প্রতীকী ছবি।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ার খুনের কিনারা করল মহিষাদল পুলিশ। ওই ইঞ্জিনিয়ারকে খুনের অভিযোগে এক মহিলা-সহ দু’জনকে গ্রেফতারও করেছে তারা।
গত ১৩ জানুয়ারি গেঁওখালিতে এক অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। পরে জানা যায়, ওই ব্যক্তির নাম মৃগাঙ্ক মণ্ডল। পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মৃগাঙ্ক তমলুকের কাঁকটিয়ার বাসিন্দা। ১১ জানুয়ারি তাঁর নিখোঁজের পরিবার দায়ের করেছিল মৃগাঙ্কের পরিজন। পরে তাঁর দেহ উদ্ধার পরে তাঁরা ফের খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, মহিষাদল- গেঁওখালি সড়কে একটি দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে তারা একটি সন্দেহভাজন গাড়িকে চিহ্নিত করে। ওই গাড়ির নম্বর ধরে তদন্ত করতেই উঠে আসে একের পর এক তথ্য। তাতে দেখা যায়, ঘটনার পিছনে রয়েছে ত্রিকোণ প্রেমের ছক। পরে পুলিশের জালে ধরা পড়ে মল্লিকা দাস এবং ব্রজগোপাল সেনি নামে দু’জন।
পুলিশ জানাচ্ছে, মল্লিকার বাড়ি তমলুক থানার কাকগেছিয়ায়। তবে থাকতেন মেচেদায়। মল্লিকার স্বামী মারা গিয়েছেন এবং বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে মৃগাঙ্কর। দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এ দিকে, ব্রজগোপালের সঙ্গেও মল্লিকার সম্পর্ক ছিল বলে পুলিশ জানাচ্ছে। এক্ষেত্রে উঠে আসছে অন্য ব্যাখ্যাও। অনুমান, সম্পত্তির লোভে মৃগাঙ্কের সঙ্গে মল্লিকা সম্পর্কে জড়িয়েছিল এবং তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। তাতে বেঁকে বসতেই সে মৃগাঙ্ককে খুনের ছক কষে। তাতে সঙ্গ দেয় ব্রজগোপাল।
১১ জানুয়ারি একটি বাড়ির প্ল্যান তৈরি করতে হবে বলে ব্রজগোপাল মৃগাঙ্ককে হলদিয়ার ভবানীপুরে নিয়ে যায়। সেখানে একটি ধাবাতে মদ্যপান করেন দু’জনে। অভিযোগ, ব্রজগোপাল মদের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল। পরে বেহুঁশ মৃগাঙ্ক সে গাড়ির ডিকিতে বেঁধে ফেলে রাখে। ধাবা থেকে বেরিয়ে বি সি রায় হাসপাতালের কাছে একটি ভাড়া বাড়িতে মল্লিকার সঙ্গে ব্রজগোপালের দেখা হয়। ১২ জানুয়ারি রাতে ব্রজলালচকের একটি দোকান থেকে ডিজেল কিনে গেঁওখালিতে হুগলি নদীর তীরে মৃগাঙ্ককে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। যাতে তাঁর পরিচয় না জানা যায়।
পুলিশের অনুমান, গেঁওখালিতে রাত ৮টা নাগাদ ওই কাণ্ড ঘটায় ব্রজগোপাল ও মল্লিকা। তার পরে চৈতন্যপুরে এসে খাওয়া-দাওয়া করে। সেখান থেকে মল্লিকা ফিরে আসে মেচেদায়। ব্রজগোপাল ফিরে যায় হলদিয়া টাউনশিপের ভাড়া বাড়িতে। মল্লিকা ওই কাণ্ডের পরে পাঁশকুড়ায় গিয়ে একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেছিল। তাকে পাঁশকুড়া থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। আর শনিবার টাউনশিপ থেকে জীবনানন্দ দাস নগর গ্রেফতার করা হয়েছে ব্রজগোপালকে।
হলদিয়ার এসডিপিও তন্ময় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই দেহ উদ্ধারের ঘটনায় দু-জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর পিছনে কী কারণ ছিল, তা নিয়েও তদন্ত চলছে।’’