নিমপুরার এই পুকুরেই মৃত্যু হয় নাবালক ওমনাথ সিংহের (ইনসেটে)। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
ছটপুজোয় সূর্যপ্রণামে গিয়ে পুকুরে ডুবে এক কিশোরের মৃত্যু ঘিরে ভোট-রাজনীতির পারদ চড়ল খড়্গপুরে। মৃতের পরিবার অভিযোগ তুলল, তৃণমূলের পুর-প্রশাসনের গাফিলতির দিকে। শহরে হাজির বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও আঙুল তুললেন তৃণমূলের দিকেই।
রবিবার সকালে খড়্গপুর শহরের ১২ ওয়ার্ডের নিমপুরার প্রান্তিক ময়দানে রেলের জমিতে খনন করা পুরসভার একটি পুকুরে ছটপুজোর সূর্যপ্রণামে ভিড় জমিয়েছিলেন এলাকাবাসী। সেই সময় পুজো দিতে যাওয়া স্থানীয় ক্ষুদিরামপল্লির তরুণ ওমনাথ সিংহ (১৭) পুকুরের জলে তলিয়ে যায়। পুকুরে নেমে তল্লাশি চালায় এলাকার যুবকেরাই। দীর্ঘক্ষণ তল্লাশির পরে উদ্ধার হয় ওমনাথের দেহ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রান্তিক ময়দানে রেলের জমিতে ওই পুকুর সংস্কারের অভাবে মজে গিয়েছিল। প্রতিবছর ছটপুজোয় বিহারি পরিবারগুলি পুজো দিতে যেত কাঁসাই নদীতে। সমস্যা সমাধানে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পুকুর খনন করে গত বছর ছটপুজোয় উদ্বোধন করা হয়েছিল। এ বারও সেখানেই চলছিল পুজো। শনিবার বিকেলে নিমপুরার বিহারি পরিবারগুলি ওই পুকুরে পুজো দিতে যান। মামাবাড়ি বিহারি সম্প্রদায়ের হওয়ায় ওমনাথও পুজো দিতে পুকুরঘাটে যায়। সুষ্ঠুভাবে পুজো দিয়ে বাড়ি ফেরেন সকলেই। এ দিন সকালে ফের সূর্যপ্রণামে মামাবাড়ির লোকজনের সঙ্গে ওই পুকুরঘাটে যায় ওমনাথ। সঙ্গে ছিলেন মা, মাসি, দাদু-সহ মামাবাড়ির সকলে। পুজো চলাকালীন সকলের নজর এড়িয়ে জামা-প্যান্ট পরেই ওমনাথ পুকুরে নেমে যায়। সেই সময় পুকুরে স্নান করছিল এলাকার আরও কয়েকজন অল্পবয়সী ছেলে। ওমনাথ সাঁতার কেটে পুরসভার নির্দিষ্ট করে দেওয়া বিপদসীমার দড়ি টপকে পুকুরের মাঝখানে চলে যায়। কয়েকজন দেখেন, জলে হাবুডুবু খেয়ে তলিয়ে যাচ্ছে ওমনাথ। কয়েকজন এগিয়ে গেলেও তাকে উদ্ধার করা যায়নি। পুকুরপাড়ের বাসিন্দা সুমন সাউ বলেন, ‘‘পুকুর খুব গভীরভাবে খনন করা হয়েছিল। বাঁশ দিয়ে বিপদসীমা বেঁধে না দেওয়ায় কোনও কিছু আঁকড়ে ধরে বাঁচার সুযোগও ছিল না। কোনও ডুবুরিও ছিল না। আমরা এলাকার ছেলেরা পুকুরে নেমে যখন ওকে তুললাম, ততক্ষণে সব শেষ।’’
ঘটনায় পুকুরঘাটের সুরক্ষা নিয়ে পুরসভার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মৃতের পরিজনেরা। মৃতের মা আশা সিংহ বলেন, ‘‘ওর মৃত্যুর জন্য পুরসভা, কাউন্সিলর ও প্রশাসন দায়ী। পুকুরে কোনও সুরক্ষার বন্দোবস্ত ছিল না। এর জন্য পুরসভাকে জবাব দিতে হবে।’’ রাতে স্থানীয় কাউন্সিলর সরিতা ঝা-র পার্টি অফিস ঘিরে তুমুল বিক্ষোভও হয়।
বিধানসভা উপ-নির্বাচনের মুখে এই ঘটনায় শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। মৃতের পরিবারের সুরেই সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। এ দিন খড়্গপুর শহরে এসেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘ওই পুকুরটি পুরসভা খনন করেছে জানি। ছেলেটি সাঁতার জানত শুনেছি। কিন্তু কীভাবে ডুবে গেল সেটাই প্রশ্ন। কোনও সুরক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। বাঁচানোর জন্য প্রশাসনের লোকও ছিল না। এর পিছনেও সরকারের গাফিলতি রয়েছে।’’ কংগ্রেসের জেলা কার্যকরী সভাপতি দেবাশিস ঘোষেরও বক্তব্য, ‘‘এই ঘটনা পুরসভা ও প্রশাসনের চরম গাফিলতির ফল। কোনও সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া ছটপুজো চলছিল ওই পুকুরে। এর জন্য একটা তরতাজা তরুণের প্রাণ চলে গেল।’’
যদিও খড়্গপুরের পুরপ্রধান তথা উপ-নির্বাচনের তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকার বলছেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যের। কিন্তু এটা নিয়ে রাজনীতি ঠিক নয়। নিছক দুর্ঘটনা নিয়ে বিজেপি ও কংগ্রেস যে রাজনীতি করতে চাইছে তাতে সুফল পাবে না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘পুকুরে আমরা দড়ি দিয়ে বিপদসীমা তৈরি করে দিয়েছিলাম। জামা-প্যান্ট পরে ছেলেটি কেন পুকুরে নেমেছিল সেটা বুঝতে পারছি না।’’
পুরপ্রধানের ব্যাখ্যায় অবশ্য চাপানউতোর থামছে না।