দড়ি দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে করোনায় আক্রাম্ত বিধায়ক সমরেশ দাসের বাড়ি। এগরায়। নিজস্ব চিত্র
অজানা জ্বরে মৃত্যু হল পাঁশকুড়া পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মঞ্জুরি বিবির (৫৪ )। করোনা আবহে এই ঘটনায় গোটা পাঁশকুড়া শহরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, মৃত্যুর দু’দিন আগে করোনা পরীক্ষার জন্য মঞ্জুরি বিবির লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। যদিও সেই রিপোর্ট এখনও এসে পৌঁছয়নি। তবে কাউন্সিলারের করোনা পরিক্ষার রিপোর্ট এখনও জানা না গেলেও ইতিমধ্যেই জেলায় এগরার বিধায়ক সমবেশ দাস করোনায় আক্রান্ত। তাঁকে পাঁশকুড়ার বড়মা হামৃত কাউন্সিলরের পরিবার সূত্রে খবর, দিন চারেক আগে জ্বরে আক্রান্ত হন মঞ্জুরি।সপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চিকিৎসার পাশাপাশি করোনা পরীক্ষার জন্য তাঁর পরিবারের লোকজন তিন দিন আগে পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যান লালারসের নমুনা দেওয়ার জন্য। শনিবার রাতে মঞ্জুরির শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় পরিবারের লোকজন তাঁকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হয় মঞ্জুরির। করোনা আবহে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে মৃত কাউন্সিলারের দেহ পরিবারের লোকজন সুরক্ষা বিধি মেনে রবিবার সকালে ভোগপুরে তাঁর গ্রামের বাড়িতে কবর দেন।
মঞ্জুরির স্বামী জইদুল ইসলাম খান তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের নেতা। জইদুলের ভাই সইদুল ইসলাম খান পাঁশকুড়ার উপ পুরপ্রধান। একই বাড়িতে থাকেন তাঁরা।অজানা জ্বরে পরিবারের এক সদস্যের মৃত্যু হওয়ায় এদিন বাকি সদস্যরা পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে এসে তাঁদের লালারসের নমুনা দেন করোনা পরীক্ষার জন্য। সইদুল বলেন, ‘‘আমরা সকলেই বৌদির করোনা পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি। আমার স্ত্রীও জ্বরে ভুগছেন। আজ বাড়ির সবাই করোনা পরীক্ষা করার জন্য লালারসের নমুনা দিয়েছি।’’
কাউন্সিলারের মৃত্যুর পর এদিন পাঁশকুড়া শহর জুড়ে পুলিশি কড়াকড়ি আরও বাড়ানো হয়।লকডাউন উপেক্ষা করে কাউকেই শহরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পাঁশকুড়া ব্লকের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য আধিকারিক শচীন্দ্রনাথ রজক বলেন, ‘‘মঞ্জুরি বিবির লালারসের নমুনা নেওয়া হয়েছিল।ওঁর রিপোর্ট এখনও আসেনি। তার আগেই উনি মারা গিয়েছেন বলে শুনেছি।’’
এ দিকে বিধায়কের করোনা আক্রান্তের খবরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে তাঁর এলাকায়। জরুরি কাজ ছাড়া ভুলেও সেই পথ মাড়াচ্ছেন না কেউ। আক্রান্ত বিধায়কের বাড়ির চারপাশ ঘিরে দেওয়া হয়েছে দড়ি দিয়ে। গোটা পরিবার এবং বাড়ির পরিচারিকারা রয়েছে নিভৃতবাসে। গত একমাস ধরে একাধিক দলীয় কর্মিসভা ও সাংগঠনিক সভা করেছেন বিধায়ক। অসুস্থ হওয়ার আগে ১৩ জুলাই এগরা-২ ব্লকের বালিঘাই বাজারে ‘বাংলার গর্ব মমতা’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন। সভায় একাধিক নেতা কর্মীর সংস্পর্শে সেছিলেন। ফলে তা নিয়েও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কর্মিসভা ও সাংগঠনিক বৈঠকে বিধায়কের সংস্পর্শে আসা নেতা কর্মীরা এখন নিভৃতবাসে রয়েছে।
শনিবার সকালে বিধায়ক সমরেশ দাস সহ তাঁর দুই ছেলে এবং গাড়ির চালকের করোনা পরীক্ষায় বিধায়কের রিপোর্ট পজ়িটিভ এলেও বাকিদের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। বিধায়কের পরিবারের লোকজনদের বাড়িতে আসা যাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ রয়েছে। সোমবার বিধায়কের গোটা পরিবারের লালা রসের নমুনা সংগ্রহ করবে স্বাস্থ্য দফতর। অভিযোগ উঠেছে, বিধায়ক করোনায় আক্রান্ত হলে পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে এলাকায় সেই অর্থে কোনও নজরদারির ব্যবস্থা নেই।