প্রতীকী ছবি।
গত বিধানসভা উপ-নির্বাচনে প্রথমবারের জন্য ঘাসফুল ফুটেছে রেলশহর খড়্গপুরে। মিশ্র সংস্কৃতির এই শহর যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনেও যে তাঁর ‘পাখির চোখ’ পশ্চিম মেদিনীপুরে এসে সে কথাই বুঝিয়ে গেলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার মেদিনীপুর শহরের সভামঞ্চ থেকে খড়্গপুর রেল কারখানাকে তাঁর গর্ব বলে উল্লেখ করেন তিনি। তাজপুর সমুদ্র বন্দরের ইউনিট খড়্গপুরে গড়ে তোলার কথাও বলেন। মঞ্চে থাকাকালীন রেলশহরের নেতা দেবাশিস চৌধুরী ও প্রদীপ সরকারের নাম নিয়েছেন একাধিকবার। সূত্রের খবর, শুধু মঞ্চ নয়, মঞ্চের বাইরেও রেলশহরে দলের দুই গোষ্ঠীর ‘মাথা’কে ডেকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যুযুধান নেতাদের দায়িত্বও ভাগ করে দিয়ে তিনি বুঝিয়েছেন খড়্গপুর তাঁর নেকনজরেই আছে। এরপরে মঙ্গলবারই কলকাতায় দেবাশিস-প্রদীপকে ডেকে পাঠান দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী।
খড়্গপুর শহর বরাবরই প্রতিষ্ঠান বিরোধী। বাম এমনকি তৃণমূলের আমলেও এই শহর থেকে কংগ্রেসের বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রয়াত জ্ঞান সিংহ সোহনপাল (চাচা)। ২০১৬ সালে জেতেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও এই শহর থেকে ৫০ হাজার ভোট ‘লিড’ পান দিলীপ। এরপরেই খড়্গপুর কার্যত তাঁর ‘খাসতালুক’ হয়ে ওঠে। সেই পরিস্থিতি কিছুটা বদলায় গত বিধানসভা উপ-নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের পরে।
কিন্তু তারপর থেকেই শহরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকট হয়। খড়্গপুরের বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর প্রদীপের সঙ্গে শহরের নেতা দেবাশিসের সংঘাত লেগেই রয়েছে। এই বিষয়টি যে তাঁর নজরে রয়েছে মঙ্গলবার সেই বার্তাই দিয়েছেন মমতা। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মঙ্গলবার প্রদীপ বলেন, “দিদির কাছে খড়্গপুরের গুরুত্ব বরাবরের। দিদির উন্নয়ণের কারণেই গত উপ-নির্বাচনে মানুষ প্রথমবার আমাদের এই বিধানসভায় জিতিয়েছে। দিদি চাইছেন এই শহরে যাতে বিজেপি আর মাথাচাড়া দিতে না পারে। রাজ্য সভাপতিও তাই আমাদের ডেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে জয় ধরে রাখার বার্তা দিয়েছেন।”
দলে গুরুত্ব বাড়ার পরে জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাশিসও বলেন, “এই শহরে যে আমাদের জয় এসেছে সেটা যাতে টিকে থাকে ও বিজেপি যাতে জায়গা না পায় সেই উৎসাহ দিদি দিয়ে গেলেন। আমাদের রাজ্য সভাপতিও আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আলোচনা করে নিতে বলেছেন।”
নিজেদের পুরনো জমি ফিরে পাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী বিজেপিও। বিজেপির রাজ্য নেতা তথা মেদিনীপুর জ়োনের মুখপাত্র তুষার মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “খড়্গপুরে আমাদের দলের বরাবর প্রভাব রয়েছে। সেখানে কোনওভাবে উপ-নির্বাচনে জায়গা করেছে তৃণমূল।’’ তিনি জুড়ছেন, ‘‘তৃণমূল ভেঙে চুরমার হচ্ছে। তৃণমূলনেত্রী সেটা বুঝেই খড়্গপুরকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ সব তাঁর ভোটমুখী ভেল্কি।”