প্রতীকী ছবি
গত রবিবার সেঞ্চুরি হয়েছিল। বুধবার হল ডবল সেঞ্চুরি! করোনা সংক্রমণের ‘স্ট্রাইক রেটে’ বাড়ছে ‘পালস্ রেট’।
পশ্চিম মেদিনীপুরে হু হু করে বাড়ছে করোনাভাইরাসের প্রকোপ! বুধবারই জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দু’শো ছাড়িয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৯০। এ দিন নতুন করে আরও ১৯ জন আক্রান্তের হদিস মিলেছে। দ্রুত গতিতে জেলায় সংক্রমণ বাড়ায় উদ্বেগও দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের অবশ্য দাবি, অহেতুক উদ্বেগের কিছু নেই। এখন সতর্ক এবং সচেতন থাকতে হবে। প্রশাসনের এক সূত্রের মতে, আক্রান্তদের বেশিরভাগই পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁরা মহারাষ্ট্র, দিল্লির মতো সংক্রমণ প্রবণ রাজ্য থেকে ফিরেছিলেন। জেলায় করোনা পরীক্ষার হার বেড়েছে। তাই আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে।
জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘জেলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, ‘‘কন্টেনমেন্ট জ়োনগুলিতে যে বিধিনিষেধ থাকার কথা তা রয়েছে। নজরদারিও চলছে।’’ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডলও বলেন, ‘‘উদ্বেগের কিছু নেই। সতর্ক থাকতে হবে।’’ যে ভাবে খুব কম সময়ের মধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুরে আক্রান্তের সংখ্যা দু’শোর গণ্ডি পেরিয়ে গেল তা অবশ্য অনেকের কাছেই উদ্বেগের ঠেকছে।
জেলা স্বাস্থ্যভবনের এক সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রথম করোনা আক্রান্তের হদিস মেলে মার্চের শেষে। পরিযায়ী সূত্রেই। জেলার প্রথম আক্রান্ত ছিলেন মুম্বই ফেরত এক পরিযায়ী শ্রমিক। পরে তাঁর বাবা এবং স্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ওই সূত্রে খবর, গত দু’- আড়াই সপ্তাহে অনেক পরিযায়ী শ্রমিক ভিন্ রাজ্য থেকে এ জেলায় ফিরেছেন। এরপরই আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বেড়েছে। জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধশতক থেকে শতকে পৌঁছতে সময় লেগেছে মোটে পাঁচ দিন! আর শতক থেকে দ্বি- শতকে পৌঁছতে সময় লেগেছে আরও কম, মাত্র তিন দিন! এই সময়ের মধ্যে প্রচুর সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক জেলায় ফেরাই এর অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন আধিকারিকেরা। সপ্তাহ দুয়েক আগে যাঁদের নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল, এখন তাঁদের রিপোর্ট আসছে।
বুধবার পর্যন্ত ভিন্ রাজ্যগুলি থেকে এ জেলায় ৬৭ হাজার জন ফিরেছেন বলে জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর। অধিকাংশই পরিযায়ী শ্রমিক। এঁদের অনেকে মহারাষ্ট্র, দিল্লি, গুজরাতের মতো সংক্রমণ- প্রবণ রাজ্য থেকে ফিরেছেন। এই সব শ্রমিকদের রাখার জন্য জেলায় প্রায় ১,৯০০ কোয়রান্টিন কেন্দ্র খুলতে হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এলাকার স্কুলগুলিকেই কোয়রান্টিন সেন্টার করা হয়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘‘করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও আক্রান্তদের সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাটাও কিন্তু কম নয়।’’ জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকও বলেন, ‘‘অনেকের করোনামুক্তি ঘটছে। এটা স্বস্তিরই।’’ তবে দেখা যাচ্ছে, ধারাবাহিকভাবে যে সব জেলায় উদ্বেগজনকভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, সেই তালিকায় রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরও।