিনান্তে তখনও ঘুরছেন পর্যটক। মঙ্গলবার বেলপাহাড়ির ঘাঘরায়। নিজস্ব চিত্র ছবি: সংগৃহীত।

বড়দিনের ছুটিতে বেলপাহাড়িতে এখন কার্যত ঠাঁই নাই অবস্থা।

Advertisement

সেখানকার হোম স্টে গুলিতে কার্যত একশো শতাংশ অগ্রিম বুকিং হয়ে গিয়েছে। যে সব পর্যটক শেষ মুহূর্তে বেলপাহাড়ি আসার পরিকল্পনা করছেন তাঁরা নিরাশ হচ্ছেন। হোম স্টে কর্তৃপক্ষের কাছে শুনতে হচ্ছে, ‘‘বড় দেরি করে ফেলেছেন। শীতে সম্ভব নয়, বসন্তোৎসবের জন্য অগ্রিম বুকিং সেরে ফেলতে পারেন।’’

এসব শুনে তাজ্জব হচ্ছেন বারাসাতের শুচিতা রায় বসাক থেকে দমদমের অমিতাভ ঠাকুরতার মতো মহানগরের পর্যটকরা। শুচিতার কথায়, ‘‘আগে তো মাওবাদীদের ভয়ে কেউ বেলপাহাড়িতে যেত না বলে শুনেছি। এখন অনেকেই বেড়াতে যাচ্ছেন। শেষ মুহূর্তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও থাকার জায়গার অভাবে পিছিয়ে আসতে হল!’’ অমিতাভ বলছেন, ‘‘কলকাতা থেকে কাছেপিঠে ঝাড়গ্রাম বড়ই মনোরম জায়গা। বেলপাহাড়িতে অনেক থাকার জায়গা হয়েছে জেনে কয়েকটা হোম স্টেতে ফোন করেছিলাম। কিন্তু প্রত্যেক হোম স্টে থেকে জানানো হল, বর্ষশেষের সপ্তাহে কোথাও ঘর খালি নেই।’’

Advertisement

ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় মানছেন, ‘‘২৩-৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলার প্রায় সব হোটেল ও হোম স্টে অগ্রিম বুকিং রয়েছে। আগে ঝাড়গ্রাম থেকে পর্যটকরা বেলপাহাড়ি ঘুরে আসতেন। এখন পর্যটকরা বেলপাহাড়িতে থাকতে চাইছেন। যে কারণে ওখানে বর্ষশেষের সপ্তাহে কোথাও স্পট বুকিং দেওয়া যাচ্ছে না।’’

গত কয়েক বছরে ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি ব্লকের বেলপাহাড়ি, শিমূলপাল, ভুলাভেদা ও বাঁশপাহাড়ি অঞ্চলে সত্তরটি হোম স্টে হয়েছে। এর মধ্যে ভালভাবে বসবাসের উপযোগী হোম স্টের সংখ্যা ৬১টি। এবার বর্ষ শেষের সপ্তাহের জন্য সবগুলির সমস্ত ঘর অগ্রিম বুকিং হয়ে গিয়েছে। মাস খানেক অথবা মাস দু’য়েক আগে যাঁরা ঘর ‘বুক’ করেছেন, তাঁরা এখন বেড়াতে আসছেন। পাহাড়-প্রকৃতির কোলে থাকা এবং জঙ্গল লাগোয়া হোম স্টে গুলিতে স্পট বুকিং দেওয়া এখন সম্ভব হচ্ছে না।

ষাট-সত্তরের দশকে পর্যটকদের কাছে বেলপাহাড়ির পরিচিতি ছিল না। কিছু লোকজন ভুলাভেদা-কাঁকড়াঝোর বনপথে ট্রেকিং করার জন্য আসতেন। সত্তরের দশকে চিন্ময় রায় অভিনীত টেনিদা কাহিনী অবলম্বনে ‘চারমূর্তি’ ছবির বেশ কিছু দৃশ্যগ্রহণ হয়েছিল কাঁকড়াঝোর বন বাংলো ও আশেপাশের জঙ্গল-পাহাড়ি এলাকায়। তারপরই কাঁকড়াঝোরে হাওয়া বদল করতে আসা লোকজনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কিন্তু মাওবাদী সন্ত্রাসবাদ মাথা চাড়া দেওয়ায় আতঙ্কে একসময় পর্যটকরা বেলপাহাড়িমুখো হতেন না। ২০০৪ সালের ৪ ডিসেম্বর রাতে মাওবাদীরা কাঁকড়াঝোড় বন বাংলোটি ল্যান্ড মাইন ফাটিয়ে ধ্বংস করে দেয়।

তৃণমূলের জমানায় শান্তি ফেরার পরে কাঁকড়াঝোরেই প্রথম বেসরকারি হোম স্টে তৈরি হয়। ইতিমধ্যে প্রশাসনের উদ্যোগেও সরকারি অতিথিশালায় হয়েছে কাঁকড়াঝোরে। আমঝর্না, আমলাশোল, ময়ূরঝর্না, বাঁশপাহাড়ি, চাকাডোবা, ভুলাভেদা, কুলডিহা, সাতবাঁকি, সিঙ্গাডোবা, ঢাঙিকুসুম, আগুইবিল, বালিচুয়ার মতো এলাকায় একাধিক হোম স্টে তৈরি হয়েছে। বেলপাহাড়ি ব্লক সদরেই তৈরি হয়েছে ২৩টি হোম স্টে। কিছু হোম স্টেতে তাঁবুতেও রাত্রিবাসের ব্যবস্থা রয়েছে। শালের বাকলে পোড়া মুরগির মাংস, কাঁচা শালপাতায় পোড়া মাংসের মতো উপাদেয় খাবারের সঙ্গে রয়েছে ক্যাম্প ফায়ারের ব্যবস্থা। স্থানীয় লোকনৃত্য দেখার সুযোগও মেলে।

বেলপাহাড়ি টুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র বিধান দেবনাথ বলছেন, ‘‘এখনও বেলপাহাড়ির পাহাড়-প্রকৃতির মধ্যে এক অসীম নির্মলতা রয়েছে। এখানে এসে মানুষ পরম প্রশান্তি পান। ইউটিউবে বহু ভ্লগার বেলপাহাড়িকে তুলে ধরায় কলকাতা ও বাইরের বহু পর্যটক এখন আসছেন।’’ তিনি জানাচ্ছেন, যে পরিমাণ হোম স্টে তৈরি হয়েছে, মরসুমে পর্যটকদের জায়গা দেওয়ার ক্ষেত্রে তা পর্যাপ্ত নয়। পর্যটকদের ঢল দেখে কলকাতা ও শহরতলির অনেকেই হোম স্টেতে লগ্নিও করতে আগ্রহী হচ্ছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement