নয়া শিক্ষক সমিতি, নেপথ্যে সঙ্ঘ যোগ

বিজেপির শিক্ষক সংগঠন জেলায় মাথা তুলছে। তার মধ্যেউ এ বার জেলার শিক্ষকদের নিজেদের সংগঠনের ছাতার তলায় আনতে উদ্যোগী হল সঙ্ঘ।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৯ ০০:৩০
Share:

প্রতীকী ছবি।

শুধু মূল দল নয়, সমান জোরদার করতে হবে শাখা সংগঠনগুলিকেও। এই যুক্তিতে পশ্চিম মেদিনীপুরের আনাচে-কানাচে প্রভাব বাড়াতে মরিয়া গেরুয়া-শিবির। এ ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)।

Advertisement

বিজেপির শিক্ষক সংগঠন জেলায় মাথা তুলছে। তার মধ্যেউ এ বার জেলার শিক্ষকদের নিজেদের সংগঠনের ছাতার তলায় আনতে উদ্যোগী হল সঙ্ঘ। সঙ্ঘ সূত্রে খবর, রবিবার ‘বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি’র জেলা কমিটি গঠিত হয়েছে। এই সমিতি আরএসএস-এরই শাখা সংগঠন। মেদিনীপুরে সঙ্ঘ নিবাসে বৈঠক করে সমিতির পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠিত হয়েছে। ছিলেন আরএসএস-এর জেলা কার্যবাহ স্বপন ফৌজদার, জেলা প্রচারক বরুণ ঘোষ, সঙ্ঘ চালক ঠাকুরদাস অধিকারী, বিভাগ সম্পর্ক প্রমুখ নিতাই দত্ত। আরএসএস অবশ্য এ নিয়ে ভাঙতে নারাজ। সংগঠনের জেলা কার্যবাহ স্বপন ফৌজদার বলেন, ‘‘শিক্ষকদের একটি কর্মসূচি ছিল। আমি গিয়েছিলাম। শিক্ষকদের সমিতি ছিলই। সমিতির নতুন কমিটি হয়েছে।’’ সঙ্ঘ সূত্রে খবর, ১১ জনের জেলা কমিটির সম্পাদক হয়েছেন দেবাঞ্জন হোড়, সভাপতি শিবজ্যোতি মাইতি। আগামীতে কলেজ শিক্ষকদের সংগঠনও না কি গঠিত হবে।

কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকার ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্যে আরএসএস- এর শাখা বাড়তে শুরু করে। লোকসভায় ভাল ফলের পরে সংগঠনের বিস্তার আরও বাড়ছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এ যেন ঠিক বামেদের গণসংগঠনের ছক। প্রকাশ্যে কোনও রাজনীতি থাকবে না ঠিকই, কিন্তু নেপথ্যে অবশ্যই থাকবে নিজেদের মতামতকে ছড়িয়ে দেওয়ার, সমর্থক বানানোর জোরাল প্রচেষ্টা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মানছেন, জেলায় বিজেপির শক্তিবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে সঙ্ঘ।

Advertisement

সঙ্ঘের এক কার্যকর্তা বলেন, ‘‘আমাদের আদর্শের সঙ্গে অনেকে একমত। শুধু শিক্ষক কেন, যুবক-যুবতীদের মধ্যেও সঙ্ঘের সদস্য হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এঁদের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ রয়েছেন। আসলে যেখানেই মানুষের সমস্যা হয়, সেখানে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি।’’ সূত্রের খবর, আগামী দিনে জেলা সম্মেলন করে নিজেদের শক্তির জানান দিতে পারে আরএসএস- এর ওই শিক্ষক সংগঠন। সম্মেলন থেকে নতুন সমাজ গড়ার ডাক দিতে পারে তারা। শিক্ষক সংগঠনের এক কার্যকর্তার দাবি, ‘‘বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি একমাত্র সংগঠন যার সদস্য হলে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জুড়তে হয় না, ভোটের সময়ে কোনও দলের হয়ে প্রচারে যেতে হয় না!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সঙ্ঘের আদর্শে কাজ করি আমরা। আমরা চাই মূল্যবোধ, নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও চরিত্র গঠনের শিক্ষা চালু হোক। রাজনৈতিক অনুপ্রবেশমুক্ত শিক্ষাই আমাদের লক্ষ্য।’’

জেলায় তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন রয়েছে। তবে সেখানে দলাদলির অভিযোগ রয়েছে। আর বামেদের শিক্ষক সংগঠন এখন যারপরনাই দুর্বল। এই পরিস্থিতিতে নতুন এই সংগঠন শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে জোরদার আন্দোলনের কথা বলছে। শিক্ষকদের কেন্দ্রীয় হারে বেতন, বকেয়া ডিএ দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষায় ‘অধঃপতন’ রোধে পাঠক্রমে যোগ শিক্ষা, প্রাণায়ম প্রভৃতি চালুর দাবিতে আন্দোলনে নামতে পারে ওই সমিতি। সমিতির ওই কার্যকর্তার কথায়, ‘‘তৃণমূলের উপর সমাজের সবস্তরের মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। শিক্ষক সমাজও ব্যতিক্রম নয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘ভারতীয় সংস্কৃতির আদর্শ ও ঐতিহ্য মেনে সিলেবাস হওয়া উচিত। যাতে শিশুমনে দেশাত্মবোধ গড়ে ওঠে। এখন এর অভাব দেখা দিয়েছে।’’

তৃণমূল অবশ্য খোঁচা দিচে ছাড়ছে না। দলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির কটাক্ষ, ‘‘আরএসএস হিন্দুত্বের জিগির তুলে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। শিক্ষকেরা তৃণমূলের পাশেই রয়েছেন।’’ তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের নেতা রাজীব মান্নারও দাবি, ‘‘এখন জেলায় আমাদের সংগঠনই শক্তিশালী।’’ আর সিপিএমের শিক্ষক সংগঠনের নেতা বিপদতারণ ঘোষ বলেন, ‘‘সাময়িক আবেগে কয়েকজন শিক্ষক ওই সংগঠনে যেতে পারে। তবে সংগঠনটি সার্বিক ভাবে শিক্ষক সমাজে তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না। শিক্ষকেরা এবিটিএ-কেই চান।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement