চেক দিচ্ছেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। নন্দীগ্রাম-২ ব্লক অফিসে। নিজস্ব চিত্র kamilasuvendu21@gmail.com
পথ দুর্ঘটনায় দিন’দুয়েক আগে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। আহত হয়েছেন অন্তত ২৩ জন। ওই মৃত্যু এবং আহতদের নিয়ে নন্দীগ্রামে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে বলে দাবি। দুর্ঘটনার পরেই ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। তার পরে কখনও আহতের কাছে হাজির হয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্র, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী, তো কখনও ক্ষতিপূরণ দিতে শুক্রবার দুপুরে হাজির হয়েছেন খোদ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, আর বিকালে পৌঁছেছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
এসব যা দেখে জেলা রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং দুর্ঘটনাস্থল নন্দীগ্রাম বলেই কি এবার এত তৎপরত! তারা জানতে চায়, জেলায় অন্য দুর্ঘটনায় মৃতের পরিবারের পাশে এ ভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দেখা যায় না কেন?
গত ১০ মে নন্দীগ্রামে ঠাকুরচকে নন্দীগ্রাম-চণ্ডীপুর সড়কে বাস-ট্রেকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে দু’ জনের মৃত্যু হয়।ওই ঘটনার ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই এ দিন মৃত ব্যক্তির পরিবারের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি মোট ৩৯ জনকে হাতে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে দেন। মৃতের পরিবারের সদস্যদের আড়াই লক্ষ টাকা করে চেক তুলে দেন মন্ত্রী ফিরহাদ। আর ১১ জন গুরুতর আহতদের হাতে ৫০ হাজার টাকা এবং অপেক্ষাকৃত কম আহতদের হাতে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ওই সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্র, জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি, হলদিয়ার মহকুমাশাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায়, নন্দীগ্রাম-২ এর বিডিও অখিলেশ সাহা। উল্লেখ্য, তমলুক হাসপাতালে আহতদের দেখতে দুর্ঘটনার রাতেই গিয়েছিলেন সৌমেন।
তৃণমূল নেতৃত্ব ফিরে যাওয়ার পরে বিকালে নন্দীগ্রামে হরিপুরে এক মৃত যুবকের বাড়িতে যান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। বিজেপি সূত্রের খবর, মৃতের পরিবারকে তিন লক্ষ টাকা সাহায্য করেছেন স্থানীয় বিধায়ক। পাশাপাশি, পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলেন, "বিধায়ক মৃত পরিবারকে তিন লক্ষ টাকা সাহায্য করেছেন। ’’
এভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের শুধু এই দুর্ঘটনার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ ঘিরে প্রশ্ন করছে রাজনৈতক মহল। তারা মনে করাচ্ছে, জেলার দিঘা-নন্দকুমার ১১৬ বি জাতীয় সড়কে হামেশাই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। গত ২৫ এপ্রিলও মারিশদায় আলু বোঝাই লরির সঙ্গে ঢালাই মেশিন বোঝাই লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে লরি চালকের মৃত্যু হয়েছে। তখন কেন ক্ষতিপূরণ দিতে এত তৎপরতা দেখা যায়নি? রাজনৈতিক মহলদের একাংশের অভিমত, সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং জায়গাটি নন্দীগ্রাম বলেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ে বিভিন্ন নেতাদের এভাবে পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য পরিতোষ পট্টনায়েক বলছেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। মৃতের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাক, এটাতে আপত্তি থাকা উচিত নয়। কিন্তু এই মৃত্যু নিয়ে যাতে রাজনীতি না হয়, সেটাও দেখা উচিত।’’ যদিও তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সব সময় মানবিক। আহতদের পাশে থাকেন।’’