কাঁথি থানায় ঢুকছেন সৌমেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র।
বুধবার নাম না করে দুর্নীতি প্রসঙ্গে অধিকারী পরিবারকে নিশানা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর ২৪ ঘন্টার মধ্যেই কাঁথির অধিকারী পরিবারের ছোট ছেলে তথা বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সৌমেন্দু অধিকারীকে তলব করল পুলিশ।
কাঁথি পুরসভার অফিস থেকে সারদার ফাইল লোপাট সংক্রান্ত মামলায় সাক্ষী হিসেবে বৃহস্পতিবার দুপুরে কাঁথি থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল সৌমেন্দুকে। বিকেলে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রীকেই নিশানা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ছোট ভাই। নন্দীগ্রামে মমতার হারের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘‘দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। সব কিছুই ১৯৫৬-র (মমতার হারের ব্যবধান) জ্বালাযন্ত্রণা থেকে হচ্ছে।’’
মঙ্গলবার কাঁথি থানার পক্ষ থেকে নোটিস পাঠানো হয় সৌমেন্দুকে। সারদার নথি উধাও মামলায় সাক্ষী হিসেবে বৃহস্পতিবার দুপুর বারোটায় তাঁকে তলব করা হয়। সেই মতো এ দিন সওয়া বারোটা নাগাদ 'শান্তিকুঞ্জ' থেকে সোজা গাড়িতে কাঁথি থানায় পৌঁছন শহরের প্রাক্তন পুরপ্রধান। সঙ্গে ছিলেন তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআরপি কর্মীরা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকেল পৌনে তিনটে নাগাদ বেরোন তিনি। সৌমেন্দু বলেন, ‘‘অপ্রাসঙ্গিক সব কথাবার্তা বলা হচ্ছে। হাই কোর্টের নির্দেশ রয়েছে। তাই তদন্তে সহযোগিতা করতে এসেছি। আগামী দিনেও যদি ডেকে পাঠানো হয় আবার আসব।’’ তবে হাই কোর্টের নির্দেশ না মেনে তাঁকে আড়াই ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন সৌমেন্দু। তবে এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য।
যদিও তদন্তকারীদের দাবি, সৌমেন্দু বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন। সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন জমি নিয়ম মেনে দেওয়া হয়েছিল কিনা, সারদাকর্তার জমি বাবদ দেওয়া টাকা কোথায় গেল, কত টাকা দিয়েছিলেন— এমন নানা প্রশ্নের উত্তর এ দিন সৌমেন্দুর কাছে জানতে চায় পুলিশ। তবে এ নিয়ে কেউই বিশদে বলতে রাজি হননি।
কাঁথি পুরসভার সারদার ফাইলের বিষয়ে জানতে তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন জানিয়েছিলেন এক আইনজীবী। পুরপ্রধান সুবলকুমার মান্না তথ্য দিতে না পারায় গত বছর ২৮ জুন কাঁথি থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। যে সময় সারদা কর্তাকে জমি দেওয়া হয়েছিল, তখন পুরপ্রধান ছিলেন সৌমেন্দু। কাঁথি থানার পুলিশ তদন্ত নেমে সৌমেন্দুকে গত বছর ৭ অক্টোবর, তারপরে এ বছর ৩১ মার্চও তলব করেছিল।
এই মামলায় পুরসভার একাধিক কর্মচারী ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। তবে সৌমেন্দুকে রক্ষা কবচ দিয়েছে হাইকোর্ট। ফলে, তাঁকে গ্রেফতার করতে পারবে না পুলিশ। আর সৌমেন্দুকে তদন্তকারীদের সহযোগিতা করতে হবে। দীর্ঘ ছ’মাস বাদে সৌমেন্দুকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ দেখছে বিজেপি। দলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা নেতা অসীম মিশ্রের দাবি, ‘‘নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা ভুরি ভুরি দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে পুলিশকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী দলনেতা ও তাঁর পরিবারকে হেনস্থা করার চেষ্টা চলছে।’’ জেলা সভাধিপতি উত্তম বারিক পাল্টা বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলছে।’’