নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর খাসতালুকে নিরঙ্কুষ জয় তৃণমূলের। — ফাইল ছবি।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর গড় নন্দীগ্রামে বিশাল জয় পেল তৃণমূল। শুক্রবার, ভেটুরিয়া সমবায় সমিতির ভোটে ১২টি আসনেই হেরে গেল বিজেপি, বাম। সবক’টি আসন গেল তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীদের ঝুলিতে। ভোটগণনার দিন সকাল থেকেই দফায় দফায় সংঘর্ষে এমনিতেই উত্তপ্ত ছিল নন্দীগ্রাম। দিনের শেষেও তা কমার লক্ষণ নেই।
নন্দীগ্রামে সমবায় সমিতির ভোট যেন বদলে গেল সাধারণ নির্বাচনে। দাবি, পাল্টা দাবির প্রেক্ষিতে সমবায় ভোট নিয়ে সরগরম জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘর। শুক্রবার সকাল থেকেই নন্দীগ্রামে টানটান উত্তেজনা। দফায় দফায় সংঘর্ষের অভিযোগ। বিজেপি ও তৃণমূল, দু’পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেছে। বহিরাগতদের এনে হামলার অভিযোগও করেছে যুযুধান দুই পক্ষই। ঝরেছে রক্তও। এর মধ্যেই ভোট চলে, দিনের শেষে ভোটগণনা। গণনা শেষে দেখা যায়, মোট ১২টি আসনই জিতে নিয়েছেন তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা। একটি আসনও জিততে পারেনি নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দুর দলের সমর্থিত প্রার্থীরা। বিরোধী দলনেতার খাসতালুকে এ ভাবে বিজেপিকে হারানোর পর উল্লাসে ফেটে পড়েন তৃণমূল সমর্থেকেরা। বিজেপির একটি ক্যাম্প অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা বিজেপির বিরুদ্ধেই বহিরাগত এনে গণনায় কারচুপির চেষ্টার অভিযোগ করেছে তৃণমূল।
এমন বিপুল হারের পর হারের দায় পুলিশ প্রশাসনের উপর চাপিয়েছে বিজেপি। নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা প্রলয় পাল বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে ভোটে জিতেছে তৃণমূল। এ রাজ্যে নিরপেক্ষ ভোট কোনও দিনই সম্ভব নয়। পুলিশ দলদাস থেকে ক্রীতদাস হয়েছে। তারাই নির্বাচন করছে, তারাই গণনা করছে। এখানকার ভোটারদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে।’’ অন্য দিকে তৃণমূলের দাবি, নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর সমস্ত দাপট ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যাচ্ছে। পঞ্চায়েতে বাকিটাও হয়ে যাবে। দলের তরফে নন্দীগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে আজ (শুক্রবার) সকাল থেকে গোলমাল করেছে বিজেপি। আমরা পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। নন্দীগ্রাম ২-য়ে সমবায়ের ভোট, আর সেখানে নন্দীগ্রাম ১ এবং অন্যান্য বাইরের এলাকার লোককে কেন ঢোকাল শুভেন্দু? বহিরাগতদের দিয়ে গোলমাল করার চেষ্টা করেছিল শুভেন্দু। আমাদের দলের স্থানীয় লোকেরা তা প্রতিহত করেছে। তা করতে গিয়ে আমাদের ছেলেরা রক্তাক্ত হয়েছে। শুভেন্দুর পায়ের তলা থেকে মাটি সরছে এটা তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।’’ কুণালের দাবি, নন্দীগ্রামেও সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৃণমূলকে হারাতে লড়েছিল বিজেপি। কিন্তু তাতেও লাভ হল না। কুণাল বলেন, ‘‘বাম-রাম মিলেও কিছুই করতে পারল না। এ বার শুভেন্দু কোথায় যাবে!’’
পঞ্চায়েত ভোটের আগে নন্দীগ্রামের একটি সমবায় ভোটের ফলকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, নন্দীগ্রামে এক দিকে যেমন রাজ্যে জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘর বলে পরিচিত, তেমনই এই কেন্দ্রেই গত বিধানসভা ভোটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়েছিলেন শুভেন্দু। বস্তুত, নন্দীগ্রামের ভোটের ফলের জেরেই রাজ্য বিজেপিতে আলাদা পরিচিতিও পেয়ে থাকেন শুভেন্দু। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের আগে সেই শুভেন্দুর খাসতালুকেই বিজেপির এই বিরাট হার কতটা ইঙ্গিতবাহী? জল্পনা শুরু।