Christmas Recipes

বড়দিনের ভোজে থাকুক গন্ধরাজ-নলেন গুড়ের ‘টুইস্ট’, রান্না শেখালেন ‘বছরের বেস্ট’ প্রীতম

বড়দিন মানেই কি কেবল কেক-কুকিজ় আর সাহেবি মেনু? অনেকেই আছেন যাঁরা বড়দিনে পার্ক স্ট্রিটের ভিড় আর রেস্তরাঁর বাইরে লম্বা লাইন এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন। বাড়িতেই পরিবার, বন্ধুবান্ধব নিয়ে উদ্‌যাপনের পরিকল্পনা থাকলে কী কী রাখবেন মেনুতে? রান্না শেখাতে কলম ধরলেন আনন্দবাজার অনলাইনের ২০২৪ সালের ‘বছরের বেস্ট’ রন্ধনশিল্পী প্রীতম ভদ্র।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:৩০
Share:

রন্ধনশিল্পী প্রীতম ভদ্র। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

শহর জুড়ে যেন আলোর রোশনাই। দীপাবলির পর উৎসবের রং খানিকটা ফিকে হয়ে গিয়েছিল বটে, তবে বড়দিন আর নতুন বছর উপলক্ষে আবার উৎসবের স্রোতে ভাসতে শুরু করেছে শহরবাসী। বড়দিন উদ্‌যাপন পাশ্চাত্য সংস্কৃতির রীতিনীতি হলেও বাঙালি তার তেরো পার্বণের মধ্যে যিশুর জন্মদিনটিকেও এখন একান্ত আপন করে নিয়েছে, সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। উৎসব উদ্‌যাপনে কখনওই কোনও কমতি রাখে না বাঙালি। উৎসবের সঙ্গে হাতে হাত ধরে চলে খাওয়াদাওয়ার পর্বও। তবে বড়দিন মানেই কি কেবল কেক-কুকিজ় আর সাহেবি মেনু? অনেকেই আছেন যাঁরা বড়দিনে পার্ক স্ট্রিটের ভিড় আর রেস্তরাঁর বাইরে লম্বা লাইন এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন। বাড়িতেই পরিবার, বন্ধুবান্ধব নিয়ে উদ্‌যাপনের পরিকল্পনা থাকলে বানিয়ে ফেলতে পারেন কিছু সাবেক ও কিছু ফিউশন পদ। রইল তেমনই ৩টি ফিউশন রেসিপি। রান্না শেখালেন আনন্দবাজার অনলাইনের ২০২৪ সালের ‘বছরের বেস্ট’ রন্ধনশিল্পী প্রীতম ভদ্র।

Advertisement

চা-কফির সঙ্গে আড্ডা জমাতে বানিয়ে ফেলুন বাকরখানি। ছবি: সংগৃহীত।

বাকরখানি

কাশ্মীরে এই পদ তৈরি হয় এক রকম তুলতুলে রুটির মতো, বাংলাদেশে আবার বাকরখানি তৈরি হয় খানিকটা বিস্কুটের ধাঁচের। চা, কফি হোক বা মাংসের কোনও পদ, সঙ্গে বাকরখানি থাকলে জমে যায় খাওয়াদাওয়া। সুবে বাংলার নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁর দত্তক পুত্র আগা বাকের প্রেমে পড়েন নর্তকী খনি বেগমের। তবে নানা ষড়যন্ত্রের কারণে শেষমেশ সেই প্রেম পূর্ণতা পায়নি। মৃত্যু হয় খনি বেগমের। আগা বাকের ও খনি বেগমের নাম থেকেই এই পদের নামকরণ বলে অনেকের মত।

Advertisement

উপকরণ:

৩০০ গ্রাম ময়দা

১৫০-১৬০ গ্রাম জল

৪ গ্রাম নুন

৪ গ্রাম গুঁড়ো চিনি

১৫ গ্রাম সাদা তেল

৬ গ্রাম+২ চা চামচ ঘি

২ চা চামচ কালো জিরে

২ চা চামচ পোস্ত

প্রণালী:

একটি বড় পাত্রে প্রথমে ময়দার সঙ্গে নুন, চিনি আর তেল ভাল করে মিশিয়ে নিন। তার পর অল্প ‌অল্প করে জল মিশিয়ে ভাল করে ময়দা মেখে নিন। ময়দা যত ভাল করে মাখবেন ততই তাতে গ্লুটেন তৈরি হবে, স্বাদ বাড়বে বাকরখানির। ময়দা মাখা হয়ে গেলে ভিজে কাপড়ে মুড়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন।

