দু’জেলাতেই ছড়িয়ে জাল। কীভাবে চলে ব্যবসা। খোঁজে আনন্দবাজার
Hooch

Hooch: নেই বিকল্প কাজ, তাই কি রমরমা

বছর ঘুরতেই ঘাটাল, দাসপুর ও চন্দ্রকোনার বিভিন্ন এলাকা জুড়ে চোলাই কারবার আগের মতই ফুলেফেঁপে উঠছে।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২২ ০৭:৫৪
Share:

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চোলাইয়ের কাঁচামাল পচানো হচ্ছে। ঘাটালে। নিজস্ব চিত্র।

এক বছরেই পাল্টে গিয়েছে চিত্রটা। চোলাই কারবার ফের উর্ধ্বগামী ঘাটালে। শুধু তাই নয়। ঘাটাল ছাড়িয়ে এখন চোলাই নৌকাপথে যাচ্ছে হাওড়া, হুগলি-তেও।

Advertisement

অথচ বছর খানেক আগে ঘাটাল থেকে চোলাই পুরোপুরি বন্ধ করতে সক্রিয় হয়েছিল প্রশাসন। মহকুমা প্রশাসন, পুলিশ এবং আবগারি দফতর একত্রিত হয়ে শুরু করেছিল অভিযান। চোলাই কারবারে জড়িতদের বিকল্প কর্মস্থানের কথা বলা হয়েছিল। পঞ্চায়েতগুলিকে নিয়ে টানা সচেতনতা মূলক শিবিরও হত। সেই সময় ঘাটালের চোলাই তৈরি ও বিক্রিতে অনেকটা দাঁড়ি পড়েছিল।

বছর ঘুরতেই ঘাটাল, দাসপুর ও চন্দ্রকোনার বিভিন্ন এলাকা জুড়ে চোলাই কারবার আগের মতই ফুলেফেঁপে উঠছে। তার সঙ্গে গত বছর যেখানে বন্ধ ছিল, সেখানেও নতুন করে চলছে চোলাই তৈরি। এতদিনে বিকল্প কর্মস্থানের দিশাও দেখাতে পারেনি প্রশাসন।

Advertisement

ঘাটাল-সহ গোটা মহকুমায় চোলাইয়ের রমরমা নতুন নয়। ঘাটাল-দাসপুরে অতীতে বিষমদ খেয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। চোলাই রুখতে ও সংসারের দরিদ্রতা দূর করতে ঘাটালে প্রথমে পথে নেমেছিলেন ভুক্তভোগী মহিলারা। ঘাটাল থেকেই শুরু প্রমিলা বাহিনীর সেই লড়াই। দীর্ঘ দু’দশকেও পরিস্থিতির এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। সম্প্রতি হাওড়ার বিষমদ-কাণ্ড সামনে আসতেই চোলাই নিয়ে তটস্থ প্রশাসন। পুলিশ ও আবগারি দফতর যৌথ অভিযানও চালাচ্ছে। ঠেক ভাঙা হচ্ছে। মামলা, গ্রেফতার সবই হচ্ছে। কিন্তু ঘাটালের হরিশপুর, মনসুকার মেটালা, বরকতিপুর, ঘোড়ুইঘাট, চড়কতলা-বাজার সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, পুরনো ছন্দেই চলছে চোলাইয়ের ঠেক। গত বছর হরিশপুরের বর পাড়া ও দোলই পাড়া-সহ ওই সব এলাকাগুলি থেকে চোলাই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন সেখানে দিব্যি চলছে ব্যবসা।

চোলাই তৈরি, প্লাস্টিকের ড্রামে মজুত করা হচ্ছে চোলাই। সেখান থেকেই পাচার হচ্ছে গ্রামে গঞ্জে, ভিন্ জেলাতেও। রূপনারায়ণ লাগোয়া হুগলি ও হাওড়ার বিভিন্ন এলাকা গুলিতেও নৌকা পথে পাচার হচ্ছে চোলাই ভর্তি ড্রাম।

ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, “চোলাই বন্ধ করে এত হইচই চলছে। কিন্তু পুলিশ ও আবগারি দফতরের গাড়ি গ্রাম ছাড়ার পরই কী করে ঠেকে ভিড় হয়? প্রকাশ্যে নৌকায় করে ড্রাম ভর্তি চোলাই পাচার হচ্ছে। অভিযানের কোথায় কী?” হরিশপুরের চোলাই কারবারের জড়িত মহিলাদের আবার প্রশ্ন, “গত বছর অভিযানের পর তো তিন মাস চোলাই তৈরি করিনি। প্রশাসন নিয়মেই বন্ধ করতে পারত। কিন্তু বিকল্প কর্মস্থংস্থান করে দিল না কেন।”

স্থানীয় মনোহরপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান গনেশ মান্না মানলেন, “হরিশপুরে এখনও তৈরি হচ্ছে। বন্ধ করতে পারা যায়নি। তবে পঞ্চায়েত থেকে কী ভাবে বিকল্প আয়ের পথ দেখানো সম্ভব। সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সবাই পাচ্ছে।” বিকল্প আয় প্রসঙ্গে মনসুকা ১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রাত্রি পণ্ডিত বলেন, “স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এতটুকুই করা গিয়েছে।” তাঁর সংযোজন, “পঞ্চায়েত থেকে সচেতনমূলক শিবির তো হচ্ছে। কিন্তু চোলাই বন্ধ হয়নি। এখন আবার বেশি করে চোলাই তৈরি হচ্ছে।”

ঘাটালের মহকুমা পুলিশ অফিসার অগ্নিশ্বর চৌধুরী বলেন, “আগের চেয়ে অনেক বন্ধ হয়েছে। গত কয়েক দিনে চোলাই ব্যবসায় জড়িত পঞ্চাশ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।মামলাও হয়েছে।” ঘাটালের আবগারি দফতরের এক আধিকারিক সিদ্ধার্থ মাহাত বলেন, “চোলাই বন্ধে অভিযান চলছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement