নকাট গ্রামের হোম স্টে চত্বরে খড়ের চালার কালী মন্দির। নিজস্ব চিত্র।
গ্রামীণ হোম স্টে-র কালীপুজো। তার জোগাড় থেকে সাজসজ্জা সব কিছুই সামলান সেখানে থাকা পর্যটকেরা। হাত লাগান স্থানীয় গ্রামবাসীরাও। প্রতিবছর কালীপুজোয় পর্যটন আর কালীপুজোর মিশেলে জমাটি এমন ‘প্যাকেজ’ই দেখা যায় ঝাড়গ্রাম শহরের অদূরে নকাট গ্রামে।
২০১৪ সালে নকাট গ্রামে ২২ বিঘা জমির উপর ওই হোম স্টে গড়ে উঠেছিল। তার কর্ণধার শুভাশিস দেবসিংহ জানালেন, বহু বছর আগে ওই জমিতে একটি কদম গাছের তলায় কালী পুজো করতেন স্থানীয়রা। পরবর্তীকালে সেই পুজো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিষয়টি জানার পরে ২০১৪ সাল থেকেই কালী পুজো শুরু করেন শুভাশিস। হোম স্টে চত্বরে ইঁট-মাটির গাঁথনি দেওয়া ঘরে প্রথমে মাটির মূর্তিতে পুজো শুরু হয়। ২০১৮ সালে সেই খড়ের চালা ঘরে ছোট পাথরের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে শুরু হয় নিত্য পুজো। কালীপুজোর দিনে যে সব পর্যটক থাকেন, তাঁদের মধ্যে থেকে আগ্রহীদের পুজোর আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিদ্ধেশ্বরী রূপে পূজিতা হন ওই কালী। হোম স্টে কর্তৃপক্ষই পুজোর যাবতীয় খরচ বহন করেন। রাতে পাত পেড়ে পর্যটক ও গ্রামবাসীরা মিলে দেবীর অন্নভোগ গ্রহণ করেন।
ঝাড়গ্রাম শহর থেকে পিচ রাস্তা ধরে ধবাধোবিন গ্রাম হয়ে কিছুদূর যাওয়ার পরে মেঠো জঙ্গল পথ উঁজিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় ওই হোম স্টেতে। সেখানে জলাশয়ে থাকা সেই পুকুরের মাছ থাকে পর্যটকদের খাবার মেনুতে। ওই চত্বরে রয়েছে জৈব আনাজ খামার। সারা বছর সেখানে উৎপাদিত টাটকা আনাজই প্রতিদিন রান্না হয়। রয়েছে দেশি মুরগি ও হাঁসের খামার এবং নিজস্ব গরুর টাটকা দুধ। কালীপুজোর দিনে অবশ্য সব পদই নিরামিষ। থাকে খিচুড়ি, লাবড়া ও চাটনি। এই পুজোয় বলি দেওয়া হয় না।
ওই হোম স্টেতে তিনটি কটেজের ১৪টি ঘরে ৪২ জনের থাকার পরিকাঠামো রয়েছে। রবিবার কালীপুজোর দিনে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ৪২ জন পর্যটকই রয়েছেন। হাওড়ার সঞ্চিতা চট্টোপাধ্যায়, কলকাতার সন্তোষপুরের বিশ্বরূপ রায়চৌধুরী, সল্টলেকের মৃণালকান্তি দাশগুপ্তদের মত পর্যটকদের সঙ্গে পুজোর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কার্তিক মাসের অমাবস্যায় জঙ্গলমহলের মূলবাসীদের বাঁদনা পরবও শুরু হয়। এই সময়ে গোয়ালের গরুকে ভগবতী রূপে সেবা করা হয়। ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার দিনে বাঁধনা পরবের শেষ পর্যায় ‘গরু খুঁটান’ হয়। কালীপুজোর সঙ্গে এগুলোও দেখা হয়ে যায় এখানকার পর্যটকদের। কলকাতার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাসিন্দা নীলাদ্রি সরকারের কথায়, ‘‘কালীপুজো ও বাঁদনা পরবের টানে বার বার নকাট গ্রামের হোম স্টেতে ছুটে আসি। গতবছর এসেছিলাম। এবারও এসেছি।’’