৩০ মিনিট পর ময়দার মণ্ডটি আরও এক বার মেখে নিয়ে দু’টি টুকরোয় ভাগ করে নিন। এ বার একটি মণ্ড নিয়ে খুব পাতলা করে বেলে নিন। এ বার সেই পাতলা রুটির উপর খুব ভাল করে ঘি ব্রাশ করতে হবে। শেষে তার উপর খানিকটা শুকনো ময়দা ছড়িয়ে বইয়ের মতো মুড়ে নিন। এ বার তার উপর আবার ভিজে কাপড় বিছিয়ে ঘণ্টাখানেক রেখে দিন। অন্য মণ্ডটিও একই রকম ভাবে বেলে বইয়ের মতো মুড়িয়ে রাখুন।

১ ঘণ্টা পর সেগুলিকে আরও খানিকটা বেলে নিন, রুটির আকার যেন চৌকো থাকে, সে দিকে নজর রাখুন। এ বার ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে অভেনটি প্রিহিট করে নিন। সে সময়ে বেকিং ট্রেটিও অভেনে গরম হতে রেখে দিন। এ বার বইয়ের মতো মুড়িয়ে রাখা এক একটি চৌকো রুটি তিনটি সমান ভাগে লম্বালম্বি কেটে নিন। এ বার এক একটি মোটা রিবনের মতো রুটির লম্বা টুকরোগুলি সুইস রোলের মতো মুড়িয়ে নিন। এ বার সুইস রোলটি হাত দিয়ে চ্যাপ্টা করে নিন, ৪ সেন্টিমিটার মতো উঁচু হবে এক একটি মণ্ড। এ বার মণ্ডগুলির উপর আবার ঘি মাখিয়ে কালোজিরে আর পোস্ত ছড়িয়ে দিন।

এ বার অভেন থেকে ট্রেটি বার করে ঘি মাখিয়ে এক একটি মণ্ড সাজিয়ে রাখুন। ১০-১২ মিনিট বেক করে নিন বাকরখানিগুলি। অভেন থেকে বার করার পর আবারও বাকরখানির উপর ভাল করে ঘি মাখিয়ে রাখুন। চা কিংবা কফির সঙ্গে বেশ লাগবে এই বাকরখানি।

সবজির সঙ্গে নলেন গুড় আর গন্ধরাজের মিশেল। ছবি: সংগৃহীত

নলেন গুড়-গন্ধরাজ দিয়ে সিম, মটরশুঁটির সব্জি

শীতকাল মানেই তো বাজারে সব্জির বাহার। আর রংবেরঙের সব্জি মানেই তো হাজারটা রেসিপি ঘুরপাক খায় মনে। একঘেয়ে পাঁচমিশেলি না বানিয়ে শীতের সব্জি মটরশুঁটি আর সিম দিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন একটি ফিউশন পদ। সঙ্গে থাকবে নলেন গুড় আর গন্ধরাজ লেবুর ‘টুইস্ট’।

উপকরণ: ২০০ গ্রাম কচি সিম

১৫০ গ্রাম মটরশুঁটির দানা

১ চা চামচ কালোজিরে

২ টেবিল চামচ সর্ষের তেল

২০০ মিলিলিটার নারকেলের দুধ

২০ মিলিলিটার নলেন গুড়

১০ গ্রাম নারকেল গুঁড়ো কোরা

স্বাদমতো নুন

২০ গ্রাম গন্ধরাজ লেবুর পাতা

১০০ মিলিলিটার সাদা তেল

প্রণালী:

গন্ধরাজ লেবুর পাতাগুলি ভাল করে ধুয়ে আর শুকিয়ে নিন। এ বার একটি মিক্সারে সাদা তেল আর গন্ধরাজ লেবুর পাতাগুলি দিয়ে মিনিট দুয়েক ঘুরিয়ে নিন। এ বার মসলিনের কাপড়ে তেলটি ছেঁকে নিয়ে একটি কাচের পাত্রে ঢেলে রাখুন।

এ বার সিমগুলি ত্রিকোণাকারে কেটে নিন। কড়াইতে সর্ষের তেল গরম করে কালোজিরে ফোড়ন দিন। তার পর কেটে রাখা সিমগুলি দিয়ে নাড়াচাড়া করুন। স্বাদমতো নুন দিয়ে সিমগুলি নরম হয়ে যাওয়া পর্যন্ত ভেজে নিন।

