দেবের ভাইকে তৃণমূলের ত্রাণ। নিজস্ব চিত্র
নিজের কাকার ছেলে তৃণমূলের তারকা সাংসদ। তবে কেশপুরের মহিষদার বাসিন্দা বিক্রম অধিকারীর বাড়িতে আগে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছলেন সিপিএম কর্মীরা। ২৪ ঘণ্টা পরে এল তৃণমূলের ত্রাণও।
ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দেবের মেজো জেঠু প্রয়াত বিষ্ণুপদ অধিকারীর ছেলে বিক্রম পেশায় বেসরকারি বাসের খালাসি। লকডাউনে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাই রোজগারও বন্ধ। অসহায় এই পরিবারটির কাছে শনিবার ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছনো হয়েছে সিপিএমের উদ্যোগে। বিক্রম বলেন, ‘‘আমরা দিন আনি, দিন খাই মানুষ। খুব কষ্টে রয়েছি। শনিবার সিপিএম কর্মীদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ওঁরা জানতে চাওয়ায় সমস্যার কথা জানিয়েছিলাম। পরে সিপিএমের ওই কর্মীরা বাড়িতে এসে চাল, ডাল, আটা, আলু দিয়ে গিয়েছেন।’’ পরে বিষয়টি জানতে পেরে রবিবার বিক্রমদের উঠোনে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়ে গিয়েছেন তৃণমূল কর্মীরাও। বিক্রম জানিয়েছেম, তাঁরা সক্রিয় ভাবে কোনও দলই করেন না।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, ‘‘বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়াটাই তো আসল। ওই পরিবারটি সমস্যায় ছিল। জানতে পেরে দলের কর্মীরা ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন। আগামী দিনেও সাহায্য করবেন।’’ তৃণমূলের দাবি, করোনার সময়েও সিপিএম রাজনীতি করছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘কেউই অভুক্ত নেই। সিপিএম সেই বস্তাপচা রাজনীতি করছে। লাভ হবে না।’’
এ দিন ফোনে দেব বলেন, ‘‘প্রথমেই সিপিএমকে ধন্যবাদ জানাব, বিষয়টিকে সামনে আনার জন্য। কাল রাতেই সিপিএমের তরফে ত্রাণ দেওয়ার ভিডিয়োটা আমার কাছে এসেছিল। আমি সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দলের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওঁরা জানান, কোথাও একটা ভুল হয়ে গিয়েছে। দ্রুত বিক্রমদের কাছে ত্রাণ পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হবে। সেই মতো এ দিন সকালেই ত্রাণ দিয়ে আসা হয়েছে।’’ দেব আরও জুড়ছেন, ‘‘এটা হয়তো সত্যি, আমরা প্রতিটা বাড়িতে পৌঁছতে পারছি না। সেখানে কোনও রাজনৈতিক দল যদি এগিয়ে এসে, কোনও পরিবারের পাশে দাঁড়ায়— সেটা তো ভাল। তবে কাউকে ত্রাণ দিচ্ছেন বলেই, তাঁরা বাবা বা দাদার নাম কী, বা সেই মানুষটির ব্যক্তিগত পরিচয় কী— সেটা নিয়ে চর্চা করার অর্থ হয় না। তাহলে রাজনীতি হয়ে যায়। আর সেই মানুষটাকেও ছোট করা হয়। আমি এই রাজনীতির বিরোধী।’’
ছোটবেলাটা মহিষদাতেই কেটেছে দেবের। এখনও কেশপুরে এলে দেশের বাড়িতে আসেন তারকা-সাংসদ। বিক্রম বয়সে দেবের থেকে ছোট। এক সময় দিনমজুরি করতেন। পরে বেসরকারি বাসের খালাসির কাজ নেন। গোড়া থেকেই পরিবারটি অভাবী। এখন বাড়িতে বিক্রমের বয়স্ক মা রয়েছেন, রয়েছেন স্ত্রী, ছেলেমেয়েও। বিক্রমদের নতুন রেশন কার্ডও হয়নি। বিক্রমের বয়স্ক মা বার্ধক্য ভাতাও পান না।
লকডাউনে কেউ যাতে অভুক্ত না থাকেন, সে জন্য রেশনে পাঁচ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। নতুন রেশন কার্ড না থাকায় সে চালও পায়নি পরিবারটি। বিক্রম বলছিলেন, ‘‘রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করেছি। কার্ড পাইনি। তাই রেশনও পাইনি।’’ এ দিন বিকেলে কেশপুরের বিডিও দীপক ঘোষ ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি দেখছি।’’ ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, ওঁরা নতুন রেশন কার্ডের আবেদনই করেননি। দেব এ দিন বলেন, ‘‘যাঁরা ওখানে কাজ করছেন, তাঁদের বারবার বলেছি শুধু আমার পরিবার বলে নয়, ওখানকার প্রতিটি মানুষই আমার পরিবারের সদস্য। ওঁদের নিয়মিত খোঁজ নিতে হবে। যাঁদের রেশন কার্ড নেই, তাঁরা কীভাবে ত্রাণ পাবেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’’