বেচাকেনা: আলু বিক্রি হচ্ছে ঘাটালের কুঠি বাজারে। নিজস্ব চিত্র
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বারবার বলছেন, বাজারে ২৫ টাকা কিলো দরেই বিক্রি করতে হবে আলু। শহর থেকে গ্রাম— বাজারের ছবি অবশ্য উল্টো কথাই বলছে। ঘাটাল-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের যে সব এলাকায় আলু উৎপাদন হয়, সেখানেও ৩০-৩৪ টাকা দরে বিকোচ্ছে আলু। অর্থাৎ সরকারি দামের তুলনায় ৮-১০ টাকা বেশি।
জেলায় প্রতি বছর ৭০-৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। গত বছর পশ্চিম মেদিনীপুরে ৭১ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। তবে আবহাওয়া-সহ নানা কারণে আলু উৎপাদন ব্যাহত হয়। কৃষি বিপণন দফতর জানাচ্ছে, গড়ে জেলায় আলু উৎপাদন হয় ২০-২২ লক্ষ টন। এ বার অবশ্য ফলন কম হয়েছে— ১৬ লক্ষ টন। উৎপাদিত আলু হিমঘরে মজুত থাকে। জেলার হিমঘরগুলিতে এ বার মোট ২ কোটি ৫০ লক্ষ প্যাকেট আলু মজুত ছিল। ৩১ অগস্ট পর্যন্ত ১ কোটি ৩৮ লক্ষ প্যাকেট আলু হিমঘর থেকে বেরিয়েছে। এখনও ১ কোটি ১২ লক্ষ প্যাকেট আলু মজুত রয়েছে।
ফলন কম হলেও মজুত আলুর পরিমাণ যথেষ্টই। ফলে ক্রেতাদের প্রশ্ন, তা-ও কেন বাজারে আলুর দাম এত চড়া?
ব্যবসায়ীদের ব্যাখ্যা, নতুন আলু উঠতে এখনও তিন-চার মাস বাকি। মজুত আলুও ফুরিয়ে আসছে। এখন পাইকারি আলুর দর যাচ্ছে ২৫ টাকা কিলো। হিমঘর থেকে ওই দামে আলু কেনার পরে যোগ হচ্ছে পরিবহণ খরচ। তার উপর বাজারে আসার আগে আলুও দু’-চার হাত ঘুরেই যায়। ফলে, ২৫ টাকা কিলো দরে আলু ক্রেতাকে কখনওই দেওয়া সম্ভব নয়। ব্যবসায়ীদের আরও ব্যাখ্যা, জেলায় কত পরিমাণ আলু মজুত থাকল, তার উপরে দাম নিয়ন্ত্রণ করে না। জেলা, রাজ্য ছাড়িয়ে পড়শি রাজ্যের বাজারে চাহিদা ও জোগানের উপরই আলুর দাম ওঠা-নামা করে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বরুণ পণ্ডিতের কথায়, “আলুর চাহিদা আছে। জোগান নেই। তাই দামও বাড়ছে। এটা তো কারও হাতে থাকে না। পরিস্থিতি অনুযায়ী দাম ওঠানামা করে।”
তবে আলুর চড়া দামের ক্ষেত্রে প্রশাসনের কড়া নজরদারির অভাবের কথা বলছেন অনেকেই। কলকাতা-সহ কয়েকটি জেলার বাজারে অভিযান শুরু হলেও পশ্চিম মেদিনীপুরে এমন উদ্যোগ এখনও চোখে পড়েনি। আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে কৃষি বিপণন দফতর-সহ প্রশাসনের ভ্রুক্ষেপ নেই বলেই অভিযোগ। জেলাশাসক রশ্মি কমলের অবশ্য আশ্বাস, “জেলায় টাস্ক ফোর্সের জরুরি বৈঠক হবে। সেখানেই দাম নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হবে।”
আলু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অনেকেই জানাচ্ছেন, এ বার প্রথম থেকেই আলুর দর ছিল ঊর্ধ্বমুখী। দাম নিয়ন্ত্রণেও প্রশাসন ততটা সচেষ্ট ছিল না। মাঠের আলু তোলার সময় কুইন্টাল প্রতি দাম ছিল এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা, যা সাম্প্রতিক কালে রেকর্ড। এখন সেই আলুর পাইকারি দর ২৫০০ টাকা কুইন্টালে এসে দাঁড়িয়েছে। হিমঘর থেকে বেরনোর পরে কয়েক হাত ঘুরে তা বাজারে যখন আসছে, কিলো প্রতি ৮-১০ টাকা দাম বেড়ে যাচ্ছে। বুধ-বৃহস্পতিবারও ঘাটাল-সহ জেলার প্রধান বাজারগুলিতে প্রতি কিলো আলুর দাম ছিল ৩৪-৩৫ টাকা।
তবে আলু কিনতে মধ্যবিত্তের যতই হাত পুড়ুক, চাষি কিন্তু দাম পাচ্ছেন না। তাঁরা আলু বেচেছেন ১২০০ টাকা কুইন্টালে অর্থাৎ কেজি প্রতি ১২ টাকায়।