আমপানের তাণ্ডবে ফুলেফেঁপে উঠেছে সমুদ্র। —ফাইল চিত্র।
আমপানের দগদগে স্মৃতি এখনও টাটকা। তার মধ্যেই ঠিক এক বছরের মাথায় ধেয়ে আসছে আর এক ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। সেই সঙ্গে দিঘার উপকূলে ফিরেছে বিপর্যয়ের আতঙ্কও।
প্রতি দিনের চেনা ছবিটা হঠাৎই বদলে গিয়েছিল সে দিন। গত বছরের ২০ মে। প্রবল বৃষ্টি আর ঝড়ে চেনা সমুদ্রটার চেহারা হয়েছিল ভয়ানক। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে উপকূলের বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছিলেন ফ্লাড সেন্টারে। সেখান থেকেই আমপানের তাণ্ডব দেখে শিউরে উঠেছিলেন। আমফানের সেই ক্ষত ধীরে ধীরে কাটিয়ে চেনা ছন্দে ফিরছিলেন সকলেই। কিন্তু সে দিনের আতঙ্ক ফিরিয়ে আনল আয়লা, ফনি, বুলবুল, আমপানের মতোই ধেয়ে আসা ‘অতিথি’ ইয়াস।
সে দিনের কথা এখনও ভোলেননি দিঘার বাসিন্দা, সত্তর ছুঁইছুঁই শ্রীমন্ত দাস। স্মৃতির সুতোয় টান দিয়ে তিনি বললেন, ‘‘আমপানের মতো ঘূর্ণিঝড় জীবদ্দশায় দেখিনি। এর আগে আয়লা, ফনি, বুলবুল এসেছিল। তবে আমপানের তাণ্ডব সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে।’’ স্বগতোক্তির সুরেই শ্রীমন্ত বলছেন, ‘‘প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড় এখন রুটিন। উপকূল এলাকার বাসিন্দারাও ঝড়ের সঙ্গে যুঝতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। এ বার ইয়াস এলেও আমরা আবার বেঁচে উঠব।’’
আমপানে ভেঙে পড়া গাছ সরাচ্ছেন এনডিআরএফ কর্মীরা। — ফাইল চিত্র
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মৎস্যজীবী সংগঠনের সভাপতি দেবাশিস শ্যামল। তাঁর কথায়, ‘‘আমপানে সপরিবার বগুড়ান জালপাইয়ের একটি আইসিডিএস কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলাম। প্রবল ঝড়ে ঘরের ভেতরে হু হু করে জল ঢুকছিল। চোখের সামনে ঘরবাড়ি এবং গাছপালা ধ্বংস হতে দেখেছি। সে দিন উপড়ে পড়েছিল বিদ্যুতের বহু খুঁটি। খড়ের চালা, টালি বা অ্যাসবেস্টস উড়ে যাচ্ছিল কাগজের মতো।’’ শ্যামল আরও বলছেন, ‘‘সে দিন সারা রাত দু'চোখের পাতা এক করতে পারিনি। আবার ঝড় আসছে শুনছি। কী হবে কে জানে।’’ তবে এর সঙ্গে কিছুটা বিরক্তি মিশিয়েই দেবাশিস বলছেন, ‘‘আমপান থেকে প্রশাসনের শিক্ষা নেওয়া উচিত। ফ্লাডসেন্টার এবং আইসিডিএস কেন্দ্রগুলিতে অত্যন্ত নিম্নমানের পরিকাঠামো। ঝড়বৃষ্টির সময় সারা রাত জলে ভাসে এই জায়গাগুলি। যেখানে যাঁরা আশ্রয় নেন তাঁদের দুরবস্থায় পড়তে হয়। করোনার মধ্যে বহু মানুষকে গাদাগাদি করে এক জায়গায় রাখা হয়, তাই ভয়ে অনেকে সেখানে যেতে চান না।’’
আমপানের কথা মাথায় রেখেই রামনগরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি বলছেন, ‘‘আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হচ্ছে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য প্রাণহানি ঠেকানো। এ বার প্রতিটি গ্রামে কমিটি গড়ে দেওয়া হচ্ছে। শুকনো খাবারের বন্দোবস্ত রাখা হচ্ছে। ঝড় হলে জনজীবন দ্রুত স্বাভাবিক করার জন্য বিপর্যয় মোকাবিলা টিম তৈরি থাকছে। বিদ্যুৎ এবং জল সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। গাছ ভেঙে পড়লে সেগুলো কেটে সরিয়ে দেওয়াও লক্ষ্য। বিপর্যয় মোকাবিলা করতে প্রশাসন পুরোদস্তুর তৈরি।’’