উঠে গিয়েছে পিচ। মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রাম রাস্তায়।—নিজস্ব চিত্র।
রাস্তাগুলির যেন কঙ্কালসার দশা! দু’দিকের ধার ভাঙা। পিচ উঠে গিয়েছে। পাথর বেরিয়ে গর্ত হয়ে গিয়েছে। চতুর্দিক খানাখন্দে ভরা। সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বহু গ্রামীণ রাস্তা। এরমধ্যে ৬১টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাকে দ্রুত সংস্কারের জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জেলার কতগুলি গ্রামীণ রাস্তার দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন তা জানতে চেয়ে রিপোর্ট তলব করেছিল রাজ্য। নির্দেশ মতো জেলা থেকে সম্প্রতি ওই রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। জেলাশাসক রশ্মি কমলের দফতর থেকে পাঠানো ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে, কোন কোন রাস্তাগুলির দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলা থেকে পাঠানো রিপোর্টে ওই ৬১টি রাস্তার উল্লেখ রয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ মানছেন, ‘‘বেশ কিছু রাস্তার সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে। ওই রাস্তাগুলির একটি তালিকাও তৈরি করা হয়েছে।’’ কেন সংস্কার কাজ হচ্ছে না? নির্মলের জবাব, ‘‘রাস্তা মেরামতের জন্য কেন্দ্র থেকে কোনও আর্থিক সাহায্য মেলেনি। তবে জেলাস্তরে আলোচনা হয়েছে। রাজ্য আর্থিক সহায়তা করবে। শীঘ্রই কিছু রাস্তা সংস্কার করা হবে।’’ প্রশাসনের এক সূত্র মনে করিয়ে দিচ্ছে, পুজোর আগেই বেহাল রাস্তা মেরামতের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই রিপোর্ট তলব সে জন্যই। জানা গিয়েছে, জেলার যে ৬১টি রাস্তার দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজন, তারমধ্যে ৫টি রাস্তা গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের (আরআইডিএফ) মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল। ১টি রাস্তা মার্কেট লিঙ্কের অধীনে রয়েছে। ২৪টি রাস্তা জেলা পরিষদ তৈরি করেছিল। বাকি ৩১টি রাস্তা গ্রামীণ সড়ক যোজনায় তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে ওই ৬১টি রাস্তার বিবরণ-সহ রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, এই ৬১টি রাস্তার মধ্যে ৪টি রাস্তা আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলির মধ্যে রয়েছে পিংলার বড়াই থেকে তুলসীচক রাস্তা (৩.৭৫ কিলোমিটার), সবংয়ের কোটচক থেকে ডিহিদক্ষিণ রাস্তা (৬.২১ কিলোমিটার), সবংয়ের রুইনান থেকে বলপাই রাস্তা (৩.৮৫ কিলোমিটার), চন্দ্রকোনা- ২ ব্লকের আটঘোরা থেকে পিংলাশ রাস্তা (১২.৫২ কিলোমিটার)। বাকি ৫৭টি রাস্তার মধ্য কোনও রাস্তার ১- ২ কিলোমিটার বেহাল হয়ে পড়েছে, কোনও রাস্তার ৫- ৬ কিলোমিটার বেহাল হয়ে পড়েছে, আবার কোনও রাস্তার ১০- ১২ কিলোমিটার খানাখন্দে ভর্তি হয়ে গিয়েছে। জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, জেলায় বেহাল গ্রামীণ রাস্তার সংখ্যা আরও বেশি। কমবেশি ৮০০টি গ্রামীণ রাস্তা সংস্কারের প্রয়োজন বলে ওই সূত্রে খবর। এগুলি পরে পরে সংস্কার হবে।
বেহাল রাস্তা নিয়ে ক্ষোভও জমছে স্থানীয়দের মধ্যে। কেশপুরের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘গ্রামের প্রধান রাস্তার অবস্থা শোচনীয়। খানাখন্দে ভরা। এই ভাঙা রাস্তায় প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামের ভেতরের রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ। বৃষ্টি হলে রাস্তায় এমনই কাদা হয় যে, রাস্তার ধারে বাড়ি হওয়ায় গাড়ি গেলেই বাড়িতে কাদা ছিটকে আসে!’’ জেলা পরিষদের পূর্ত স্থায়ী সমিতির এক সদস্যের কথায়, ‘‘জেলা পরিষদের সীমিত তহবিল থেকে বোল্ডার ও মোরাম ফেলে কিছু ছোট রাস্তা সারানো যায় কি না দেখা হচ্ছে।’’ বছর ঘুরলে বিধানসভা নির্বাচন। তাই তড়িঘড়ি কিছু রাস্তার হাল ফেরানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে বলেই মনে করছে বিভিন্ন মহল।