শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, ভোটারদের প্রভাবিত করতেই রাতে এই ভাবে পাট্টা দেওয়ার আবেদন নিচ্ছে ভূমি সংস্কার দফতর। নিজস্ব ছবি।
রাতে ভূমি সংস্কার দফতরের (বিএলআরও) সামনে লম্বা লাইন। মানুষের হুড়োহুড়ি। কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, জমির পাট্টা বিলি সংক্রান্ত কাজ চলছে সেখানে। কিন্তু এই ভাবে রাতের অন্ধকারে কেন? এই প্রশ্নে বিতর্ক দানা বেঁধেছে পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর-২ ব্লকে। বিএলআরও দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন বিজেপি কর্মীরা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও বিষয়টি নিয়ে টুইট করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ভোটারদের প্রভাবিত করতেই রাতে এই ভাবে পাট্টা দেওয়ার আবেদন নিচ্ছে ভূমি সংস্কার দফতর। ঘটনাচক্রে, বিএলআরও দফতরের সামনে বিক্ষোভে শামিল হয়েছে তৃণমূলের একাংশও। কার নির্দেশে রাতে এই ভাবে কাজ চলছে বিএলআরও দফতরে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তারা।
যদিও সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে ভূমি সংস্কার দফতর। এগরা-২ ব্লকের বিডিও কৌশিক রায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় এগরা-২ ব্লকের ২৫০ জনকে পাট্টা দেওয়া হবে। তার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করতেই গ্রামবাসীদের ডাকা হয়েছে।’’ বিষয়টি নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে বলে দাবি করে বিডিওর স্পষ্ট বক্তব্য, রাতে দফতর খুলে কাজের জন্য কোনও লিখিত নির্দেশের প্রয়োজন নেই।
বালিঘাইয়ে বিএলআরও দফতরে ‘বেআইনি’ ভাবে পাট্টা বিলি করা হচ্ছে বলে বিক্ষোভ দেখান বহু মানুষ। অভিযোগ, কার জমি কে পাচ্ছেন, যিনি পাচ্ছেন তিনি আদৌ ভূমিহীন কি না, সেই সব যাচাই না করেই পাট্টা বিলি করা হচ্ছে। বিক্ষোভের সময় সেখানে ছিলেন বিজেপির জেলার নেতার তন্ময় হাজরা। বিএলআরও দফতরের সামনে থিকথিকে ভিড়ের ভিডিয়ো টুইটারে পোস্ট করে শুভেন্দুর অভিযোগ, ‘‘কবরস্থান, শ্মশান, বনাঞ্চল, আদিবাসীদের জমি, চা বাগানের জমিকে অবৈধ ভাবে পাট্টা হিসাবে দেওয়া হচ্ছে রাজ্য জুড়ে। পটাশপুরের ঘটনা তারই প্রমাণ।’’ এক জনের জমি অন্যের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিরোধী দলনেতার কটাক্ষ, ‘‘এত গোপনীয়তা কিসের?’’
ভূমি সংস্কার দফতরের সামনে বিজেপির সঙ্গে বিক্ষোভ দেখিয়েছে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একাংশও। সেখানে ছিলেন স্থানীয় বিবেকানন্দ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান রাজনারায়ণ মান্না। বর্তমানে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য রাজনারায়ণেরও অভিযোগ, ‘‘রবিবার অফিস খুলে রাতের অন্ধকারে পাট্টা দেওয়ার কাজ হচ্ছে। বহু মানুষ এই অবৈধ কারবারের বিরুদ্ধে আমাকে বার বার ফোন করছেন। কার জমি কাকে দেওয়া হচ্ছে, কোন জমি পাট্টা দেওয়া হচ্ছে, তা জানতে রাতেই বিএলআরও অফিসে গিয়েছিলাম। রবিবার অফিস খুলে কাজ করার কোনও অর্ডার কপি দেখাতে পারেননি দফতরের কেউ। কিছু লোক তাদের ইচ্ছেমতো কাজ করে যাচ্ছেন। আমি একজন জনপ্রতিনিধি। তা সত্ত্বেও পাট্টা বিলি নিয়ে আমাকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে দেওয়া হয়েছে। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’
বিডিও জানিয়েছেন, বহু মানুষকে পাট্টা দেওয়ার বিষয় রয়েছে। তাই, ছুটির দিনেও দিনরাত এক করে কাজ চলছে। কৌশিকের কথায়, ‘‘এতগুলো মানুষকে পাট্টা দেওয়া কি মুখের কথা?’’