এ বার একটি বড় ছাঁকনি নিয়ে তার মধ্যে মটরশুঁটি ঢেলে সামান্য পুড়িয়ে নিন। শেষে সামান্য নুন দিয়ে নাড়াচাড়া করে একটি পাত্রে ঢেলে রাখুন। এ বার পাত্রে রাখা মটরশুঁটির উপর নলেন গুড় আর নারকেল কোরা ছড়িয়ে রেখে দিন।

আর একটি কড়াইয়ে নারকেলের দুধ খানিক ক্ষণ গরম করে নিন। দুধ খুব বেশি গাঢ় মনে হলে সামান্য জল মেশাতে পারেন। তার পর দুধে সামান্য নুন দিয়ে দিন। গ্যাস বন্ধ করে দুধের মিশ্রণটিও আলাদা করে রাখুন।

এ বার একটি পাত্রে নীচে সিমের মিশ্রণ রেখে উপর থেকে গুড়-মটরশুঁটির মিশ্রণ ছড়িয়ে দিন। তার পর সব্জির উপর নারকেলের দুধের মিশ্রণটি ঢেলে দিন। সবশেষে বানিয়ে রাখা গন্ধরাজ তেল ছড়িয়ে পরিবেশন করুন শীতের এই ফিউশন পদ। গরম গরম রুটির সঙ্গে এই পদের যুগলবন্দিটা মন্দ হবে না।

ফুলকপির সন্দেশ থাকুক শেষপাতে। ছবি: শাটারস্টক

ফুলকপির বেক্‌ড সন্দেশ

ফুলকপির সন্দেশ রেসিপিটি ঠাকুরবাড়ির বেশ জনপ্রিয় মিষ্টির পদ। তবে আমি এখানে একটা ‘টুইস্ট’ দিয়েছি। সন্দেশটিকে বেক করে এর স্বাদবদলের চেষ্টা করেছি। বড়দিনে কেক, পেস্ট্রির বদলে ভিন্ন স্বাদের কোনও মিষ্টির খোঁজ করলে বানিয়ে ফেলতে পারেন এই পদটি। শেষপাতে ফুলকপির বেক্ড সন্দেশ দিয়ে জমে যাবে বড়দিনের ভোজ।

উপকরণ:

৮০০ মিলিলিটার দুধ

২৫০ গ্রাম গ্রেট করা ফুলকপি

৫০ গ্রাম চিনি

৪০ গ্রাম ঘি

১ চিমটে নুন

প্রণালী:

ফ্রায়িং প্যানে ঘি গরম করে গ্রেট করা ফুলকপি দিয়ে মিনিটি দশেক নাড়াচাড়া করুন। গ্যাসের আঁচ একেবারে কম রাখবেন আর খেয়াল করবেন ফুলকপির রং যেন বাদামি না হয়ে যায়। আর একটি পাত্রে দুধ ঘন করে নিন। ফুলকপি রং সামান্য বদলে গেলে ঘন দুধ ঢেলে ভাল করে ফুটিয়ে নিন। এ বার পরিমাণ মতো চিনি আর এক চিমটে নুন দিয়ে নাড়াচাড়া করুন। চিনি দেওয়া মাত্রই মিশ্রণে একটু জল দেখা যাবে। ধৈর্য করে মিশ্রণটি ভাল করে শুকিয়ে নিন। তার পর গ্যাস বন্ধ করে দিন।

তত ক্ষণে ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়ায়ে অভেনটি প্রিহিট করুন। এ বার অভেনে ঢোকানো যায় এমন একটি স্টেনলেস স্টিলের ট্রে-তে ঘি ব্রাশ করে রাখুন।

ফুলকপির মিশ্রণটি খানিকটা ঠান্ডা করে বেকিং ট্রে-তে ঢেলে ৮ মিনিট বেক করুন। সন্দেশের উপরিভাগ হালকা লালচে হয়ে যাবে। অভেন থেকে বার করে ট্রে-টি ঠান্ডা করে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখুন ঘণ্টাখানেকের জন্য। এ বার ফ্রিজ থেকে বার করে চৌকো টুকরো করে কেটে নিয়ে পরিবেশন করুন ফুলকপির বেক্ড সন্দেশ। উপর থেকে রাবড়ি ছড়িয়ে দিলে স্বাদ বেড়ে যাবে আরও কয়েক গুণ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement