বাসযাত্রীদের সঙ্গে কথা বলছেন শুভেন্দু। নিজস্ব চিত্র
রেলশহরে বিধানসভা উপ-নির্বাচন আসন্ন। আগামী এক-দু’দিনের মধ্যেই ঘোষিত হতে পারে উপনির্বাচনের নির্ঘণ্ট। তার আগেই ময়দানে শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার খড়্গপুরে শহরের উদ্বাস্তুদের জমির মালিকানা স্বত্ব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করার আহ্বান জানালেন। সরকারি সেই অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে বেলদার কাছে উঠে পড়লেন একটি সরকারি বাসেও। সারলেন জনসংযোগ।
পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দুর এ ধরনের জনসংযোগের কৌশলে আলোচনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। কারণ, মন্ত্রী বা নেতা হিসেবে এতদিন কোথাও হঠাৎ পরিদর্শনে দেখা যায়নি শুভেন্দুকে। তার চেয়ে প্রথাগত কৌশলেই বেশি ভরসা রাখেন তিনি। শুভেন্দু অনুগামীরা বলেন, দলের একেবারে নীচু স্তরের কর্মীর খোঁজখবর রাখেন ‘দাদা’। সেদিক থেকে হঠাৎ করে বাসে উঠে পড়া কিছুটা ‘ব্যতিক্রমী’ বটেই।
লোকসভা ভোটের পর থেকে দলে গুরুত্ব বেড়েছে শুভেন্দুর। সামনেই খড়্গপুর বিধানসভার উপ নির্বাচন। বিজেপির শক্ত ঘাঁটি খড়্গপুরে দলকে ফের দাঁড় করাতে বারবার রেলশহরে আসছেন শুভেন্দু। কখনও দলীয় কর্মসূচিতে। আবার কখনও সরকারি অনুষ্ঠানে। এ দিন যেমন খড়্গপুর শহরের পুরসভা প্রাঙ্গণে সরকারি পাট্টা বিলির এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল জেলা প্রশাসন। সেখানে উপস্থিত থেকে খড়্গপুর শহরের তালবাগিচা, দীনেশনগর, রবীন্দ্রপল্লির মতো উদ্বাস্তু এলাকার মানুষদের হাতে জমির দলিল তুলে দেন শুভেন্দু। ১০৮ জন এদিন ওই দলিল পেয়েছেন। একইসঙ্গে গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দাদের কৃষি জমির পাট্টা বিলিও করা হয়। ওই মঞ্চ থেকেই শুভেন্দু বলেন, ‘‘দশকের পর দশক সরকার, বিধায়ক, সাংসদ, জেলাশাসক এসেছে-গিয়েছে। আপনাদের লাল, নীল, সাদা, হলুদ, গেরুয়া, সবুজ অনেক রকম মিছিলে হাটিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এসব কার্যকর কেউ করেনি।”
পাট্টা বিলির এমন আয়োজন নতুন নয়। রাজ্য জুড়েই সমাজের একশ্রেণির মানুষকে এমন সুবিধা দিয়ে সরকারের পাশে টানতে চলছে এমন নানা কর্মসূচি। তবে তবে এই পাট্টা যে পৃথক তা বারবার বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, “এটা সাধারণ পাট্টা নয়, ব্যতিক্রমী পাট্টা।” কেন এই পাট্টা ব্যতিক্রমী তা বোঝাতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘এই পাট্টাতে আপনি মালিকানা স্বত্বও পেলেন। আপনি হস্তান্তর করতে চাইলেও অসুবিধা নেই। আমি আশা করব আপনারা সবাই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন। তাঁর হাত শক্তিশালী করবেন।” খড়্গপুর পুনরুদ্ধারে প্রধান অন্তরায় যে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তা চাপা থাকেনি এ দিনের অনুষ্ঠানে। উপস্থিত জেলাশাসক রশ্মি কমল, সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, অতিরিক্ত জেলাশাসক উত্তম অধিকারীর পাশাপাশি বারবার শহরের পাঁচ নেতা তথা কাউন্সিলরের নাম উল্লেখ করেছেন শুভেন্দু।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, শুধু দলে সমন্বয় নয়। দলের শক্তিবৃদ্ধিতে মানুষকে পাশে টানতে চাইছে শুভেন্দু। সরকারি নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শহরবাসীকে দেওয়া হচ্ছে নানা উপহার। এর আগেও শুভেন্দু তিনটি বাসের উদ্বোধন করেছিলেন। এ বার শহরবাসীর হাতে উদ্বাস্তু জমির মালিকানা তুলে দিলেন শুভেন্দু।
ওই কর্মসূচি সেরে কাঁথি ফিরছিলেন পরিবহণমন্ত্রী। বেলদা থানার ললাটের কাছে বেলদা-দিঘা রাজ্য সড়কে আসানসোল-দীঘা রুটের একটি সরকারি বাস থামিয়ে তাতে উঠে পড়েন মন্ত্রী। পরিষেবা নিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে খোঁজ খবর নেন। বাসের যাত্রীরা টিকিট কেটেছেন কিনা তাও জানতে চান মন্ত্রী। যাত্রীদের কাছে আবেদন রেখে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সরকারি রাজস্ব নষ্ট করবেন না। সবার টিকিট আছে তো!’’ সবাইকে টিকিট কাটার অনুরোধ রাখেন। বাদ যাননি বাসের কন্ডাক্টরও। তাঁদের উদ্দেশে মন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, মাসের প্রথম দিন বেতন দিচ্ছি। ভাল করে, সততার সঙ্গে কাজ করুন। বহু অভিযোগ আছে অনেকগুলো গাড়ির সম্পর্কে।’’
প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগে দলীয় কর্মীদের দেখতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। রোগীদের মেঝেয় থাকতে দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। এ বার তিনি উঠলেন সরকারি বাসে।