দেশপ্রাণ ব্লকের মুকুন্দপুর বাজারে। নিজস্ব চিত্র
করোনার চোখ রাঙানিতে জমায়েত এড়াতে এ বার অন্যভাবে ২১ জুলাইয়ের শহিদ স্মরণ দিবস পালন করল শাসকদল তৃণমূল। দলীয় কর্যালয়গুলিতে জায়েন্ট স্ক্রিন টাঙিয়ে কালীঘাট থেকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা শোনানোর ব্যবস্থা করেছিল দল। এই ভার্চুয়াল সভা ঘিরে যাতে কোথাও বেশি জমায়েত না হয় সে বিষয়েও প্রশাসনের তরফে নজরদারি ছিল। কাঁথিতে দেশপ্রাণ ব্লকে ভার্চুয়াল সভাকে ঘিরে লুচি-মাংসের ব্যবস্থাও ছিল।
কলকাতায় ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে তাঁকে দেখা যেত বক্তার ভূমিকায়। করোনা পরিস্থিতিতে এবছর সমাবেশ হওয়ায় দলনেত্রীর ভাষণ শুনতে নিজের বিধানসভা নন্দীগ্রামে দলীয় কার্যালয়ে ছিলেন রাজ্যের পরিবহণ ও সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। দলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ অনুযায়ী এ দিন দলের পতাকা উত্তোলন ও ‘শহিদ’দের শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচি পালন করা হয় প্রতিটি এলাকায়। তমলুক শহরে মানিকতলায় সাংসদ কার্যালয় সহ জেলার প্রতিটি ব্লকে ও অঞ্চলে ভার্চুয়াল সভায় মমতার বক্তব্য শোনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে নন্দীগ্রামে দলীয় কার্যালয়ে বসে শুভেন্দুর মমতার বক্তব্য শোনার ঘটনা অন্যমাত্রা যোগ করেছে।
এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ নাগাদ নন্দীগ্রাম বাজারে দলের ব্লক কার্যালয়ে পৌঁছন শুভেন্দু। সেখানে বসে মমতার বক্তব্য পুরোটা শোনার পরে নন্দীগ্রাম ছাড়েন। তবে এদিন দলীয় কার্যালয়ে নন্দীগ্রামের অন্যতম দুই তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান ও আবু তাহেরের না থাকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যা নিয়ে ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পালের দাবি, ‘‘করোনার কারণে দলীয় কার্যালয়ে সব নেতার উপস্থিতিতে নেত্রীর বক্তব্য শোনার মতো অবস্থা ছিল না। তাই ব্লকের নেতাদের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে দলীয় কার্যালয়ে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়।’’ তমলুকের মানিকতলা জেলা সভাপধিপতি দেবব্রত দাস, তমলুক পুরসভার প্রশাসক রবীন্দ্রনাথ সেন-সহ দলের কর্মীরা মমতার বক্তব্য শুনতে উপস্থিত ছিলেন। ময়না, নন্দকুমার, শহিদ মাতঙ্গিনী, চণ্ডীপুর ব্লক-সহ বিভিন্ন অঞ্চল তৃণমূল কার্যালয়ে মমতার ভার্চুয়াল সভার বক্তব্য শোনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের মুকুন্দপুর বাজারে জায়েন্ট স্ক্রিন বসানো হয়। সেখানে প্রতিটি বুথ থেকে শ’তিনেক তৃণমূল কর্মী উপস্থিত হন। সেখানে নেত্র্রীর বক্তব্য শোনার সঙ্গে সঙ্গে দুপুরে তাঁদের লুচি-মাংস আর মিষ্টি প্যাকেট দেওয়া হয়। দেশপ্রাণ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তরুণ জানা বলেন, ‘‘সামাজিক দূরত্ব বৃদ্ধি মেনেই সকলের বসার ব্যবস্থা হয়েছিল। প্রত্যেককে মুখে মাস্ক ব্যবহারের জন্য আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছিল।’’ খেজুরি-১ ব্লকের দক্ষিণ লাক্ষী, কামারদা, জনকা-সহ পাঁচটি গ্রামে জাযেন্ট স্ক্রিন লাগানো হয়। করোনা সংক্রমণ বাড়ার জন্য কাঁথি পুর এলাকায় লকডাউন কার্যকর করেছে জেলা প্রশাসন। তাই এদিন কাঁথি শহর সহ আশপাশের এলাকায় দলীয় কার্যালয় গলিতে তৃণমূলের পতাকা উত্তোলন করে শহিদ দিবস পালন করেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। একই ছবি ছিল রকম অবস্থা রামনগর-১ ও ২ ব্লকে। জেলা যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি বলেন, ‘‘করোনার জন্য বড় পর্দার ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে সর্বত্রই দলীয় কার্যালয়ে পতাকা উত্তোলন এবং নেতৃত্বদের বাড়িতেই ভার্চুয়াল সভা দেখানো হয়।’’
কোভিড সংক্রমণ এড়াতে পাঁশকুড়া ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব বুথে বুথে জায়ান্ট স্ক্রিনের মাধ্যমে ভার্চুয়াল সভা দেখানোর কর্মসূচি বাতিল করেন। তবে প্রতিটি বুথ এলাকায় দলীয় পতাকা উত্তোলন ও শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানান তৃণমূলের নেতা কর্মীরা।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে থাকলেও সেখান থেকেই নিজের বিধানসভা এলাকায় শহিদ স্মরণে নেত্রীর ভার্চুয়াল সভায় দলের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি নিয়ে টেলিফোনে খোঁজ নিলেন এগরার বিধায়ক সমরেশ দাস। বিধায়ক বলেন, ‘‘অসুস্থতার কারণে এলাকায় থাকতে পারেনি। তাই সোমবার রাতে এলাকায় ফোন করে সভার প্রস্তুতির খোঁজ নিয়েছি। মঙ্গলবার দুপুরে জননেত্রীর বক্তব্য ফোনে দেখেছি।’’