রামনবমী উপলক্ষে মেদিনীপুর শহরের রাস্তায় বাইক মিছিল। নিজস্ব চিত্র
মাথায় গেরুয়া ফেট্টি, হাতে গেরুয়া ধ্বজা, সঙ্গে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি- রামনবমীর চেনা ছবি ধরা পড়ছে এ বারও। পঞ্চায়েত ভোট সামনে। রামনবমী পালনে এ বার প্রস্তুতি তুঙ্গে গেরুয়া শিবিরের। সরাসরি বিজেপির নাম থাকছে না। তবে দিনটি পালনের নানা কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত থাকছেন দলেরই নেতাকর্মীরা। কৌশলী তৃণমূলও। রামনবমী পালনে নানা সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও যোগ দিচ্ছেন।
বিজেপির মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার মুখপাত্র অরূপ দাস বলেন, ‘‘দলের কর্মসূচি নেই। তবে বিভিন্ন সংগঠন, ক্লাব মেদিনীপুর-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় রামনবমী পালন করছে। সেই কর্মসূচিতে দলের কর্মীরা দিনটি অংশ নিচ্ছেন।’’ তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘‘রামনবমীতে দলের আলাদা কর্মসূচি নেই। তবে দলের কর্মীরা বিভিন্ন ক্লাব, সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ওই ক্লাব, সংগঠনগুলি প্রতি বছরের মতো এ বারও রামনবমী পালন করছে। দলের কর্মীরা তাতে শামিল হচ্ছেন।’’ রামনবমী পালন ঘিরে যেন মুখোমুখি চলে আসছে যুযুধান শিবির।
‘রামনবমী সমারোহ সমিতি’র উদ্যোগে মেদিনীপুরে ধুমধামে উৎসব হচ্ছে। বুধবার বাইক মিছিল হয়েছে। মিছিলে ভালই ভিড় হয়েছে। বিকেলে মেদিনীপুরের অরবিন্দনগরের মাঠ থেকে এই মিছিল শুরু হয়েছিল। শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করেছে মিছিল। ৩০ এবং ৩১ মার্চ, দু’দিন ধরে হবে রামের পুজোর বন্দোবস্ত করা হয়েছে। রামের মূর্তিতে পুজো হবে শহরের কেরানিতলায়। গেরুয়া শিবিরের অনেকেই মানেন, এই সমিতি ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ’ (আরএসএস) প্রভাবিত। সমিতির তরফে আশীর্বাদ ভৌমিক বলেন, ‘‘প্রতি বছরই আমরা রামনবমী পালন করি। এ বারও সমারোহ সমিতির ব্যবস্থাপনায় তিনদিনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’’ আশীর্বাদ বিজেপির যুবমোর্চার মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি। ১ এপ্রিল সুভাষ সঙ্ঘ ব্যায়ামাগারের শোভাযাত্রা রয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার বিকেলে মেদিনীপুরে রামনবমী উদযাপন কমিটির মিছিল রয়েছে। নেপথ্যে তৃণমূলের লোকেরা। পাল্টা শক্তি প্রদর্শন হবে, জল্পনা। তৃণমূল কাউন্সিলর ইন্দ্রজিৎ পানিগ্রাহী বলেন, "রামনবমী উপলক্ষে শোভাযাত্রা হবে।"
বৃহস্পতিবার চন্দ্রকোনা রোডে রামনবমী উদযাপন কমিটি বাইক মিছিল করবে। গড়বেতার কয়েকজন তৃণমূলকর্মী জানাচ্ছেন, তাঁরাও বাড়িতে ধ্বজা তুলবেন। রামনবমী উপলক্ষে জোর প্রস্তুতি চলছে ঘাটাল শহরেও। প্রতি বছরে ঘাটাল রামনবমী কমিটির পক্ষ থেকে ঘাটালের কলেজ মোড় থেকে বাইক মিছিল হয়। গোটা ঘাটাল শহর দাসপুর হয়ে ঘাটাল বিদ্যাসাগর স্কুল মাঠে বাইক মিছিল শেষ হয়। সকাল থেকেই বিদ্যাসাগর স্কুল মাঠে পুজো ও পথ চলতি সমস্ত মানুষকে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
খড়্গপুরের মতো মিশ্র সংস্কৃতির শহরে এ বারেও প্রতিবারের মতোই রামনবমী ঘিরে জাঁক দেখা যাচ্ছে। তবে শহরের বাইরে গ্রামীণ এলাকায় অন্য বার রামনবমী ঘিরে রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ দেখা যায় না। খড়্গপুর গ্রামীণের গোপালী, পাথরি এলাকায় আগামীকাল শোভাযাত্রায় শামিল হবে বিজেপির কর্মী সমর্থকরা। হবে লাঠিখেলাও। আবার খড়্গপুর-১ ব্লকের বড়কোলা এলাকা-সহ কয়েকটি এলাকায় শুরু হয়েছে রামনবমীর পুজো। যদিও এ বার এই ব্লকের মোহনপুরে বড় করে রামনবমীর আয়োজন করছে তৃণমূলের কর্মীরা। সবংয়ের মতো জেলার প্রত্যন্ত এলাকাতেও তৃণমূল রামনবমীর অনুষ্ঠানে যুক্ত হচ্ছে।
জঙ্গলমহলে রামনবমীর শোভাযাত্রায় থাকবে ধামসা, মাদলও। বৃহস্পতিবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও হিন্দু জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে ঝাড়গ্রাম শহরে পৃথক শোভাযাত্রা হবে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক মুকেশ প্রসাদ বলছেন, ‘‘অস্ত্র প্রদর্শন বা লাঠিখেলা, এ সব থাকবে না। তবে শোভাযাত্রায় ধামসা, মাদল, খোল বাজবে।’’ বেলপাহাড়ি, বাঁশপাহাড়ি এলাকায়ও শোভাযাত্রা হচ্ছে। জঙ্গলমহলে প্রভাব বাড়াচ্ছে সঙ্ঘ। এ বার রামনবমী উদযাপনে বাড়তি উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘দলীয়ভাবে কোনও শোভাযাত্রা হচ্ছে না। ব্যক্তিগতভাবে দলের কেউ আয়োজন করলে করতে পারেন।’’ জেলা বিজেপির সহ সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু বলেন, ‘‘রাজনৈতিকভাবে আমরা কোনও শোভাযাত্রা করছি না। বিভিন্ন এলাকায় রামনবমীর শোভাযাত্রাগুলিতে দলের লোকজন সাহায্য করবেন, শামিল হবেন।’’