সেই পোস্টার। নিজস্ব চিত্র
ফের কি জঙ্গলমহলে সক্রিয় হচ্ছে মাওবাদীরা? শনিবার স্বাধীনতা দিবসে বেলপাহাড়ির ভুলাভেদা অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় মাওবাদীদের নামাঙ্কিত কিছু পোস্টার পাওয়ার পরে এমনই সন্দেহ পুলিশ মহলে।
স্বাধীনতা দিবসের সকালে টংভেদা, বাঁকশোল, চড়কপাহাড়ি এলাকায় একাধিক বাড়ির দেওয়ালে ও দরজায় সাদা কাগজে লাল কালিতে হাতে লেখা পোস্টারগুলি সাঁটানো দেখেন স্থানীয়রা। রাস্তার ধারে বাসের যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের দেওয়ালেও পোস্টার সাঁটানো ছিল। ১৫ অগস্ট ‘কালা দিবস’ পালনের ডাক দেওয়া পোস্টারগুলিতে ‘সিপিআই (মাওবাদী)’-র উল্লেখ ছিল। পরে বেলপাহাড়ি থানার পুলিশ পোস্টারগুলি বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়। জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র সুব্রত সাহার অভিযোগ, ‘‘জঙ্গলমহলের শান্তি ও উন্নয়নকে ব্যাহত করতে এ সব বিরোধীদের চক্রান্ত।’’ বিজেপি ও বামেরা অভিযোগ নস্যাৎ করেছে। আর জেলা পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌর বলেন, ‘‘কারা পোস্টার দিয়েছে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
রাজ্যে পালাবদলের পরে মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার বিক্ষিপ্তভাবে আগেও মিলেছে। তবে সেগুলি সত্যিই মাওবাদী সংগঠনের দেওয়া কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। তবে এ বারের পোস্টারে হিন্দি অক্ষরের মতো হাতের লেখার ধরন গোয়েন্দাদের ভাবাচ্ছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, শুক্রবার গভীর রাতে বাইকে কয়েকজন এসে পোস্টারগুলি সাঁটিয়ে দিয়ে চলে যায়।
জঙ্গলমহলের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এমন পোস্টার বিশেষ ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশও। কিছুদিন আগেই শাসকদলের জেলাস্তরের পদগুলিতে রদবদল হয়েছে। জেলা সভাপতি বিরবাহা সরেনকে সরিয়ে নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু হয়েছেন জেলা তৃণমূলের নতুন সভাপতি। বিরবাহা হয়েছেন জেলা চেয়ারম্যান। আর জেলফেরত জনসাধারণের কমিটির প্রাক্তন নেতা ছত্রধর মাহাতোকে তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়েছে। ছত্রধরকে নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই টানাপড়েন চলছে। তৃণমূলের একাংশের মতে, ছত্রধরের এই পরিবর্তন মানুষ ভাল চোখে নিচ্ছেন না। ছত্রধরের সঙ্গে পুরনো মাওবাদী-যোগ তুলে সরব হচ্ছে বিরোধীরাও। ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর টিমের রিপোর্টেও এলাকাবাসীর ক্ষোভ প্রশমনে নানা পদক্ষেপের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে জেলায় যুবশক্তির কর্মসূচি জোরদার করতে আসছেন যুব তৃণমূলের রাজ্য নেতা তথা অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী।
চিন্তা বাড়িয়েছে আদিবাসী সামাজিক সংগঠনের বিভাজনও। তৃণমূলের জেলা নেত্রী বিরবাহার স্বামী রবিন টুডু এবং তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর পারগানা মহলের নেতাদের মধ্যে চাপানউতোর চলছে। রবিনের বিরোধী গোষ্ঠীর নেতারা সাঁওতালি ভাষায় শিক্ষা ও অন্য দাবিতে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কুড়মিরাও বিধানসভা ভোটের আগে তাঁদের মাতৃভাষা কুড়মালি ও সারনা ধর্মের স্বীকৃতির দাবির পাশাপাশি কুড়মি জাতিকে উপজাতি তালিকাভুক্তির দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাশাপাশি, মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীদের লাগাতার দলহীন জনসংযোগে অস্বস্তি বেড়েছে তৃণমূলের। গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে মাওবাদীরা। গোয়েন্দা পুলিশের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘মাওবাদীরা সুকৌশলে ঝাড়খণ্ড সীমানায় সক্রিয় হচ্ছে। রাতের অন্ধকারে মাওবাদীদের লোকজন যাতায়াত শুরু করেছে বলেও খবর। মাওবাদী স্কোয়াডের এক নেত্রী বেলপাহাড়িতে দায়িত্ব পেয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে।’’