—প্রতীকী চিত্র।
বাড়িতে অর্থাভাব। তাই সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে অন্যত্র ‘দান’ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য মেদিনীপুর শহর লাগোয়া ফুলপাহাড়ি এলাকায়। রবিবার ওই বাবা-মায়ের কাছে গিয়েছেন শিশু সুরক্ষা দফতরের কর্মীরা। যদিও প্রশাসনের জিজ্ঞাসাবাদে শিশুটির মা শিবানী সিংহের মন্তব্য, ‘‘মানুষ করতে পারব না। তাই বাচ্চাকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছি।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরের ফুলপাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা শিবানী সিংহ এবং অমর দাস। ওই দম্পতির সাতটি সন্তান রয়েছে। শিবানী অষ্টম সন্তানের জন্ম দেন গত ১৭ জানুয়ারি। দিন দুই ধরে শিশুর কান্নার শব্দ না পেয়ে সন্দেহ হয় প্রতিবেশীদের। তাঁরা ব্যাপারটা এক আশাকর্মীদের জানান। তার পরেই সামনে এসেছে এই শিশু হাতবদলের খবর। আশাকর্মী মৌসুমী দত্ত বলেন, ‘‘একটি অভিযোগ পেয়ে শনিবার শিবানীকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। প্রথমে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে পরে জানান, এক জনকে বাচ্চাটি দিয়ে দিয়েছেন। সেই ব্যক্তির ঠিকানা চাওয়া হলে দিতে চাননি। বলেন, ‘সোমবার দেব।’ তবে প্রতিবেশীদের অভিযোগ, বাচ্চাটিকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।’’ অন্য দিকে, স্থানীয় বাসিন্দা রবি দাস জানান, মাস দুয়েক আগে ফুলপাহাড়ি এলাকায় বাড়ি ভাড়া নেন অমর এবং তাঁর স্ত্রী শিবানী। অমর দিনমজুরের কাজ করেন। শিবানী পরিচারিকার কাজে যুক্ত।
যদিও শিশু বিক্রির অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন শিবানী নিজে। তিনি বলেন, ‘‘বাচ্চাকে ঠিকঠাক মানুষ করতে পারব না। তাই বাচ্চাকে পরিচিত এক দাদাকে দিয়েছি।’’ তিনি জানান, ওই ‘দাদা’ হুগলির আরামবাগে থাকেন। অভিযোগের কথা বলতেই ফুঁসে ওঠে শিবানী বলেন, ‘‘কেউ তো সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। যাতে পড়াশুনা করতে পারে সে জন্য বাচ্চাকে অন্যের কাছে দিয়েছি। আমি পরে দেখতে যাব ওকে।’’
যদিও এই ঘটনায় শোরগোল শুরু হয়েছে এলাকায়। শিশুটিকে উদ্ধার করতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, ‘‘এ ভাবে একটি বাচ্চাকে কেউ কাউকে দিতে পারেন না। তার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। আইন রয়েছে। তা মেনে বাচ্চা হস্তান্তর না হলে সেটা বেআইনি।’’ জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সন্দীপ দাস জানান, তাঁরা খবর পেয়ে এলাকায় একটি দল পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘গুড়িগুড়িপাল থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
শেষ পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, শিশুটিকে উদ্ধার করেছে শিশু সুরক্ষা দফতর। ডাক্তারি পরীক্ষার পর শিশুটিকে একটি সরকারি হোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।