খড়্গপুর আইআইটি-র সমাবর্তনে কৃতীদের পুরস্কৃত করছেন রাষ্ট্রপতি দৌপ্রদী মুর্মু। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
ওড়িশার প্রত্যন্ত বাইদাপোসি গ্রাম থেকে রাইসিনা হিলস। জনজাতি পরিবারের এই কন্যা দেশের সর্বকনিষ্ঠ মহিলা রাষ্ট্রপতি। নারীর ক্ষমতায়নে এ বার তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মেয়েদের অধিক অংশগ্রহণে উৎসাহ জোগালেন। একই সঙ্গে দেশের সবচেয়ে পুরনো আইআইটিতে দাঁড়িয়ে তাঁর গলায় ধরা পড়ল আক্ষেপও। দেশের কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বিশ্বের শীর্ষ পঞ্চাশে না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
খড়্গপুর আইআইটির ৬৯তম সমাবর্তনে যোগ দিতে দেশের ১৫তম রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী সোমবার এসেছিলেন প্রতিষ্ঠানে। তবে কথা থাকলেও আসতে পারেননি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজ্য সরকারের তরফে মঞ্চে রাষ্ট্রপতির পাশে ছিলেন মানস ভুঁইয়া, আইআইটি-র ডিরেক্টর বীরেন্দ্রকুমার তিওয়ারি, পরিচালন বোর্ডের চেয়ারম্যান টিভি নরেন্দ্রন প্রমুখ। এ বার স্নাতক, স্নাতকোত্তর, গবেষক-সহ ৩২০৫জন উত্তীর্ণ পড়ুয়ার হাতে ডিগ্রি তুলে দেওয়া হয় সমাবর্তনে। ১৩জন পড়ুয়াকে সম্মানিক করা হয় স্বর্ণপদকে। তাঁদের মধ্যে ৩জন ছাত্রী।
সব মিলিয়ে এ দিন ডিগ্রিপ্রাপ্তদের মধ্যে ৬৭৪জন ছাত্রী ছিলেন। সেই মঞ্চেই রাষ্ট্রপতি বলেন, “আজকে ডিগ্রি প্রাপ্ত ৩২০৫জন ছাত্র-ছাত্রীকে তাঁদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য অভিনন্দন জানাই। আমি জানতে পেরেছি আজ ডিগ্রি প্রাপ্তদের মধ্যে ২১শতাংশ ছাত্রী। তাঁদের বিশেষ শুভেচ্ছা জানাই। আমি বিশ্বাস করি একটি সুস্থ ও শক্তিশালী সমাজের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নারীদের অধিকতর অংশগ্রহণ আবশ্যক।” একই সঙ্গে ২০৪৭ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তির লক্ষ্যে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের পড়ুয়াদের অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার বার্তা দেন তিনি। রাষ্ট্রপতির কথায়, “আইআইটি ৭৩বছরের যাত্রাপথে অনেক অনন্য প্রতিভার জন্ম দিয়েছে। দেশের উন্নয়নে আপনাদের অবদান তুলনাহীন। আপনাদের যোগ্যতা, দক্ষতা এবং অবদানের প্রশংসা করার পাশাপাশি আমি আশা করি আপনারা সারা দেশের নতুন প্রতিষ্ঠানকে দিশা দেখাবেন।” কৃতী পড়ুয়াদের মানবতার স্বার্থে কাজ করার আহ্বানও জানান রাষ্ট্রপতি।
তবে উদ্বেগও ধরা পড়েছে রাষ্ট্রপতির গলায়। আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে ২৭১তম স্থানে থাকা খড়্গপুর আইআইটির মঞ্চে তিনি বলেন, “এটা উদ্বেগের বিষয় যে বিশ্বের প্রাচীনতম জ্ঞান ঐতিহ্যের এমন একটি বিশাল দেশের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বিশ্বের শীর্ষ ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নেই। র্যাঙ্কিংয়ের দৌড় ভাল শিক্ষার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু ভাল র্যাঙ্কিং শুধু সারা বিশ্বের শিক্ষার্থী এবং ভাল শিক্ষকদেরই আকর্ষণ করে না, বরং দেশের সম্মানও বাড়ায়। আমি চাই দেশের সবচেয়ে পুরনো এই আইআইটি সেই চেষ্টা করুক।”
এ দিন স্বাগত বক্তৃতায় আইআইটি খড়্গপুরের ডিরেক্টর বীরেন্দ্রকুমার তিওয়ারি জানান, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত ১০০শয্যার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল আগামী জানুয়ারির মধ্যেই চালু হবে। দু’বছর হল এখানে বহির্বিভাগ চালু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “আমরা বুঝতে পারছি আমাদের স্নাতক পড়ুয়ারা আগামী ২০-৩০বছর পর্যন্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর কাজ করবে। আমরা তাই ২০২০সালে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম পড়ুয়ারা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলেই এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটা কোর্স করাব। আমরা এ বার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর বিটেক চালু করতে চলেছি।”