জসপ্রীত বুমরাহ। —ফাইল চিত্র।
বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির শেষ টেস্টে চোট পান জসপ্রীত বুমরাহ। দু’বছর আগে তাঁর পিঠের যে জায়গায় অস্ত্রোপচার হয়েছিল, সেই জায়গাটি ফুলে যায় তাঁর। সিডনি টেস্টে দ্বিতীয় দিন মধ্যাহ্নভোজের পর বল করতে পারেনি। তার পর থেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বুমরাহের খেলা নিয়ে তৈরি হয়েছিল সংশয়। বুমরাহকে রেখেই ১৫ জনের দল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকর। তবে কবে তিনি মাঠে ফিরতে পারবেন, তা নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি তিনি। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি স্ক্যান করানোর হবে তাঁর পিঠের।
কয়েক দিন আগে খবর ছড়িয়ে পড়ে বুমরাহকে পূর্ণ বিশ্রামে (বেড রেস্ট) থাকতে বলেছেন চিকিৎসক। দ্রুত সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে ক্রিকেট মহলে। যদিও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বুমরাহ নিজেই সমাজমাধ্যমে জানান, খবরটি ভিত্তিহীন। সরাসরি ভুয়ো বলেছিলেন তাঁর পূর্ণ বিশ্রামের খবরকে। কিন্তু তাঁর পিঠের চোট নিয়ে কোনও সংশয় নেই। সিডনি টেস্টের দ্বিতীয় দিন মাঠ থেকেই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল স্ক্যান করানোর জন্য। কেমন আছেন বুমরাহ? তিনি নিজে কিছু জানাননি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডও কিছু জানায়নি। বিশ্বের অন্যতম সেরা জোরে বোলারের ফিটনেসের বিষয়টি রয়েছে অন্ধকারে। ফলে জল্পনা, সংশয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের কৌতূহলও।
বুমরাহ যে ফিট নন, তা স্বীকার করে নিয়েছেন প্রধান নির্বাচকও। আগরকর বলেছেন, ‘‘আমরা ফিজ়িয়োর রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি। আমরা শুধু জানি, বুমরাহকে পাঁচ সপ্তাহ বল করতে বারণ করা হয়েছিল। সেই মতো আমরা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই পারি। ঠিক সময় মতো বুমরাহের ফিটনেস নিয়ে আলোচনা করব আমরা। কোনও ভুল খবর দিতে চাই না। মনে হয় বিসিসিআই সরকারি ভাবে খুব তাড়াতাড়ি কিছু একটা জানাবে। আমাদের শুধু একটা সময় বলা হয়েছে। এটুকু বলব, বুমরাহের খেলার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’’
গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
আগরকর জানিয়েছেন, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম দু’টি এক দিনের ম্যাচে বুমরাহ খেলতে পারবেন না। তাই এই সিরিজ়ের দলে রাখা হয়েছে হর্ষিত রানাকে। প্রধান নির্বাচকের আশা, জস বাটলারের দলের বিরুদ্ধে তৃতীয় এক দিনের ম্যাচে পাওয়া যেতে পারে বুমরাহকে। কিন্তু এক জন আনফিট ক্রিকেটারকে কেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে রাখা হল? এই প্রশ্নের জবাবে অধিনায়ক রোহিত শর্মার পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘এই মুহূর্তে আমরাও বুমরাহের ফিটনেসের ব্যাপারে নিশ্চিত নই। তাই এমন কাউকে দরকার ছিল, যে ওর ভূমিকা পালন করতে পারবে। সে জন্য আরশদীপ সিংহকে দলে নেওয়া হয়েছে।’’
বুমরাহের ফিটনেস সম্পর্কে প্রধান নির্বাচক বা অধিনায়ক কিছু জানেন না বা তাঁদের সঙ্গে জোরে বোলারের যোগাযোগ নেই, এমন সরল তথ্য বিশ্বাস করা কঠিন। আসলে বুমরাহকে রেখেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সময় বুমরাহ ফিট হয়ে যাবেন। তাঁর খেলতে সমস্যা হবে না। একান্তই তিনি খেলতে না পারলে, দলে পরিবর্তন করার সুযোগ রয়েছে। কারণ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) নির্দেশিকা মতো ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত দল ঘোষণা করতে হবে। এখন ঘোষণা করা দল প্রাথমিক। ফলে বুমরাহকে রেখে দল ঘোষণা করতে কোনও বাধা নেই। প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রথম ম্যাচ ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। অর্থাৎ, এক মাসের বেশি সময় রয়েছে হাতে।
কেমন আছেন বুমরাহ? বিভিন্ন সূত্রে যা জানা যাচ্ছে তার নির্যাস হল, আগের থেকে কমলেও তাঁর পিঠের একাংশ এখনও ফুলে রয়েছে। বিশ্রামে রয়েছেন তিনি। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি তাঁর চোটের জায়গার স্ক্যান করানো হবে। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পর বোঝা যাবে, ঠিক কেমন আছেন তিনি। খেলার মতো ফিট হতে কত সময় লাগতে পারে। কী ধরনের চিকিৎসার প্রয়োজন। ভারত-ইংল্যান্ড দ্বিতীয় এক দিনের ম্যাচ ৯ ফেব্রুয়ারি। সেই ম্যাচ পর্যন্ত বুমরাহকে ছাড়াই ভাবছেন আগরকর, রোহিতেরা। তৃতীয় এক দিনের ম্যাচ ১২ ফেব্রুয়ারি। সেই ম্যাচে বুমরাহ খেলতে পারলে চিন্তা থাকবে না। ১৩ ফেব্রুয়ারি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চূড়ান্ত দলেও থাকবেন তিনি। তবে বুমরাহ ১২ ফেব্রুয়ারির ম্যাচেও খেলতে না পারলে এবং তাঁর ফিট হতে আরও বেশি সময় লাগলে, সে ক্ষেত্রে অন্য রকম কিছু ভাবতে হতে পারে নির্বাচকদের। তেমন পরিস্থিতি হবে না বলেই মনে করছেন আগরকর, রোহিতেরা।