জীবনযুদ্ধে জয়ী সন্তানকে নিয়ে রেললাইন ধরে জঙ্গলে ফিরছে মা হাতি। —নিজস্ব চিত্র।
গ্রামে ঝোপের মধ্যে ছিল পরিত্যক্ত পাতকুয়ো। চলতে চলতে হুড়মুড়িয়ে তার মধ্যে পড়ে যায় একটি হস্তীশাবক। জোরালো শব্দ পেয়ে ছুটে এসেছিলেন স্থানীয়রা। তাঁরা গিয়ে দেখেন পড়ে যাওয়া হস্তীশাবককে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে মা হাতি। কিন্তু ৮ ফুট গভীর ওই কুয়োর জলের মধ্যে হাবুডুবু খেতে থাকা শাবকটিকে তুলতে গিয়ে ব্যর্থ হয় তার মা। সন্তানকে তুলতে না পেরে ডাকতে শুরু করে সে। পরিস্থিতি দেখে বন দফতরে খবর দেন স্থানীয়রা।
খবর পেয়ে ১৫ মিনিটের মধ্যেই জেসিবি নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন বন দফতরের কর্মীরা। এর পর প্রায় ৫ ঘণ্টার চেষ্টায় উদ্ধার করা হয় হস্তীশাবকটিকে। মা হাতি সন্তানকে কাছে পেয়ে শান্ত হয়। হাঁফ ছাড়েন স্থানীয়রা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কলাইকুণ্ডার ভুরুচটি এলাকার ঘটনা। স্থানীয় সূত্রে খবর, সোমবার মধ্যরাতে হস্তীশাবকটি কুয়োয় পড়ে গিয়েছিল। রাত ১২টা থেকে বন দফতরের লোকজন তাকে উদ্ধারের কাজ শুরু করেন। হুলাপার্টি, বন দফতরের প্রায় ১০০ জন কর্মী উদ্ধারকাজে হাত লাগান। কিন্তু আট ফুটের কুয়োয় জল বেশি ছিল না। তাই ঝোপ কেটে, নালা বড় করার পর শাবকটিকে তোলা হয়। ওই কাজ করার সময়ও দু’বার মা হাতিটি শুঁড় দিয়ে তোলার চেষ্টা করে। এর ফলে উদ্ধারকাজ করতে সমস্যায় পড়েন বনকর্মীরা। তাঁরা মা হাতিটিকে ওই এলাকা থেকে সরানোর ব্যবস্থা করেন। বনকর্মীরা জানাচ্ছেন, বাচ্চাকে ছেড়ে যেতে চায়নি মা। কিছু দূরে দাঁড়িয়ে থেকে শাবককে উদ্ধারের কাজ দেখছিল মা হাতিটি। কাকভোরে উদ্ধার হওয়ার পর শাবককে সঙ্গে নিয়ে এলাকা ছাড়ে সে।
বন দফতর জানাচ্ছে, ওই দলটিতে মোট ২২টি হাতি আছে। তারা ঝটিয়া এবং কুমারীর জঙ্গলের দিকে ছড়িয়ে রয়েছে। এক বনকর্মীর কথায়, ‘‘ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ হস্তীশাবকটিকে উদ্ধারের পর মা হাতিটি তাকে আদর করে কাছে টেনে নেয়। তার পরেই রেললাইন ধরে তারা কুমারীর জঙ্গলের দিকে চলে যায়।’’ ডিএফও (খড়গপুর) শিবানন্দ রাম বলেন, ‘‘কুয়োতে ২ বছর বয়সি একটি হাতির বাচ্চা পড়ে গিয়েছিল। ৫ ঘণ্টার চেষ্টায় ওকে উদ্ধার করা হয়েছে।’’