ঝড়ে ভেঙে পড়েছে পানের খামার। নিজস্ব চিত্র।
পূর্বাভাস তেমন ছিল না। হঠাৎ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় হয়েছে অল্পবিস্তর ঝড় এবং বৃষ্টি। এতেই বিপত্তি। ঝোড়ো হাওয়ায় মন্দিরের উপরে থাকা মূর্তি ভেঙে মৃত্যু হল এক শিশুর। বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি হল ঘরবাড়ি এবং পান বরজেরও।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ভগবানপুর-২ ব্লকের পূর্বচক গ্রামে ভীম একাদশীতে কালী পুজো এবং গ্রামীণ মেলার সূচনা হয়েছিল মঙ্গলবার রাতে। এলাকায় ছিল আনন্দের আবহ। সন্ধ্যায় ওই এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। ওই সময় ভীম একাদশীর পুজোর বাতাসা হরির লুট করা হচ্ছিল। সেই বাতাসা কুড়োতে পাশের কালী মন্দিরের দাওয়ায় বছর দেড়কের শিশুকে বসিয়ে রেখেছিলেন এক মহিলা। সে সময় হঠাৎই ঝড়ের চোটে কালী মন্দিরের উপরের একটি সিংহ মূর্তি ভেঙে নীচে পড়ে যায়। আর সেই সিংহ মূর্তির ভাঙা অংশ ছিটকে এসে লাগে শিশুটির শরীরে। আঘাতে শিশুটি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, শিশুটি পূর্ব চক গ্রামেরই বাসিন্দা। তাকে স্থানীয় মুগবেড়িয়া চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেখানে চিকিৎসক শিশুটিতে মৃত ঘোষণা করেন।ওই কালী মন্দিরটি মাত্র ৩০ বছরের পুরনো। সেই মন্দিরের মূর্তি ভাঙায় হতবম্ভ তাঁরা। শিশুর মৃত্যুতে আনন্দ উৎসবের মুহূর্তে গোটা গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শতাব্দী প্রাচীন ওই গ্রামীণ মেলা।
জেলা কৃষি দফত সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তমলুক, ময়না, নন্দকুমার, পাঁশকুড়া সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ের সাথে হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। কোথাও কোথাও শিলা বৃষ্টিও হয়েছে। ওই দিন জেলায় গড়ে ১.১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে এর মধ্যে পাঁশকুড়া ব্লকে ৯.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দফতরের আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘আগামী শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় হালকা ঝড়-বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে। এ জন্য সব ব্লক প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’’
এদিকে, মঙ্গলবারের আচমকা ওই ঝড়বৃষ্টিতে ময়না ব্লকে প্রচুর পানের বরজ ভেঙে পড়েছে। ঘরবাড়ির ছাউনি উড়ে গিয়েছে। ময়না-২ পঞ্চায়েতের পূর্ব দক্ষিণ ময়না গ্রামে কয়েকটি পানের বরজ ও ঘরের ছাউনি উড়ে যায়। দু’’টি বিদ্যুতের খুঁটি উল্টে পড়ে যায়। গ্রামের পান চাষি বিশ্বনাথ বেরা ও তুষার প্রামাণিক বলেন, ‘‘আচমকা ঝড়-বৃষ্টির জেরে পান বরজ ভেঙে গিয়ে মাটিতে মিশে গিয়েছে। খুব সমস্যায় পড়লাম।’’ ওই গ্রাম এছাড়াও নৈছনপুর-১, ২ ও বাকচা এলাকায় বেশ কিছু পান বরজ ভেঙেছে। ময়না পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সন্দীপব্রত দাস বলছেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষিরা অফিসে অভিযোগ জানিয়েছেন। নন্দকুমার ব্লকের কিছু এলাকায় শিলাবৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।’’
যদিও ঝড়ের জেরে ধান চাষে তেমন ক্ষতি হয়নি বলে খবর। এ বিষয়ে ধান চাষিদের অভিযোগও আসেনি। বরং ওই বৃষ্টির জেরে বোরো ধান চাষে উপকার হয়েছে বলে দাবি। ঝড়ের দাপটে জেলা সদর তমলুক শহরে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের উপরে থাকা বাঁশের কাঠামো দিয়ে তৈরি একাধিক বিজ্ঞাপনের তোরণ ভেঙে পড়ে। এতে যানবাহন চলাচল ব্যহত হয়। পুলিশ গিয়ে সেগুলি সরিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে।