১১৬বি জাতীয় সড়কের উপরে শহিদ মাতঙ্গিনী সেতুতে জ্বলে না আলো। ছবি: শুভেন্দু কামিলা।
১০০ শতাংশ বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। বাম আমলের সঙ্গে নিজেদের তুলনা টানতে গিয়ে তৃণমূল নেতারা হামেশাই এই দাবি করেন। তবে জেলার সার্বিক ছবি বলছে, বিদ্যুৎ সংযোগ হলেও ক্ষোভ রয়েছে পথবাতির অপ্রতুলতা নিয়ে। একই সঙ্গে বারবার লোডশেডিং এবং ‘লো ভোল্টেজ’ নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে বহু এলাকায়। প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় আবার সামান্য ঝড়-বৃষ্টি হলেই বিপর্যস্ত হয় বিদ্যুৎ পরিষেবা।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে জন সাধারণের কাছে সে সব পরিষেবা রাজ্য সরকার পৌঁছে দিচ্ছে, তা প্রচার করে জনসংযোগ করছেন প্রার্থীরা। এই ওই সব পরিষেবার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল বিদ্যুৎ সংযোগ এবং পথবাতি। রাস্তাঘাটে পর্যাপ্ত পথবাতি না থাকা নিয়ে হামেশাই ক্ষোভ সামনে আসে। সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারে ডুবে থাকে খেজুরি, পটাশপুর, ভগবানপুর, রামনগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বাজার এলাকাগুলিতে কিছু পথবাতি থাকলেও গ্রামের পথে তা একেবারে নেই বললেই চলে। এতে গ্রামবাসীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। পঞ্চায়েতগুলির অবশ্য দাবি, আগে কোথাও পথবাতির ব্যবস্থা ছিল না। গত কয়েক বছরে ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ থেকেও বেশ কিছু এলাকায় পথবাতি বসানো হচ্ছে। এর মধ্যে শহর এলাকায় হাইমাস্ট বাতি, কোথাও লোমাস্ট বাতি বসানো হয়েছে। সেই সব হাইমাস্ট বাতি পিছু খরচ হয়েছে গড়ে ৫০ হাজার টাকা। হলদিয়া, মহিষাদল, সুতাহাটা, নন্দীগ্রাম, তমলুক প্রভৃতি এলাকায় এমন বাতি বসানো হয়েছে।
কাঁথি মহকুমার আটটি ব্লকে অধিকাংশ গ্রামীণ রাস্তাতে আলো নেই। গুটিকয়েক জনবহুল মোড় বা বাজারগুলিতে পথবাতি রয়েছে। তা ছাড়া গ্রামীণ এলাকার একাংশে একটা বড় সময় বিদ্যুৎ থাকে না বলে প্রায়শই অভিযোগ ওঠে। তার সঙ্গে এই গরমেকালে বাড়ে ‘লো ভোল্টেজ’-এর সমস্যা। এই পরিস্থিতিতে ঝা চকচকে রাস্তা, লক্ষ্মীর ভান্ডারকে হতিয়ার করে প্রচারে নামলেও, আলো নিয়ে কথা শুনতে হচ্ছে তৃণমূল প্রার্থীদের। উপকূলবর্তী খটিগুলিতে বিকল সৌর বাতিসরিয়ে নতুন আলো বসানো হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এগরা-১, ২, পটাশপুর, ভগবানপুর-১, ২ ব্লকের ৯০ শতাংশ গ্রামীণ রাস্তায় পথবাতি নেই। ভগবানপুর -২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কাজলরানি বর্মনও সেই অভিযোগ মেনে বলছেন, “গ্রামের সব রাস্তায় পথবাতির ব্যবস্থা করা যায়নি।”
হলদিয়া মহকুমার চারটি ব্লকে অনেক রাস্তায় পথবাতি নেই। অনেক পঞ্চায়েতে হাইমাস্ট বাতিস্তম্ভ বসানো হলেও, তার বেশ কয়েকটি বিকল। গ্রামীণ তমলুক মহকুমা জুড়ে আটটি ব্লক রয়েছে। সবকটি ব্লক হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অন্তর্ভুক্ত। তবুও কোলাঘাটের সিদ্ধা, বৃন্দাবনচক, পুলশিটা গ্রাম পঞ্চায়েতের অনেক এলাকায় রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা নেই। তমলুক মহকুমার বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সৌর বিদ্যুৎ চালিত পথবাতি বসানো হয়েছিল কয়েক বছর আগে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই সব বাতিল কোনওটি অকেজো হয়ে গিয়েছে। আবার কোনও বাতিস্তম্ভ ভাঙ্গাচোরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ‘অল বেঙ্গল ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েক বলেন, ‘‘জেলাতে বহু গঞ্জ এলাকায় রাস্তায় পথবাতির ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া লোডশেডিং, লো ভোল্টেজের সমস্যা ও আগের থেকেও বেশি মাথাচাড়া দিয়েছে।’’ কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি অসীম মিশ্রের অভিযোগ, ‘‘রাত হলেই শিক্ষা আর শিল্প সংস্কৃতিতে এগিয়ে থাকা জেলার অনেক অংশই অন্ধকারে ডুবে থাকে।’’
কাঁথি মহকুমার কাঁথি-১,৩, দেশপ্রাণ ব্লকে জনবহুল এলাকাগুলিতে সম্প্রতি কিছু কিছু পথ বাতি বসেছে। দিঘার পাশাপাশি, তাজপুর এবং মন্দারমণি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। তা সত্ত্বেও ওই সব এলাকার গ্রামগুলির রাস্তায় পর্যাপ্ত পথবাতি বসেনি। এতে পর্যটকদের পাশাপাশি, স্থানীয়দেরও সমস্যা হয়। কাঁথি-১ এবং দেশপ্রাণ ব্লকে পথবাতি নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। তবে উত্তর কাঁথির বিধায়ক সুমিতা সিংহ এবং দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক অরূপ কুমার দাসের তহবিলের অর্থে ৩০টির বেশি সৌরবাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে সম্প্রতি। আর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক বলছেন, ‘‘গত কয়েক বছরে রাস্তায় প্রচুর পথবাতি বসেছে। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকায় বিভিন্ন এলাকায় আরও পথবাতি বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’’ (শেষ)