গুরুমা জনার্দন স্মৃতি বিদ্যাপীঠ।
স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে একাধিক বিষয়ের শিক্ষক পদের অনুমোদনও নেই। ফলে, স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের অনুমোদন এ বছর আর নতুন করে পুনর্নবীকরণ করেনি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। বেলিয়াবেড়া ব্লকের একটি প্রত্যন্ত এলাকার স্কুল কর্তৃপক্ষ তাই এবার একাদশ শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি নিতে পারছেন না। ফলে সমস্যায় পড়েছে ওই স্কুল থেকে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ পড়ুয়ারা। স্কুলের প্রাক্তনীরা একজোট হয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বেলিয়াবেড়া ব্লকের নোটা গ্রাম পঞ্চায়েতের গুরুমা জনার্দন স্মৃতি বিদ্যাপীঠ চালু হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। আগে স্কুলটি ছিল জুনিয়র হাইস্কুল। ১৯৮৬ সালে স্কুলটি মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়। ২০১১ সালে স্কুলে কলা বিভাগে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি চালু হয়। ২০১৩ সালে স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কলা বিভাগের পরিবর্তে বিজ্ঞান শাখার অনুমোদন মেলে। কিন্তু আজ পর্যন্ত বিজ্ঞান শাখার পরীক্ষাগারের জন্য কোনও আর্থিক অনুদান পাননি স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বহুদিন ধরেই স্কুলে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষক নেই। ফলে স্কুলে বিজ্ঞান শাখা খোলা যায়নি। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অনুমতি নিয়ে কলা বিভাগেই পঠনপাঠন চলছিল। সাধারণত, যে বিষয় ভিত্তিক স্থায়ী শিক্ষক না থাকলে এবং অস্থায়ী বা আংশিক সময়ের শিক্ষকদের দিয়ে কাজ চালানো হলে সেই সব স্কুলকে অস্থায়ী বা আংশিক শিক্ষকের তালিকা খতিয়ে দেখে দু’বছর অন্তর উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পুননর্বীকরণ করে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। ২০২১ সাল পর্যন্ত গুরুমার এই স্কুলের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির কলাবিভাগের অনুমোদন ছিল। আংশিক সময়ের শিক্ষকদের দিয়েই চলছিল কলাবিভাগ। সম্প্রতি কলা বিভাগের অনুমোদনপ্রাপ্ত শূন্যপদগুলির তালিকা চেয়ে পাঠায় উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। কিন্তু স্কুলে কলা বিভাগের ইতিহাস, এডুকেশন ও সংস্কৃত বিষয়ের শিক্ষক পদের অনুমোদনই নেই।
উচ্চ মাধ্যমিক কলা বিভাগের এডুকেশন, সংস্কৃত ও ইতিহাসের শিক্ষক পদের অনুমোদন না থাকায় এতদিন আংশিক সময়ের স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়া দু’জন শিক্ষিকাদের দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছিল। কিন্তু দু’জন আংশিক শিক্ষিকার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তাঁরা পড়ানো ছেড়ে দিয়েছেন। স্কুলের পক্ষে সাম্মানিক দিয়ে আংশিক সময়ের শিক্ষক নিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যান্য বছর আংশিক সময়ের শিক্ষিকাদের তালিকা সংসদে পাঠানো হত। এ বার সেটাও করা যায়নি। ফলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পুনর্নবীকরণের অনুমোদন মেলেনি।
স্কুলের টিচার ইনচার্জ সুশান্তকুমার দাস বলছেন, ‘‘অনুমোদনের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের উপ সচিবের (শিক্ষা) কাছে আবেদন করা হয়েছে। তবে এখনও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পুননর্বীকরণের অনুমতিপত্র না আসায় আমরা একাদশ শ্রেণির কলাবিভাগে কোনও ছাত্রছাত্রীকেই ভর্তি নিতে পারিনি।’’ স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সহ শিক্ষামূলক এই স্কুলের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা প্রায় সাতশো। শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন দশজন। আরও দশজন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।
এদিকে চলতি বর্ষে স্কুলের ১২২ জন পড়ুয়া মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু কোথায় তাঁরা একাদশে ভর্তি হবে সেটা নিয়েই শুরু হয়েছে জটিলতা। স্কুল থেকে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ সুজলা মণ্ডল, রাজলক্ষ্মী তরাই, সঙ্গীতা বেরার কথায়, ‘‘নিজের স্কুলে একাদশে ভর্তি হওয়ার সুযোগ না মিললে আমাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে। দূরের স্কুলে অভিভাবকরা পাঠাতে চাইছেন না।’’ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও আশঙ্কা, নিজের স্কুলে একাদশ-দ্বাদশে পড়ার সুযোগ না পেলে অনেক ছাত্রীরই পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে। পরিবারের চাপে তাদের হয়ত বসতে হবে বিয়ের পিঁড়িতে। চলতি বর্ষে স্কুলের ৬৭ জন উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকের কলা বিভাগের ছাত্রী বৃষ্টি বাসুরি স্কুলের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর (৪৬৯) পেয়েছে। টিচার-ইনচার্জও মানছেন, এলাকার গুরুমা, ভামাল, একুড়, গোবিন্দপুর, ঘুঁটিয়া, আড়াডাঙরি, ডাংরা, নিশ্চিন্তার মত দশ-বারোটি গ্রামের ছেলেমেয়েরা গুরুমা জনার্দন স্মৃতি বিদ্যাপীঠে পড়ে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তর বন্ধ হয়ে গেলে অনেকেই স্কুল ছুট হবে।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের জেলা পরামর্শদাতা কমিটির সদস্য তপনকুমার পাত্র বলছেন, ‘‘এতদিন সংসদের নিয়ম অনুযায়ী আংশিক সময়ের যোগ্য শিক্ষকদের দিয়েই অনেক স্কুলেই একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পঠনপাঠন চালানো হচ্ছিল। সংসদের নয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী, এখন থেকে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদেরই আংশিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা যাবে। এর ফলে স্কুলগুলিতে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি সংসদ কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে।’’
স্কুলের প্রাক্তনীদের পক্ষে সুভাষচন্দ্র তরাই বলছেন, ‘‘এভাবে এলাকার পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। স্কুলে একাদশ-দ্বাদশের অনুমোদনের দাবিতে তীব্র আন্দোলন হবে।’’