শ্রীময়ী: নন্দকুমারের উত্তর সাউতানচক গ্রামের লক্ষ্মী প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র
দুর্গাপুজোর ক’দিন পরেই বাঙালির ঘরে ঘরে হয় লক্ষ্মী পুজো। দুর্গাপুজোর মতো আবশ্যক না হলেও এই পুজোতে পদ্ম ব্যবহারের চল রয়েছে। কিন্তু এবার দুর্গা পুজোয় রাজ্যের সমস্ত পদ্ম শেষ হয়ে যাওয়ায় লক্ষ্মী পুজোয় চাহিদা মেটাতে ভিন্ রাজ্য থেকে আমদানি করা হয়েছে পদ্ম। আর তা বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
এ রাজ্যে বর্ষার আগে শুরু করে শীতের শুরু পর্যন্ত ব্যাপক হারে পদ্ম চাষ হয়। নাম মাত্র খরচে এই ফুলের চাষ হয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়া, কোলাঘাট ব্লকের একটা বিরাট অংশে এবং নন্দকুমার ব্লকের কিছুটা অংশে। মূলত ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক, ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক, দক্ষিণ-পূর্ব রেলেলাইনের ধারে হাউর থেকে কোলাঘাট পর্যন্ত এলাকার পাশে থাকা নয়ানজুলিতে চাষিরা ব্যাপক হারে পদ্ম চাষ করেন।
পদ্ম চাষিরা জানাচ্ছেন, এ বছর লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে অন্য ফুলের পাশাপাশি পদ্মের বিক্রিও বন্ধ হয়ে যায়। চাষিরা পরিচর্যা না করায় কমে যায় পদ্মেরও উৎপাদন। তার উপরে এ বার দুর্গা পুজো কিছুটা দেরিতে হওয়ায় পদ্মের মরসুমও প্রায় শেষের পথে। এই অবস্থায় পদ্মের যোগান বহাল রাখার অন্যতম ভরসা ছিল হিমঘর। কিন্তু জেলায় পদ্ম সংরক্ষণের মতো হিমঘর নেই। কিছু পদ্ম চাষি ও ব্যবসায়ী ‘মাল্টিপারপাস’ হিমঘরে পদ্ম মজুত করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু পর্যাপ্ত ছিল না। দুর্গা পুজোর শুরুতেই সে সমস্ত পদ্ম বিক্রি হয়ে যায়।
এই পরিস্থিতিতে লক্ষ্মী পুজোয় দেখা গিয়েছে পদ্মের আকাল। ফলে এই পুজোর জন্য এ বার ভরসা করতে হচ্ছে ভিন্ রাজ্যের উপরে। লক্ষ্মী পুজোয় পদ্মের চাহিদা মেটাতে বেঙ্গালুরু থেকে পদ্ম আমদানি করছেন পদ্ম ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, গত তিনদিনে আকাশপথে বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় আনা হয়েছে এক লক্ষ পিস পদ্ম। কোলাঘাটের নহলা গ্রামের পদ্ম ব্যবসায়ী মোহন মাইতি বলেন, ‘‘অন্য বছর লক্ষ্মী পুজোর সময় পূর্ব মেদিনীপুরেই পদ্মফুল পাওয়া যেত। কিন্তু এবার না তা মেলায় বেঙ্গালুরু থেকে পদ্ম রাজ্যে আমদানি করা হয়েছে। ওই পদ্ম কোলাঘাট ফুলবাজারে বিক্রি করেছি। চাহিদা ভালই রয়েছে।’’
জেলার পদ্মচাষিরা জানাচ্ছেন, এ রাজ্যে সাদা ও ফিকে গোলাপি— এই দু’টি রঙের পদ্মের চাষ হয়। এর মধ্যে বেশি পাপড়ি এবং বড় আকৃতির পদ্ম, যা ‘ডবল পদ্ম’ নামে চাষিদের কাছে পরিচিত, তা পূর্ব মেদিনীপুরে প্রচুর পরিমাণে প্রতি বছর চাষ হত। বেঙ্গালুরু থেকে আমদানীকৃত পদ্ম এ রাজ্যের মতোই। কলকাতার মল্লিকঘাট ফুলবাজার-সহ জেলার ফুলবাজারগুলিতে সেগুলি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা প্রতি পিস দামে। যা যথেষ্ট বেশি।
তবে দাম বেশি হলেও লক্ষ্মী পুজোয় পদ্মের ভালই চাহিদা রয়েছে। সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়ক বলেন, ‘‘এ রাজ্যে পদ্মে মরসুম শেষ। তার উপরে এবার পদ্মের উৎপাদনও কিছুটা কম হয়েছে। তাই এবার বেঙ্গালুরু থেকে ১ লক্ষ পদ্ম আমদানি করা হয়েছে। সেগুলির অধিকাংশই আবার বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়ে গিয়েছে।’’