বন্ধ ঘাটাল উপ-সংশোধনাগার। নিজস্ব চিত্র।
পাঁচ মাস পরেও চালু হল না ঘাটাল উপ-সংশোধনাগার। গত ১ অগস্ট মহকুমা শাসকের দফতরের পাঁচিল ভেঙে জলমগ্ন হয়েছিল ওই উপ-সংশোধনাগার। সেই সময় সেখানে যে বিচারাধীন বন্দিরা ছিল তাদের মেদিনীপুরে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে ওই উপ-সংশোধনাগার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তারপরে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে অনেক দিন হল। কিন্তু সেটি আর চালু হয়নি।
ঘাটাল আদালতে বিচারাধীন বন্দিদের ঘাটাল উপ-সংশোধনাগারে রাখা হতো। এর জেরে চরম সমস্যায় পড়েছে তারা। কারণ আদালত থেকে জামিন মিললেও সেই নথি মেদিনীপুরে দেরিতে পৌঁছনোর কারণে আটকে থাকতে হচ্ছে তাদের।
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ঘাটাল আদালতের আইনজীবীরাও। তাঁদের বক্তব্য, বিষয়টির সঙ্গে বিচারাধীন বন্দিদের স্বার্থ জড়িত। জামিন পাওয়ার পরেও মুক্তি নিয়ে জটিলতা হচ্ছে। বাড়ির লোকজনদের চরম হয়রানির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনে উদাসীন। ঘাটাল বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুজিত হাজরা বলেন, “আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ওই উপ-সংশোধনাগার নিয়ে একধিকবার মহকুমাশাসককে আবেদন করা হয়েছে। বিচারাধীন বন্দিদের সমস্যার কথা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বলা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি।”
অগস্ট মাস থেকেই ঘাটালের সমস্ত বন্দিরা মেদিনীপুর উপ-সংশোধনাগারে থাকছে। এরপরে মূল সমস্যা তৈরি হয়েছে ঘাটাল থেকে মেদিনীপুরে যাতায়াতের দুরত্বের কারণে। একেই আদালতে কোনও জামিন মঞ্জুর হওয়ার পরে সেই নথি হাতে আসতে সময় লাগে। তারপর এক্ষেত্রে সেই নথি নিয়ে প্রায় ৭০ কিলোমিটার উজিয়ে যেতে হচ্ছে মেদিনীপুর উপ-সংশোধনাগারে। সেখানে যদি বিকেল পাঁচটার আগে জামিনের নথি না পৌছয়, তো সেই দিন আর ছুটি হবে না। এরপরে রয়েছে গাড়ির সমস্যা। বিচারাধীন বন্দিদের সঙ্গে দেখা করার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়েছেন পরিবারের লোকজন। ক্ষীরপাইয়ের বাসিন্দা স্বদেশ দোলই বলছিলেন, “আমার ছেলে মারপিটের মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলে বন্দি ছিল। জামিন হয়ে যাওয়ার পরেও টানাবাহানা চলেছে।”
জানা গিয়েছে, ১ অগস্ট ঘাটাল মহকুমাশাসকের দফতরের পাঁচিল ভেঙে জলমগ্ন হওয়ার পরে উপ-সংশোধনাগারের দেওয়াল-সহ একাধিক ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। নষ্ট হয়েছিল বিদ্যুৎ, অ্যাম্বুল্যান্স-সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো। রান্নাঘরে জল ঢুকে সরঞ্জামেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়। তারপর সেখানকার পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ক্ষয়ক্ষতির হিসেব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু এখনও টাকা বরাদ্দ হয়নি। শুরু হয়নি সংস্কারও। সেখানকার কর্মীদেরও একের করে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। আগে সেখানে পুলিশ ও জেল কর্মী মিলিয়ে ২০-২২ জন ছিলেন। এখন সেখানে সাব জেলার-সহ চারজন কর্মী রয়েছেন।
ঘাটালের মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাসের অবশ্য আশ্বাস, “উপ-সংশোধনাগারটি দ্রুত চালু করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”