বাজারে ডাঁই করে রাখা হয়েছে পাইপ। নিজস্ব চিত্র
কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া কৃষি বিল নিয়ে শোরগোল পড়েছে গোটা দেশে। বিলটি কৃষক স্বার্থের পরিপন্থী দাবি করে রাস্তায় নেমেছেন প্রায় সব বিজেপি বিরোধী দলগুলি। এ রাজ্যও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু রাজ্য সরকার যখন কেন্দ্রের কৃষি বিল নিয়ে প্রতিবাদ করছে, তখন জেলায় রাজ্য সরকারের তৈরি কৃষক বাজার কার্যত পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। কৃষি পণ্য লেনদেনের বদলে নন্দীগ্রামের বাজারটি বর্তমানে পাইপের গুদাম ঘরে পরিণত হয়েছে।
নন্দীগ্রাম-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নন্দীগ্রাম-চণ্ডীপুর সড়কের পাশে হরিপুরে ২০১৭ সালে একটি কৃষক বাজার বানিয়ে ছিল রাজ্য সরকার। ওই বাজার ঘিরে কৃষকদের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল বিস্তর। বলা হয়েছিল, যেহেতু কৃষিকাজ নন্দীগ্রামের মানুষের মূল পেশা এবং বছরভর প্রচুর পরিমাণে ধান, আনাজ নন্দীগ্রামে উৎপন্ন হয়, তাই কৃষকদের সুবিধা দিতে ওই বাজার বানানো হচ্ছে। ওই বাজারে নিজেদের উৎপাদিত ফসল সহজে বিক্রি করতে পারবেন কৃষকেরা। এর ফলে ফড়েদের উৎপাত কমবে।
কিন্তু কৃষক বাজার চালুর পর প্রায় বছর চারেক কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত কৃষকদের কাছে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করা যায়নি। প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া ওই বাজারে বর্তমানে জলের পাইপের মজুত করে রাখা হয়েছে। নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতি এই কৃষক বাজার দেখভালের দায়িত্বে ছিল। পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রের খবর, স্থানীয় কৃষকদের বাজারে দোকান নেওয়ার জন্য আবেদন করতে বললেও তাঁরা কোনও আগ্রহ দেখাননি। পরে কৃষকদের পঞ্চায়েত সমিতির তরফ থেকে এই একই আবেদন করা হয়। কিন্তু তাতেও সাড়া মেলেনি।
কিন্তু কৃষকদের এই অনাগ্রহের কারণ কী?
কৃষকেরা জানাচ্ছেন, কৃষক বাজারের ভৌগলিক অবস্থান এর জন্য দায়ী। বেশি গাড়ি ভাড়া এবং সময় নষ্ট করে ওই কৃষক বাজারে যেতে হয়। তাছাড়া মূল বাজারের আশেপাশে না হওয়ার জন্য ব্যবসায়ীরা তেমন ভিড় করেন না। গ্রাহকও মেলে না। ফলে লাভ তেমন হয় না। স্থানীয় কৃষক বিজয় কুমার সাহু বলেন, ‘‘প্রথমে কৃষকদের এই কৃষক বাজার নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। কিন্তু বাজার তৈরি হওয়ার পর কৃষকেরা সেখানে যেতে চাননি। আসলে বাজারটা জমেনি। সেই জন্য কৃষকের পক্ষে ওখানে হঠাৎ করে গিয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব নয়।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে কৃষক বাজার চালু করার ব্যাপারে প্রশাসনও তেমন উদ্যোগী হয়নি। তাই এখনও হলদিয়াতে আনাজ বিক্রি করতে যেতে হয়। বর্তমান সরকার নন্দীগ্রামে কৃষকদের ভাল-মন্দের কথা ভাবেনি।’’
নন্দীগ্রাম-১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আবু তাহের বলছেন, ‘‘চালু হওয়ার পর মাস দুয়েক বাজার চলছিল। তারপর কৃষকেরা আগ্রহ হারান। তবে এখানে পানের আড়ৎ গড়ে তোলা যায় কি না সেই বিষয়টি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা হচ্ছে।’’ কিন্তু পরিকল্পনাহীনভাবে ওই জায়গায় কেন কৃষক বাজার গড়ে তোলা হল কেন, সে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। বিজেপির তমলুক জেলা সাংগঠনিক সহ-সভাপতি প্রলয় পাল বলেন, ‘‘পরিকল্পনা ছাড়াই যেখানে সেখানে নীল-সাদা ভবন বানাচ্ছে। কিন্তু সেই ভবনের কোনও ব্যবহার হচ্ছে না। আসলে নীল-সাদা রঙের বাড়ি দেখিয়ে কাটমানি খাওয়াটাই ওদের উদ্দেশ্য।’’