তাজপুরে বন্দরের সাইট অফিস। নিজস্ব চিত্র
বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তার আগে সোমবার মেদিনীপুরে জনসভা করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেও তাঁর মুখে তাজপুরে গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির কথা উঠে এল। প্রতিশ্রুতি দিলেন, ‘‘তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দরে ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। সেখানে মৎস্যজীবীরাও উপকৃত হবেন।’’
কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতে দীর্ঘদিন ধরে আটকে রয়েছে তাজপুরে গভীর সমুদ্রবন্দরের ভবিষ্যৎ। গত বছর ডিসেম্বর মাসে দিঘায় ‘বেঙ্গল বিজনেস সামিট’-এ মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘রাজ্য এককভাবে তাজপুরে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করবে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর সেই ঘোষণার পর তাজপুরে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ তড়িঘড়ি শুরু হয়েছিল। গত বছর ১১ ডিসেম্বর শঙ্করপুরের কাছে বন্দরের কাজের জন্য একটি সাইট অফিস খোলা হয়। সেখানে মাঝেমধ্যে দু-একজন রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিক এবং দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের আধিকারিকেরা যাওয়া-আসা করেন বলে জানিয়েছেন সেখানকার এক নিরাপত্তা রক্ষী। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, তারা শুধুমাত্র গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির জন্য একটি সাইট অফিস নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছিল। বন্দর তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ কিংবা বন্দরের পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ কলকাতা বন্দর কতৃপক্ষ করবে। পর্ষদের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মহিম মেইকাপ বলেন, ‘‘পর্ষদের জমিতে বন্দরের কাজের তদারকি করার জন্য একটি সাইট অফিস তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। বাকি সমস্ত কাজ রাজ্য সরকার কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় রেখে করবে বলে শুনেছি।’’
তাজপুরে সমুদ্র বন্দর নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছেন মৎস্যজীবীরাও। পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরামের নেতা দেবাশিস শ্যামল বলেন, ‘‘যে কোনওরকম উন্নয়নের পক্ষে আমরা। তবে তাজপুরে কোথায় বন্দর হবে তা এখন পর্যন্ত প্রশাসনিকভাবে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। অবশ্যই ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের জীবিকা যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে সেদিকটি রাজ্য সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।’’
এদিন মেদিনীপুরে তাজপুর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় খুশি রামগরের বিধায়ক অখিল গিরি। তিনি বলেন, ‘‘দ্রুত টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাজপুরে বন্দর তৈরির কাজ শুরু হবে। বন্দর তৈরি হলে পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের অর্থনীতিটাই বদলে যাবে। রাজ্য সরকার এককভাবেই বন্দর তৈরির কাজ শুরু করবে।’’
তাজপুরের বন্দর তৈরি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা নির্বাচনী চমক ছাড়া আর কিছুই নয় বলে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শাসক দলের দুর্নীতি সকলে ধরে ফেলেছে। তাই তাজপুরের বন্দর তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিধানসভা ভোটের বৈতরণী পার হতে চাইছে তৃণমূল। মানুষ মুখ্যমন্ত্রী এই ভাঁওতাবাজি বিশ্বাস করে না।’’