সাংবাদিক বৈঠকে। নিজস্ব চিত্র
অনুগামীদের ‘নিজস্ব ভূবন’ গড়ার ডাকে সমর্থন জানিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। তার পরে মিলেছিল তৃণমূলের জেলা মুখপাত্রের পদ। এক মাস কাটেনি। এ বার ‘রেলওয়ে কলোনিবস্তি বাঁচাও কমিটি’ গড়ে আন্দোলনের ডাক দিলেন তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র দেবাশিস চৌধুরী। অবশ্য এমন সংগঠনে দলের অনুমোদন নেই বলেই জানিয়ে দিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি।
রবিবার খড়্গপুর শহরের বোগদায় সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র দেবাশিস চৌধুরী। সেখানেই শহরে রেলের বস্তিবাসীদের অধিকারের লড়াইয়ে এই কমিটি গড়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। ছিলেন তৃণমূলের শহর নেতা রবিশঙ্কর পাণ্ডে, ৩নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৈমুর আলি খান, প্রাক্তন কাউন্সিলর লতা আচার্য। তবে ছিলেন না শহরের বিধায়ক তথা জেলা কো-অর্ডিনেটর প্রদীপ সরকার-সহ রেলের ৮টি ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলরেরা। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া ‘রেলওয়ে কলোনিবস্তি বাঁচাও কমিটি’ নামে ওই ব্যানারের তলায় লেখা ছিল ‘খড়্গপুর তৃণমূল কংগ্রেস’। আগামী ২৬ অগস্ট এই কমিটির ডাকে বস্তিবাসীদের নিয়ে ডিআরএম অফিস ঘেরাওয়ের কর্মসূচির কথাও ঘোষণা করেন দেবাশিস। কিন্তু এই সংগঠন কি তৃণমূলের? দেবাশিস বলেন, “তৃণমূল সমর্থিত এই সংগঠন রেল বস্তিবাসীর অধিকার আদায়ের স্বার্থে গঠিত। কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি বিরোধী সিপিএম, সিপিআই-সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলকে আমরা এই সংগঠনে এসে লড়াইয়ের আহ্বান জানাচ্ছি।” অবশ্য বিষয়টি নিয়ে জেলা তৃণমূলের সভাপতি অজিত মাইতিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “খড়্গপুরে এমন কোনও সংগঠনের বিষয়ে আমি বিন্দুবিসর্গ জানি না। এমন কোনও সংগঠনের বিষয়ে দলের কোনও অনুমোদনও নেওয়া হয়নি।”
গত ২৬ জুলাই শহরে তৃণমূল কর্মীবৃন্দ নাম দিয়ে ‘নিজস্ব ভূবন’ সৃষ্টির একটি বিতর্কিত হোডিং ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল। এমনকি অনুগামীদের সমর্থন জানিয়ে দলের বিরুদ্ধে সরব হয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন দেবাশিস। অবশ্য এ বার নতুন সংগঠন তৈরির ঘটনায় নতুন করে বিতর্ক দেখা গেল তৃণমূলের অভ্যন্তরেই। রেলের এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর তথা ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটরেরা এ দিন বিধায়ক কার্যালয়ে এসে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের দাবি, রেলের ওয়ার্ডে দলের কো-অর্ডিনেটরদের অন্ধকারে রেখে এই সংগঠন করা হয়েছে। বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর প্রদীপ সরকার বলেন, “আমি দলের জেলা কো-অর্ডিনেট ও শহরের বিধায়ক হওয়া সত্ত্বেও আমাকে এই সংগঠন সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি। কারা এসব করছে জানা নেই। আমি জেলা নেতৃত্বকে জানাচ্ছি।”
বিতর্ক শুরু হয়েছে অন্য দলকে সংগঠনে আহ্বান ঘিরেও। এ দিন রবিশঙ্কর পাণ্ডে দাবি করেন, সিপিএম-সিপিআইয়ের মতো দলগুলির সঙ্গে ইতিমধ্যেই আলোচনা হয়েছে। যদিও সিপিআইয়ের জেলা নেতা বিপ্লব ভট্ট বলেন, “রেলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের নিজেদের সংগঠন রয়েছে।” আর সিপিএমের জেলা নেতা অনিতবরণ মণ্ডল বলেন, “আমাদের অবস্থান, বিজেপি ও তৃণমূলের থেকে সমদূরত্ব বজায় রাখা। তৃণমূলের এমন সংগঠনে তলায় আমরা যাব কেন? এসব ওঁদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে সৃষ্ট সংগঠন।” আবার তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর প্রদীপ বলেন, “বিধানসভা উপনির্বাচনের আগে রেলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের দলের শক্তি প্রমাণিত। আর রেলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সিপিএম, কংগ্রেসের মতো শহরে মৃত দলকে আহ্বান জানিয়ে অক্সিজেন দেওয়ার কোনও যুক্তিই নেই।”