সুন্দরবনের রায়দিঘি, কাকদ্বীপ, নামখানা, সাগর, পাথরপ্রতিমা, ক্যানিং এবং গোসাবা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে আমপান। —নিজস্ব চিত্র।
বছর ঘুরলেও আমপান (প্রকৃত উচ্চারণ উমপুন)-এর ধাক্কা সামলে উঠতে পারেননি। ফের আর এক ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর আতঙ্ক চেপে বসেছে সুন্দরবনবাসীর মনে। গত মে-তে আপমানের তাণ্ডবে তছনছ হয়ে গিয়েছিল সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা। ধসে পড়েছিল ভিটেমাটি। বাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢুকে বিঘের পর বিঘে ক্ষেতের ফসল ডুবে গিয়েছিল অথৈ জলে। তিলতিল করে ভিটেমাটি মেরামতের চেষ্টার বছর পার হয়েছে। ফের সব হারানোর ভয় তাড়া করছে সুন্দরবনের গোবিন্দ ছাটুয়া, সুনীল হাজরাদের।
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর সতর্কবার্তা শোনার পর শনিবার দুপুরে রায়দিঘির মৃদঙ্গভাঙা নদীর পাড়ে বসেছিলেন বছর ত্রিশের গোবিন্দ ছাটুয়া। স্থানীয় হরিণটানা বাজার এলাকার বাসিন্দা গোবিন্দ কলকাতার একটি দোকানে কাজ করতেন। কিন্তু লকডাউনে রোজগার হারিয়ে মাছ-কাঁকড়া ধরে সংসারে দু’মুঠো অন্ন জোগানোর চেষ্টা করছেন। ঘূর্ণিঝড় আসার পূর্বাভাসে চিন্তায় ঘুম উড়েছে তাঁর। দু’কামরার মাটির ঘরে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী-কে নিয়ে বাস। আমপানের তাণ্ডবে গত বছর ভেঙে পড়েছিল গোটা বাড়িটাই। নদী লাগোয়া জমিতে সব্জির চাষ করেছিলেন। আমপানে তা-ও কেড়ে নেয়। সেই থেকে সংসারে আর্থিক অনটন পিছু ছাড়ছে না। গোবিন্দ বলেন, “গত বছর সকলের আগে ফ্লাড সেন্টারে গিয়ে উঠেছিলাম। রাতে ঝড়ের তাণ্ডব বুঝতে পারি। সকালে বাড়ি ফিরে দেখি, সব শেষ। কোনও মতে বাড়িটুকু মেরামত করেছি। এ বার নতুন ঝড় আসছে। জানি না এ বার কী অবস্থা হবে!”
শুধুমাত্র রায়দিঘি নয়, সুন্দরবনের কাকদ্বীপ, নামখানা, সাগর, পাথরপ্রতিমা, ক্যানিং এবং গোসাবাতেও একই পরিস্থিতি। পাথরপ্রতিমার ব্রজবল্লভপুর ক্ষেত্রমোহনপুরের বাসিন্দা সুনীল হাজরা পেশায় ভ্যানচালক। নদীবাঁধের ধারেই ছিল তাঁর বাড়ি। আমপানের আগে তাঁরাও স্থানীয় স্কুলঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ঘূর্ণিঝড়ে বাঁধ ভেঙে নোনাজলে এলাকা প্লাবিত হওয়ায় তাঁর ছোট্ট মাটির ঘরটিও ভেঙে পড়ে৷ মাস চারেক আগে বহু কষ্টে ফের বাড়ি তৈরি করেছেন সুনীল। এ বারের ঘূর্ণিঝড়ে কী হবে, তা ভেবেই দিশেহারা সুনীল। তাঁর কথায়, “হাতে টাকা নেই। ব্যবসা বন্ধ। কোথাও যেতেও পারছি না। গত বার শুধু প্রাণে বেঁচেছিলাম। ঘরবাড়ি সব হারিয়েছি। নতুন করে ঘূর্ণিঝড় এলে সব শেষ হবে যাবে।”
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ নিয়ে সতর্কবার্তা ছাড়াও সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছেন পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
আমপানের তাণ্ডবে দেওয়াল চাপা পড়েছিলেন সাগরের ঘোড়ামারা দ্বীপের ফুলডুবির বাসিন্দা মলিনা বিবি। রাতভর সে ভাবে থাকার পর সকালে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। তাঁর কথায়, “ঝড় হল 'সর্বনাশা'।” নতুন ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনে আতঙ্কে-উৎকণ্ঠায় চোখের পাতা এক করতে পারছেন না। মলিনা বলেন, “স্বামী ভিন্ রাজ্যে। তিন সন্তানকে নিয়ে একাই বাড়িতে থাকি। গত বছর কোনও মতে প্রাণে বেঁচেছি। এ বার কী হবে বলতে পারছি না।”