প্রতীকী ছবি।
করোনা থাবা বসিয়েছে বিশ্ব জুড়ে। লকডাউনে কাজ হারিয়েছেন সিংহভাগ পরিযায়ী শ্রমিক।কাজ না থাকায় হাতে নেই নগদ টাকা। ছেলেমেয়েদের মুখে হাসি ফোটাতে নতুন জামা কিনে দিতে অপারগ বাবা-মা। করোনা আবহে এ বার বেশিরভাগ পরিযায়ী শ্রমিকের কাছে পুজোর সুর বড়ই বিষাদের।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে দেশজুড়ে শুরু হয় লকডাউন। লকডাউনের গেরোয় ভিন্ রাজ্য থেকে কাজ হারিয়ে জেলায় ফিরে এসেছেন প্রায় ৭০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। আনলক প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর ৪০ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিক ফের ভিন্ রাজ্যে ফিরে গিয়েছেন কাজের থোঁজে। বাকি ৬০ শতাংশ কাজ হারিয়ে এখনও পড়ে রয়েছেন জেলায়। যেটুকু টাকা নিয়ে এসেছিলেন এই কয়েক মাসে তা দিয়েই কোনওরকমে সংসার টেনেছেন। পরিবারের ভাতের জোগাড় করেছেন। এখন সেটুকুও ফুরিয়েছে। এখানে ফিরে এখনও কাজের জোগাড় হয়নি অধিকাংশের। তাই পুজোয় নতুন জামাকাপড়ের গন্ধ এই মুহূর্তে তাঁদের পরিবারের কাছে নেহাতই বিলাসিতা পঞ্চমীতেও তাই মুখে হাসি নেই পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারগুলির মুখে।
মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে সোনার কাজ করতেন কোলাঘাটের বাঁকাডাঙার বাসিন্দা মানব নায়ক। লকডাউনে কাজ হারিয়ে বাড়ি ফেরার পর আর কাজ জোটেনি। হাতের টাকাও শেষ। পুজোয় তাই পরিবারের কারও কিছু কিনেও দিতে পারেননি মানব। বললেন, ‘‘জীবনে এই প্রথম পুজোয় কাউকে কিছু কিনে দিতে পারলাম না। খুব খারাপ লাগছে। ঠাকুর দেখতেও যাব না।’’ এগরার প্রতাপদিঘির বুদ্ধদেব সাউ-এর কথায়, ‘‘হায়দরাবাদে একটা হোটেলে কাজ করতাম। লকডাউনে ফিরে এসেছি। ওখানে বলছে কাজ নেই। রেশনে চাল পাই। তাতে দু’বেলার পেট ভরে। কিন্তু পুজোয় আনন্দ করার সামর্থ্য নেই। কাউকেই এ বার নতুন পোশাক দিতে পারিনি।’’ পটাশপুরের চিস্তিপুরের বাসিন্দা রঞ্জিত দাস মুম্বইতে হোটেলে কাজ করতেন। লকডাউনে বাড়ি ফিরে আর কাজে যাওয়া হয়নি। বাবা-মাকে এ বার পুজোয় জামাকাপড় কিনে দিতে পারেননি রঞ্জিত।
কাঁথি-১ ও ৩ ব্লকের প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক লকডাউনের শুরু থেকেই বাড়িতে। কেউ ব্যবসা করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। তবে অধিকাংশের কাজ নেই। অন্য বছর পুজোয় ভিন রাজ্য থেকে বাড়ি ফিরলে পরিবারের সকলের নতুন জামা-কাপড় হত। এ বছর সে সব তাঁদের পরিবারের কাছে স্বপ্ন হয়ে গিয়েছে।
পুজো কেটে যাওয়ার পর করোনা কাঁটা সরে ফিরবে কি কাজের সুদিন? আশায় পরিযায়ীরা।
(তথ্য: গোপাল পাত্র ও কেশব মান্না)